শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০২০

বাবার প্র‌ফেশন ছোট ব‌লে প‌রিচয় না দেয়াটা সন্তা‌নের জন্য সাহ‌সিকতার নয় বরং নির্বু‌দ্ধিতার এবং কল‌ঙ্কের

বাবার প্র‌ফেশন ছোট ব‌লে প‌রিচয় না দেয়াটা সন্তা‌নের জন্য সাহ‌সিকতার নয় বরং নির্বু‌দ্ধিতার এবং কল‌ঙ্কের -

আমা‌দের বাবা'রা যারা কষ্ট ক‌রে জীব‌নের সব‌চে‌য়ে ক‌ঠিন পথ পা‌ড়ি দি‌য়ে আমা‌দের‌কে বড় ক‌রে‌ছেন , সমা‌জে প্র‌তি‌ষ্ঠিত ক‌রে‌ছেন সেসব বাবা ও মা‌য়ে‌দের‌ কে আল্লাহ সুস্থ রাখুক , নেক হায়াৎ দান করুক।  

 হালাল ও প‌রিশ্র‌মের কোন কাজ ছোট নয় , ছোট নয় সে মানুষটা যি‌নি ঐ ছোট কাজ ক‌রে


আমা‌দের মত সন্তান‌দের বড় ক‌রে‌ছেন।

আমার বাবা'র কথা ন‌া ব‌লে পার‌ছিনা , তি‌নি সারাজীবন বি‌ভিন্ন প্রাই‌ভেট কোম্পা‌নি‌তে চাক‌রি ক‌রে সংসার চা‌লি‌য়ে‌ছেন। অামার বাবা মু‌ক্তি‌যোদ্ধা ছি‌লেন , তি‌নি মু‌ক্তিযু‌দ্ধের পর ইচ্ছে কর‌লে ঢাকা শহ‌রে নুনতম ১ টি ২ টি বা‌ড়ির মা‌লিক খুব সহ‌জেই হ‌তে পার‌তেন কিন্তু তি‌নি সততা , সত্যবা‌দিতা ও নৈ‌তিকতার কার‌ণে তা ক‌রেন‌নি ! ছোট্ট একটা ব্য‌ক্তিমা‌লিকানা‌ধিন কোম্পা‌নি‌তে চাকরি ক‌রে , নি‌জে‌কে ও আমার মা‌কে ক‌ষ্টে রে‌খে আমা‌কে ও আমার ছোট ভাই‌কে মানুষ করার চেষ্টা ক‌রে‌ছেন । 

আমি সেই মহান মানুষটা‌কে কিভা‌বে অব‌হেলা ক‌রি ? কিভা‌বে উনার কাজটা‌কে ছোট ক‌রে দে‌খি ? আমি আজ‌কে বাবা'র কার‌ণে যত বড় হ‌য়ে‌ছি অামার সা‌থে সা‌থে অামার বাবাও ঠিক তত বড় হ‌য়ে‌ছেন ! তাই অা‌মি  অারও বড় হ‌তে চাই , কেননা অামার বাবার প‌রিশ্রম ও মান‌সিকতা তা‌কে অা‌রো অ‌নেক বড় অবস্থা‌নে নি‌য়ে যাবার মতই। তাই অা‌মি সন্তান হিসা‌বে ম‌নে ক‌রি , বাবা রা কখনও সংসার চালা‌তে গি‌য়ে , সন্তান মানুষ কর‌তে যে‌য়ে য‌দি উৎভুত প‌রি‌স্থি‌তির কার‌ণে ছোট কাজ ক‌রেও থা‌কেন তাহ‌লে তার সে ছোট কাজ‌কেও অামা‌দের সম্মান করা উচিৎ।

