জীবনে সফল হওয়ার কিছু ব্যর্থতার গল্প
“ব্যর্থতাকে পেছনে রেখে নিজের শক্তি-সামর্থের উপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে সামনে এগিয়ে যান, সাফল্য আপনার পায়ের কাছে এসে নিশ্চিত ধরা দিবে”
আমরা কম-বেশি সবাই জীবনে সফল হতে চাই। সবাই চাই জীবনে ভালো কিছু করতে, বড় হতে, সবার কাছে সম্মান পেতে। প্রতিটি সফল মানুষের ব্যর্থতার গল্প আছে। একবারে কেউ সফল হয়নি। সফল উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, লেখক, বিজ্ঞানী- যার কথাই বলুন না কেন, সবাইকে ব্যর্থতার কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে সফল হতে হয়েছে। যারা জীবনে সফল হয়েছেন, তাদের অনেক সাধনা করতে হয়েছে। অনেকে সফল হওয়ার পরও আবার ব্যর্থ হয়েছেন পুনরায় আবার চেষ্টা চালিয়ে আবার সাফল্য পেয়েছেন। অনেকে আবার ব্যর্থতার হাজারটা পথ পাড়ি দিয়ে এক হাজার এক তম বারের চেষ্টায় সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু তারা থেমে থাকেননি। যতবড় ব্যর্থতার সামনে এসে পড়েন না কেন কখনওই তারা কাজ করা বন্ধ করেননি। চলুন তাহলে জেনে নিই পৃথিবীর সেরা সাফল্য পাওয়া কিছু ব্যক্তির ব্যর্থতার গল্প। যেখানে আপনি যে কোন ব্যর্থতা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরাণা পাবেন।
1. জ্যাক মা-
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা-এর সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। সবাই জানেন যে চীনের এই ধনকুবের ব্যবসায়ী একদম সাধারণ অবস্থা থেকে উঠে এসে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আর বিখ্যাত মানুষদের একজন হয়েছেন। গড়ে তুলেছেন আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় কোম্পানীগুলোর একটি। বিশ্বের শীর্ষ ১০ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলীবাবা একটি। আর এই অসাধারণ সফল মানুষটির ব্যর্থতার গল্প যেন একটি ট্রাজেডি সিরিয়াল।
তিনি জীবনে বহুবার ব্যর্থ হয়েছেন তারপরও হতাশ হননি, হাল ছাড়েননি। ব্যর্থ হয়েছেন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। জীবনের প্রথম থেকেই ব্যর্থতার গল্প শুরু। কলেজে ভর্তি হবার সময়ে ৩ বার ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে ৪র্থ বার সুযোগ পান। এরপর চাকরি করতে গিয়ে বহুবার বার ব্যর্থ হন! পুলিশে ১০ জন পরীক্ষা দিয়ে বাকী ৯ জন চাকরি পেল, বাদ পড়লেন শুধু জ্যাক মা। বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট কেএফসিতে চাকরীর জন্য পরীক্ষা দিলেন জ্যাক সহ ২৪ জন। ২৪ জনের মধ্যে জ্যাক ছাড়া বাকী ২৩ জনের চাকরি হলো। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বার চেষ্টা করেও তিনি সুযোগ পাননি। এতো ব্যর্থতার পরও তিনি কিন্তু থেমে থাকেননি। বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও প্রতিবারই নতুন উদ্যমে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে অনেক ব্যর্থতার পর চেষ্টা করতে করতে অবশেষে আলিবাবা প্রতিষ্ঠার পর তার কাছে সাফল্য এসে ধরা দেয়।
2. চার্লি চ্যাপলিন-
কমেডির রাজা চার্লি চ্যাপলিন-এর নাম কে না জানে। ১৮৮৯ সালে জন্ম নেয়া বিশ্ব বিখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক চার্লি চ্যাপলিনকে সবাই চেনে। সিনেমার শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত সব সিনেমা পাগল তাঁকে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। পৃথিবীর সফলতম অভিনেতা ও পরিচালকদের একজন তিনি। কমেডির রাজা বলা হয় তাঁকে। এসব কথাও সবাই জানে। কিন্তু তাঁর পেছনের গল্প সবাই জানে না। চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু কথা যা সবাই জানে না।
চ্যাপলিনের বাবা ছিলেন একজন মাতাল। কোনও কাজ করতেন না, দিন-রাত মদ খেয়ে পড়ে থাকতেন। চ্যাপলিনের ২ বছর বয়সে তাঁর বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। মা নামে মাত্র একটি কাজ করতেন তাতে সংসারের খরচ কোন ভাবেই মিটতো না। অভাবের তাড়নায় মাত্র ৭ বছর বয়সে চার্লি “ওয়ার্কহাউজ” এ যেতে বাধ্য হন। “ওয়ার্কহাউজ” হলো তৎকালীন সময়ে বৃটেনে গরিবদের জন্য একটি ব্যবস্থা চালু ছিল, যেখানে পরিশ্রমের বিনিময়ে খাবার ও শোয়ার জায়গা দেয়া হত। কিছুদিন পর আবার চার্লি সেখান থেকে ফিরে আসেন। আবার চার্লি’র ৯ বছর বয়সে তাঁর মা পাগল হয়ে যান এবং তাকে মানসিক হাসপাতালে যেতে হয়। মায়ের মানসিক হাসপাতালে যাওয়ার কারণে চ্যাপলিনকে আবারও “ওয়ার্কহাউজে” ফিরে যেতে হয়।
কিছুদিন পর চার্লির বাবা লিভার নষ্ট হয়ে মারা যান। এরপর তাঁর মায়ের পাগলামি এতই বেড়ে যায় যে তাকে সব সময়ের জন্য পাগলা গারদে বন্দী করে রাখার প্রয়োজন পড়ে। চ্যাপলিন ও তাঁর ভাই সিডনি একদম পথে বসে পড়েন। দিনের পর দিন না খেয়ে রাস্তায় ঘুরে কাটান। এভাবে চলতে চলতেই এক সময়ে তিনি মঞ্চে কাজ নেন। বিভিন্ন মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতে করতে নিজের কমেডি প্রতিভাকে শক্তিশালী করেন। পরে হলিউডে পাড়ি জমান। তার পরের গল্প তো সবাই জানে। সেখান থেকেই সর্বকালের সেরা নির্বাক অভিনেতা হয়ে ওঠেন তিঁনি।
3. আব্রাহাম লিংকন-
আমেরিকার সফল প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। ১৮০৯ সালে জন্ম নেয়া এই মানুষটি আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আমেরিকার ইতিহাসে সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরা হয় আব্রাহাম-কে। আমেরিকায় দাসদের স্বাধীনতা লাভের পেছনে তাঁর অবদানই সবচেয়ে বেশি। রাজনীতি ও খ্যাতির দিক দিয়ে তিনি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসের সফলতম মানুষদের একজন।
আব্রাহাম লিংকনের শুরুটা কিন্তু ব্যর্থতার গল্প দিয়েই। ২৩ বছর বয়সে তাঁর চাকরি চলে যায়। একই সময়ে তিনি তাঁর প্রথম নির্বাচনেও হেরে যান। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি ২৯ বছর বয়সে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচন করে তিনি আবারও ব্যর্থ হন, নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। ১৮৪৮ সালে, ৩৯ বছর বয়সী লিংকন ওয়াশিংটনের জেনারেল ল্যান্ড অফিসের কমিশনার হওয়ার জন্য নির্বাচন করেন। ফলাফল এবারও একই নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। তারপরও আবার ৪৯ বছর বয়সে সিনেটর হওয়ার জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়ে সেখানেও তিঁনি শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন।
এত ব্যর্থতার পরও তিঁনি কিন্তু থেমে থাকেননি রাজনীতি না ছেড়ে প্রতিবারই নতুন উদ্যমে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে সাফল্য এসে ধরা দেয় তাঁর ঝুলিতে। ১৮৬১ সালে, ৫২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের প্রায় পুরোটাই ছিল ব্যর্থতার গল্প। কিন্তু এরপর তিনি আমেরিকার ইতিহাস বদলে দেন। হয়ে উঠেন সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট।
4. বিল গেটস-
বর্তমান সময়ের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটস’কে কে না চেনে। যদিও এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আমাজনের জেফ বেজোস, কিন্তু এখনও অনেকে মনে করেন যে বিল গেটসই পৃথিবীর ধনীতম মানুষ। কারণ, এতদিন ধরে তিনি বিশ্বের এক নম্বর ধনী ছিলেন যে, অন্য কেউ তাঁর জায়গা দখল করেছে। এটা অনেকে জানে না। তার বানানো অপারেটিং সিস্টেম ইউন্ডোজ কম্পিউটার আমরা ব্যবহার করি। আজকের বিশ্বের কম্পিউটারের বিপ্লবের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যাদের, তাঁদের অন্যতম হলেন তিনি। সবাই তার সফলতাকে জানি কিন্তু সফলতার পিছনের গল্প আমার কতজন জানি!