# ‌লি‌ঙ্কে দেয়া ভি‌ডিও‌টি‌তে দেখা যা‌চ্ছে , পার‌ভেজ বাংলা‌দে‌শের একজন সং‌গিত শি‌ল্পি যার বাবা ছি‌লেন ঢাকার প্রেসক্লা‌বের (বিপ‌রি‌ত দি‌কে অবস্থান করা) টাই‌পিস্ট। তি‌নি তার ৫ সন্তান‌দের‌কে মানু‌ষের মত মানুষ ক‌রে‌ছেন তার ঐ টাইপি‌ষ্টের পরিশ্রমলব্ধ উপার্য‌নের সী‌মিত টাকায়। # 

পৃ‌থিবীর বিখ্যাত ও সফল ব্যা‌ক্তি‌দের বাবারা গ‌রিব ও ছোট কাজ কর‌তেন । যেমন আমে‌রিকারর প্রে‌সি‌ডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বাবা মু‌চি ছি‌লেন , ভার‌তের প্রে‌সি‌ডেন্ট পরমানু বিঞ্জা‌নি এ পি জে কালা‌মের বাবাও গ‌রিব ছি‌লেন ।

তাই জীব‌নে চলার প‌থে বা অ‌ফি‌সে কিংবা স্কুল থে‌কে ভা‌র্সি‌টি‌তে যেকোন প‌রি‌স্থি‌তি‌তেই বাবার অস্বচ্ছলতা বা ছোট কাজের জন্য সন্তান হিসা‌বে নি‌জে‌কে হেয় বা দুর্বল ভাব‌তে নেই কেননা তা‌তে যেমন বাবার ভালবাসা ও কাজ ক‌রে অামা‌দের মানুষ করা‌কে ছোট করা হয় তেম‌নি যারা বো‌ঝেনা বা ছোট ভা‌বে তারা নি‌জেদের সং‌কির্ণতা‌কে ফু‌টি‌য়ে তো‌লে।


- জা‌হিদ আহ‌মেদ ও তার স্মৃ‌তি প‌রিষদ।

  ahmedzahid75@gmail.com

ভারত বাংলাদেশ : অভিন্ন নদী , পানি চুক্তি এবং অত:পর

ভারত  বাংলাদেশ :  অভিন্ন নদী , পানি চুক্তি এবং অত:পর 

বাংলা‌দেশ ভারত পাশাপা‌শি বন্ধু রাষ্ট্র হ‌লেও দু‌দে‌শের ম‌ধ্যে যে বিষয়গু‌লো নি‌য়ে মত পার্থক্য ও দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তা‌দের ম‌ধ্যে আন্ত:সীমান্ত নদীর পা‌নি বন্টন নি‌য়ে বি‌রোধ অন্যতম ।

আন্তঃসীমান্ত নদী

আন্তঃসীমান্ত নদী (Trans-boundary Rivers)  আন্তঃসীমান্ত নদী বলতে সাধারণত সেসমস্ত নদীকে বুঝায় যেগুলি অন্তত এক বা একাধিক দেশের রাজনৈতিক সীমা অতিক্রম করে। এই সীমা একটি দেশের অভ্যন্তরস্থ বা আন্তর্জাতিক হতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ২৬০টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে।

বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত নদীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং মায়ানমার থেকে ৫৮টি গুরুত্বপূর্ণ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জলতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই এ নদীগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন নদীগুলি প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে এনে মোহনা এলাকায় নতুন নতুন ভূমি গঠন করছে, আবার এ পলির অংশবিশেষ নদীরতলদেশকে ভরাট করে তুলছে যা বন্যা সংঘটনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ নদীগুলির উজান অঞ্চলের রাষ্ট্র দুটির অনেক সময়ই নদীর পানি বণ্টনের আন্তর্জাতিক রীতি মেনে না চলার কারণে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ৫৫টি এরূপ নদী রয়েছে যার মধ্যে কেবল গঙ্গানদীর পানি বণ্টনের চুক্তি হয়েছে দু’টি দেশের মাঝে। বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৬ সনের ১২ ডিসেম্বর প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি হতে ৩১ মে এই সময়ে ফারাক্কায় প্রবাহিত পানির পরিমাপের ভিত্তিতে দু’টি দেশের মধ্যে পানিবণ্টন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। ৩০ বছর মেয়াদী এ চুক্তি নবায়িত হবে দু’টি দেশের সম্মতির প্রেক্ষিতে। ১৯৭২ সালে দু’টি দেশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী ‘যৌথ নদী কমিশন’ প্রতিষ্ঠিত হয় এর কাজ হলো, সাধারণ নদীসমূহের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে দু’টি দেশই সর্বাধিক সুযোগসুবিধা নিতে পারে সে ব্যপারে দুটি দেশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা।