আপনি কি জানেন, বিল গেটসের প্রথম প্রজেক্ট অপমানজনক ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল? মাইক্রোসফট এর কো-ফাউন্ডার এবং বাল্যবন্ধু পল এ্যালেন আর বিল গেটস মিলে “Traf-O-Data” নামে একটি মেশিন তৈরী করেছিলেন যেটি ট্রাফিক কাউন্টার গুলো থেকে ডাটা সংগ্রহ করে সরকারি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারদের তা গুছিয়ে সরবরাহ করবে। এমনিতে কাজটি হাতে করতে হতো। এই যন্ত্রটির ওপেনিং এ স্বয়ং শিয়াটলের ট্রাফিক সুপারভাইজার এসেছিলেন। কিন্তু যন্ত্রটি চালু করার পর কোনওভাবেই কাজ করেছি। এমন লজ্জা আর অপমান গেটসের জীবনে আর আসেনি। কিন্তু তাঁরা থেমে যাননি। এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই বিল আর পল মিলে পরে মাইক্রোসফটকে সফল করেন।
5. টমাস আলভা এডিসন-
টমাস আলভা এডিসন ছিলেন একজন মার্কিন উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী। আজকের পৃথিবীতে এমন কোনও শিক্ষিত মানুষ নেই যে টমাস আলভা এডিসন এর নাম জানে না। বৈদ্যুতিক বাতি, চলচ্চিত্র, অডিও রেকর্ডিং, এনক্রিপটেড টেলিগ্রাফ সিস্টেম, আধুনিক ব্যাটারী- এ ধরনের হাজারের ওপর আবিষ্কার করে তিনি পৃথিবীকে ঋণী করে গেছেন। এডিসন ইতিহাসের অতিপ্রজ বিজ্ঞানীদের অন্যতম একজন বলে বিবেচিত, যার নিজের নামে ১০৯৩টি মার্কিন পেটেন্টসহ যুক্তরাজ্যে, ফ্রান্স এবং জার্মানির পেটেন্ট রয়েছে। গণযোগাযোগ খাতে বিশষ করে টেলিযোগযোগ খাতে তার বহু উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার অবদানের জন্য তিনি সর্বস্বীকৃত। সফলতার গল্প তো শুনলেন, এবার চলুন সফলতার পেছনের গল্প শোনা যাক।
১৮৪৭ সালে আমেরিকার ওহাইওতে জন্ম নেয়া এই জিনিয়াসের ছোটবেলায় “স্কারলেট ফিভার” নামে একটি জটিল অসুখ হয়। যার ফলে তিনি কানে প্রায় শুনতেই পেতেন না। তাঁর স্কুল জীবন ছিল মাত্র ১২ সপ্তাহের। কারণ তাঁর পড়াশুনার পারফরমেন্স এতই খারাপ ছিল যে স্কুলে আর তাঁকে রাখতে চাইছিল না। স্কুল থেকে দেয়া চিঠিতে লেখা ছিল যে টমাস পড়াশুনায় খুবই অমনযোগী ও তার মেধাও ভালো নয়, এই ধরনের দুর্বল ছাত্রকে স্কুলে রাখা যাবে না। কিন্তু টমাসের মা চিঠি খুলে ছেলেকে শুনিয়ে পড়েছিলেন যে, টমাসের মেধা সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে অনেক বেশি, এত বেশি মেধাবী ছাত্রকে পড়ানোর ক্ষমতা সাধারণ স্কুলের নেই। কাজেই তাকে যেন বাসায় রেখে পড়ানো হয়।
মায়ের থেকে পাওয়া এই আত্মবিশ্বাস থেকেই টমাস পরে জটিল জটিল সব বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন এবং এই আত্মবিশ্বাসের কারণেই তিনি কোনও কিছুতেই ব্যর্থতাকে মেনে নিতেন না। বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের সময়ে ১০ হাজার বার তাঁর এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ হয়েছিল। যদিও অনেকের ধারণা তিনি ১ হাজার বার এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন। যাইহো ১ হাজার বার এক্সপেরিমেন্টও কিন্তু কম না। কিন্তু তিনি তবুও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কারণ ছোটবেলায় তাঁর মা তাঁর মনে এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে, কিছুই অসম্ভব নয়।
স্কুলের সেই চিঠিটি এডিসন অনেক বছর পরে খুঁজে পেয়েছিলেন, তাঁর মা সেটি লুকিয়ে রেখেছিলেন। ততদিনে মা মারা গেছেন। টমাস ততদিনে হয়ে উঠেছেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও ধনী উদ্যোক্তা। চিঠিটি পড়ে টমাস সব বুঝতে পারেন এবং নিজের ডায়েরীতে লেখেন, “টমাস আলভা এডিসন একজন ছিল এক মেধাহীন শিশু। একজন অসাধারণ মায়ের প্রেরণায় সে হয়ে উঠে যুগের সেরা মেধাবী।“
6. কনোনেল স্যান্ডার্স-
বর্তমান সময়ে রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে কে না পছন্দ করে। বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট কেএফসি’র কথা তো আমরা সবাই জানি। কেএফসির লোগো নিশ্চই দেখেছেন। কেএফসির খাবার সবারই পছন্দ। কিন্তু আমরা অনেকেই কেএফসির প্রতিষ্ঠাতাকে চিনি না। লোগোর ফ্রেঞ্চকাট দাড়িওয়ালা হাসিমুখের লোকটি হলো কনোনেল স্যান্ডার্স। তিনিই কেএফসি নামক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ফাস্টফুড চেইনের প্রতিষ্ঠাতা। আপনি যদি আপনার এলাকায় কেএফসির একটি শাখা খুলতে চান, তবে আপনাকে শুধু তাদের ফ্রেঞ্চাইজি ব্যবহারের জন্য ৪৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৩৮ লাখ টাকা দিতে হবে। কি ভাবছেন এতোবড় কোম্পানী এমনিতে তৈরী হয়ে গেছে। কোন সংগ্রাম নাই, পিছনের গল্প নাই। ভুল ভাবছেন।
এতবড় কোম্পানী যাঁর রেসিপি বিশ্ব বিখ্যাত, সেই রেসিপি বিক্রী করতে তাঁকে ১০০৯ বার ব্যর্থ হতে হয়েছিল। কিন্তু তিঁনি হতাশ হননি কখনও। ৫ বছর বয়সে বাবা হারানোর পর থেকে তাঁর সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। নিজের রান্নার দক্ষতার কারণে কাজ পেতে কখনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যখনই নিজে কিছু করতে গেছেন তখনই ব্যর্থ হয়েছেন। ১৯৩৯ সালে ৪৯ বছর বয়সে অনেক কষ্টে একটি মোটেল শুরু করেন। মোটেলটি ৪ মাস চলার পরই আগুন ধরে ধ্বংস হয়ে যায়। ৫০ বছর বয়সে তিনি তাঁর সিক্রেট চিকেন ফ্রাই রেসিপি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তাঁর আরও একটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। তিনি একটি চার রাস্তার মোড়ে রেস্টুরেন্ট খুলেছিলেন। ভালোই চলছিল সেটি। কিন্তু নতুন রাস্তা হওয়ার ফলে সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে রেস্টুরেন্টও বন্ধ করতে হয়।
১৯৫৫ সালে ৬৫ বছর বয়সী কনোনেলের হাতে মাত্র ১৬৫ ডলার ছিল। এরপর তিনি তাঁর চিকেন রেসিপি বিক্রী করার চেষ্টা করেন। ১০০৯টি রেস্টুরেন্ট তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ার পর একটি রেস্টুরেন্ট তাঁর রেসিপি নিয়ে কাজ করতে রাজি হয়। বাকিটা তো বুঝতেই পারছেন। পরবর্তী গল্প ইতিহাস রচনার গল্প।
শেষ কথা-