ছক

ক্রমিক নম্বর ভারত থেকে আগত নদী সীমান্তবর্তী জেলা

১. রায়মঙ্গল সাতক্ষীরা

২. ইছামতী-কালিন্দী সাতক্ষীরা

৩. বেতনা-কোদালিয়া যশোর

৪. ভৈরব-কপোতাক্ষ মেহেরপুর

৫. মাথাভাঙ্গা কুষ্টিয়া, মেহেরপুর

৬. গঙ্গা নবাবগঞ্জ

৭. পাগলা নবাবগঞ্জ

৮. আত্রাই দিনাজপুর ও নওগাঁ

৯. পুনর্ভবা দিনাজপুর ও নওগাঁ

১০. তেঁতুলিয়া দিনাজপুর

১১. টাংগন দিনাজপুর

১২. কুলিক বা কোকিল ঠাকুরগাঁও

১৩. নাগর ঠাকুরগাঁও

১৪. মহানন্দা পঞ্চগড়, নবাবগঞ্জ

১৫. ডাহুক পঞ্চগড়

১৬. করতোয়া পঞ্চগড়

১৭. তলমা পঞ্চগড়

১৮. ঘোড়ামারা পঞ্চগড় ও নিলফামারী

১৯. দিওনাই-যমুনেশ্বরী নিলফামারী

২০. বুড়িতিস্তা নিলফামারী

২১. তিস্তা নিলফামারী

২২. ধরলা লালমনিরহাট

২৩. দুধকুমার কুড়িগ্রাম

২৪. ব্রহ্মপুত্র কুড়িগ্রাম

২৫. জিঞ্জিরাম কুড়িগ্রাম

২৬. চিল্লাখালি শেরপুর

২৭. ভোগাই শেরপুর

২৮. সোমেশ্বরী নেত্রকোনা

২৯. দামালিয়া/যালুখালী সুনামগঞ্জ

৩০. নোয়াগাঙ সুনামগঞ্জ

৩১. উমিয়াম সুনামগঞ্জ

৩২. যদুকাটা সুনামগঞ্জ

৩৩. ধলা সিলেট

৩৪. পিয়াইন সিলেট

৩৫. শারি-গোয়াইন সিলেট

৩৬. সুরমা সিলেট

৩৭. কুশিয়ারা সিলেট

৩৮. সোনাই-বারদল সিলেট

৩৯. জুরি মৌলভীবাজার

৪০. মনু মৌলভীবাজার

৪১. ধলাই মৌলভীবাজার

৪২. লংলা মৌলভীবাজার

৪৩. খোয়াই হবিগঞ্জ

৪৪. সুতাং হবিগঞ্জ

৪৫. সোনাই হবিগঞ্জ

৪৬. হাওড়া ব্রাহ্মণবাড়ীয়া

৪৭. বিজনী ব্রাহ্মণবাড়ীয়া

৪৮. সালদা ব্রাহ্মণবাড়ীয়া

৪৯. গোমতী কুমিল্লা

৫০. কাকরাই-ডাকাতিয়া কুমিল্লা

৫১. সিলোনিয়া ফেনী

৫২. মুহুরী ফেনী

৫৩. ফেনী খাগড়াছড়ি

৫৪. কর্ণফুলি রাঙ্গামাটি

৫৫. নিতাই ময়মনসিংহ

মায়ানমার থেকে আগত নদী সীমান্তবর্তী জেলা

৫৬. সাংগু বান্দরবান

৫৭. মাতামুহুরী বান্দরবান

৫৮. নাফ কক্সবাজার

আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির পানিবণ্টন ইস্যু নিয়ে প্রায়ই সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ছোট থেকে বড় আকারের বিরোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একক কর্তৃপক্ষের উপর এ ধরনের সংকট নিরসনের দায়ভার ন্যাস্ত থাকত তবে এ ধরনের আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধান অনেক সহজ হতো। কিন্তু আন্তঃসীমান্ত সম্পদসমূহের ব্যবহার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নিয়মনীতি থাকায় যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যার চাপ এবং সম্পদের চাহিদা বেশী সে সমস্ত এলাকায় এ ধরনের বিরোধ লেগেই থাকে। 


যৌথ নদী কমিশন হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান একটি বহুব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী, সহযোগিতা ও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন।এই চুক্তি অনুযায়ী জলসম্পদ বণ্টন, সেচ, বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণের মতো সাধারণ বিষয়গুলির জন্য একটি যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়।এবং উক্ত চুক্তি অনুসারে পানিসম্পদ, সেচ, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ আগ্রহ ও যৌথ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দুইটি দেশ একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার করে। কমিশনের প্রতিবেদন ও পাঠ ১৯৭৫, ১৯৭৮ ও সবশেষে ১৯৯৬ সালের গঙ্গার জল বণ্টনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চুক্তিতে উপনীত হতে সাহায্য করে।