জীবনে ভালো কিছু সব সময় দেরিতেই আসে। সাফল্য ধরা দিতে সময় নেয়। তাই বলে কখনো তাড়াহুড়ো করা উচিত নয় এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চেষ্টা করা উচিত। নিজের খারাপ সময়গুলোকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করুন। কারণ এটাই হয়ে উঠবে আপনার জন্য সফলতার গল্প। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য হোঁচট খাওয়া একটা শিক্ষা। হোঁচট খেলে আপনার আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি আরও শক্তিশালী হবে। কারণ আপনি জানেন আপনি আবার নিজ শক্তিতেই উঠে দাঁড়াতে পারবেন।
নিজেকে এমনভাবে তৈরি করুন যেন সবসময় অন্যদের কাছে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী দেখায়। যখন কেউ নিজেকে ভালভাবে জানে, তখন সহজাতভাবে নিজের আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি আরও বেশি মজবুত হয়ে যায়। এটি এক জাদুকরি শক্তি যা নিজের কর্মকাণ্ড এবং নিজের শক্তি-সামর্থ্যের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তবে আন্তরিকতা ও নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। যদি তা না থাকে, তবে আমরা কখনোই আমাদের কাজে সফল হতে পারব না।
7. জে কে রাওলিং
শুধুমাত্র বই লিখে তাঁর মত ধনী কেউ হতে পারেনি। পৃথিবীর লেখকদের মধ্যে একমাত্র জে কে রাওলিং বই লিখে বিলিওনেয়ার হতে পেরেছেন। তাঁর লেখা হ্যারি পটার সিরিজের বইগুলো পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বুক সিরিজ। আর এই সিরিজ থেকে বানানো সিনেমাগুলো প্রতিটিই ব্লকবাস্টার হিট। জনপ্রিয়তা ও আর্থিক দিক থেকে নি:সন্দেহে তিনি ইতিহাসের অন্যতম সফল সাহিত্যিক। কিন্তু আপনি কি জানেন, কত সংগ্রামের পর হ্যারি পটার প্রকাশ হয়েছিল?
পড়াশুনায় তিনি খুব একটা ভালো ছিলেন না। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে টেস্ট দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এক্সিটর ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা শেষ করেন। পড়া শেষ করার পর তেমন কোনও ভালো কাজ না পেয়ে এক সময়ে পর্তুগালে চলে যান। সেখানে গিয়ে বিয়ে করেন এক বদরাগী লোককে, যে কথায় কথায় গায়ে হাত তুলত। ১৯৯৩ সালে ৩৮ বছর বয়সে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি আবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং বোনের সাথে থাকতে শুরু করেন। এই সময়টাতে তিনি হিসেব করে দেখলেন যে তিনি জীবনের সবকিছুতেই চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি একজন ডিপ্রেশনের রোগীতে পরিনত হন এবং আত্মহত্যারও চিন্তা করেন। কিন্তু মেয়ের কথা চিন্তা করে তিনি আবার আশায় বুক বাঁধেন এবং নিজের লেখালেখির প্রতিভাকে ঘষামাজা করতে করতে হ্যারি পটারের বইটি লিখতে থাকেন। এভাবেই কেটে যায় দু’টি বছর। ১৯৯৫ সালে একটু একটু করে হ্যারি পটারের প্রথম বইটি লেখা শেষ করেন। বইটি লেখার উদ্দেশ্যই ছিল লেখার মাধ্যমে নিজের জীবনের মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করা। রাওলিং তখন একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই বইটিও ১৪টি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়।
অবশেষে ১৯৯৬ সালে ব্লুমসবারি নামের ছোট একটি প্রকাশনা সংস্থা বইটি প্রকাশ করার জন্য রাজি হয়। ১৯৯৭ সালে হ্যারি পটারের প্রথম বইটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পুরো বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়। রাওলিং অবাক হয়ে দেখেন, এত ব্যর্থতার পরও চেষ্টা করে যাওয়ার সুফল তিনি পেয়েছেন। একে একে আরও বই বের হতে থাকে, সেই সাথে বের হতে থাকে একের পর এক সুপারহিট সিনেমা। ২০০৪ সালে রাওলিং পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে শুধুমাত্র বই লিখে বিলিয়ন ডলারের মালিক হন।
8. আলবার্ট আইনস্টাইন
পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সফল বিজ্ঞানীদের একজন তিনি। তিনি এতটাই সফল যে, ‘বিজ্ঞানী’ শব্দটা মাথায় আসলেই বেশিরভাগ মানুষ তাঁর কথা ভাবেন। পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম সেরা মেধাবী বলা হয় তাঁকে। কিন্তু ১৮৭৯ সালে জন্ম নেয়া এই জার্মান জিনিয়াসকে একটা সময় পর্যন্ত গর্ধভ মনে করা হত। কিছুতেই তিনি ভালো ছিলেন না। কথা বলা শিখতেই তাঁর ৪ বছর লেগেছিলো। পড়াশুনায় ছিলেন একদম কাঁচা। ১৬ বছর বয়সে জুরিখের সুইস ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় শোচনীয় ভাবে ফেল করেন।
ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে প্রতিটি বিষয়ে তিনি এতই বাজে রেজাল্ট করতেন যে, একাধিক বার পড়াশুনা বাদ দেয়ার চিন্তা করতে হয়েছিল। মারা যাওয়ার সময়ে তাঁর বাবার একমাত্র দু:খ ছিল যে এই গর্ধভ ছেলে জীবনে কিছুই করতে পারবে না। বাবার এই কথায় আইনস্টাইন বহুদিন ধরে মনে কষ্ট চেপে রেখেছিলেন।
কোনও কাজ না পেয়ে তিনি বাধ্য হয়ে ইন্সুরেন্স সেলস ম্যানের কাজ নেন। কোনও কাজ না পারলে মানুষ এই ধরনের চাকরি করতো। ২ বছর পর তিনি পেটেন্ট অফিসে কাজ পান। যেখানে নতুন ডিভাইস পেটেন্ট করার আগে পরীক্ষা করা হতো।
কিন্তু একটা সময়ে এই মানুষটাই পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর সেই ‘ডাল ব্রেন’ নিয়ে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি মূল সূত্র সৃষ্টি করে গেছেন। বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। প্রমাণ করেছেন যে চেষ্টা করলে সবাইকে দিয়েই সবকিছু সম্ভব।
সফল মানুষরা কিন্তু কেবল জন্মসূত্রে কিংবা ভাগ্যবলে সফল নন। সাফল্যের পেছনে থাকে বিস্তর পরিশ্রম, ত্যাগ, অধ্যবসায় ও ঝুঁকি গ্রহণের গল্প।
বিশ্বখ্যাত
ফোর্বস ম্যাগাজিনে সফল ব্যক্তিদের মধ্যে পরিলক্ষিত ১২টি কমন বা সাধারণ গুণাবলির কথা উল্লেখ
করা হয়েছে। সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত? তাহলে নিচের
তালিকাটি পড়ে নিতে পারেন। সফল ব্যক্তিরা সাধারণত-
১. সাহসিকতার সঙ্গে ব্যর্থ হন: ব্যর্থতা আসবেই।
তা আপনি যতই গুণান্বিত হন না কেন। সফল
মানুষরা এই সহজ সত্যটাকে মেনে নেন। তারা ব্যর্থতার ভেতর দিয়েই সাফল্যের অন্বেষণ চালিয়ে যান। যখন সাধারণ মানুষ হাল ছেড়ে দেন, তখনও তারা চেষ্টা চালিয়ে যান। একই ব্যর্থতার বৃত্তে জড়ান না বারবার । জীবন থেকে শিক্ষা নেন।
২. লক্ষ্য নির্ধারণ করেন: কেবলমাত্র ‘লং টার্ম’ গোল বা লক্ষ্য নয়, সফল ব্যক্তিরা সচেতন হন
‘শর্ট টার্ম’ বা প্রাত্যহিক লক্ষ্য অর্জনে।