ইতিহাস

বাংলাদেশ হিমালয় থেকে উৎসরিত ৩টি বৃহৎ নদীঃ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার পলল দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এটি পৃথিবীর একটি অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীগুলোর মধ্যে ৫৭টি হচ্ছে আন্তঃসীমান্ত নদী যার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন এবং ৩টি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে অভিন্ন। আবহমানকাল ধরে নদীমাতৃক বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা আবর্তিত হচ্ছে এসকল নদীর পানিকে ঘিরে। এ তিনটি নদীর অববাহিকার মোট আয়তন প্রায় ১.৭২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, যার মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এসকল নদীর অন্যান্য অববাহিকাভূক্ত দেশ হচ্ছে ভারত, নেপাল, ভূটান ও চীন।

১৯৭২ সালের মার্চ মাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও প্রজাতন্ত্রী ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের মধ্যে যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে দু’দেশের বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে অভিন্ন নদীর ব্যাপক জরিপ কার্যক্রম পরিচালন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণের বিস্তারিত প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রধান প্রধান নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পের উপর সমীক্ষা পরিচালন, উভয় দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে এতদাঞ্চলের পানি সম্পদের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার এবং বাংলাদেশের সাথে ভারত সংলগ্ন এলাকায় পাওয়ার গ্রীড সংযোজনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্থায়ী ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়। উক্ত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ২৪ নভেম্বর অংশগ্রহণকারী দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে সর্বাধিক যৌথ ফলপ্রসূ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অভিন্ন নদীসমূহ থেকে সর্বোচ্চ সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের স্ট্যাটিউট স্বাক্ষরিত হয়। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ পক্ষের কাজ সম্পাদনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দপ্তর হিসেবে যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ভিশন, মিশন ও কার্যাবলি

রূপকল্প (Vision)

টেকসই পানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি সম্পদের ন্যায়সঙ্গত বণ্টন ও যৌথ ব্যবস্থাপনা।

অভিলক্ষ্য (Mission)

আন্তঃসীমান্ত নদী অববাহিকাভূক্ত দেশ এর সাথে পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর এবং পানি সম্পদের যৌথ ব্যবস্থাপনা।

 কার্যাবলি (Function)

o আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন, যৌথ ব্যবস্থাপনা, বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময়, ভারতীয় এলাকায় প্রবাহ নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম এবং সীমান্তবর্তী এলাকার বাঁধ ও নদীতীর সংরক্ষণমূলক কাজসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ভারতের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।

o ১৯