প্রতিদিনকার বিন্দু বিন্দু জমিয়ে তারা তৈরি করে নিতে জানেন সিন্ধু।
৩. শুধুমাত্র ভাগ্যে বিশ্বাসী হন না: সাফল্য কদাচিৎ ভাগ্যের দান। যদিও সাফল্যে ভাগ্যের সহায়তা দরকার পড়ে। তবে একনিষ্ঠতা, শ্রম আর
ঘামের মূল্যেই মূলত সাফল্য অর্জন করে নিতে হয়। অনেক
সময় ভাগ্য বিরূপ হতেই পারে। তবে পরিশ্রম
দিয়ে তা অতিক্রম করে ছিনিয়ে আনা যায় সাফল্য। সফলরা তা-ই করেন।
৪. পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখেন: সচেতন
পর্যবেক্ষণ সার্বিক পরিস্থিতির পরিষ্কার
চিত্র তুলে ধরে। কোথায় কি ঘাটতি, তা পুরনে কি
যা করণীয়; যা করণীয় তার সঠিক
বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা এই সব কিছু বুঝতে পারা যায় সচেতন পর্যবেক্ষণে।
৫. কাজে দেরি করেন না: সফল ব্যক্তিরা যে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন, এমনটা নয়। তবে তারা যে কোনো প্রশ্নের উত্তর
খুঁজে পেতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৎপর হন। ভয়ে কিংবা
নিশ্চয়তার চিন্তায় পিছু হটেন না।
৬. দৃষ্টিপাত করেন সামগ্রিক চিত্রে: শুধু অতীত, বর্তমান বা
ভবিষ্যৎ নয়, সফল ব্যক্তিরা
চোখ রাখেন সার্বিক পরিস্থিতিতে। দেখতে চেষ্টা করেন সামগ্রিক ফলাফল। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ- এই
তিনকে এক সুতোয় গেঁথে তৈরি করেন সাফল্যের
বরমাল্য।
৭. নিজের প্রতি আস্থা রাখেন: সফল ব্যক্তিরা নিজের প্রতি
আস্থাশীল হন। নিজের শক্তি এবং দুর্বলতার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হন। নিজেকে দিয়ে কি সম্ভব আর কি সম্ভব না এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা থাকায় তারা সুসিদ্ধান্ত নিতে পারেন বেশিরভাগ সময়।
৮. নিবেদিত হন: লক্ষ্যের প্রতি আত্মনিয়োগ ব্যতীত সাফল্য অর্জন কঠিন। সবচেয়ে
সফল মানুষেরা সবচেয়ে নিবেদিত-ও হন।
৯. সাবধানতা অবলম্বন করেন: সফল হতে হলে সাবধানতা
প্রয়োজন। চোখ কান খোলা রেখে চারপাশের
পরিবেশ বোঝার চেষ্টা না করার মানে হলো- সুযোগ হাতছাড়া করা। সফল ব্যক্তিরা সাবধানতার সঙ্গে শোনেন, ভাবেন ও
বোঝেন।
১০. হাল ছাড়েন না: সফল
ব্যক্তিরা হাল ছাড়েন না। তারা কি ব্যর্থ হন? অবশ্যই। তবে
ব্যর্থতা এলেই তাদের জীবনীশক্তি ফুরিয়ে যায় না।
প্রতিকূলতার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যান।
১১. যোগাযোগে তুখোড় হন: সফল ব্যক্তিরা শাণিত
যোগাযোগ দক্ষতার অধিকারী হন। সহজেই
মানুষকে বুঝতে এবং বোঝাতে পারেন। সমঝোতায় পটু হন। বাচনভঙ্গিতে হন আত্মবিশ্বাসী।
১২. বিনয়ী হন: সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে অহঙ্কার চলে আসা ভালো না।
অনেক সফল ব্যক্তির মধ্যে অহঙ্কারের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। তারা নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝেন। বোঝেন অন্যেরটাও। ক্ষমা চাইতে জানেন। করতেও জানেন।
----------------------------------------------------------------------------------
(#) Z_¨m~Î : B›Uvi‡bU
- Rvwn` Avn‡g` I Zvi ¯§„wZ cwim`|
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন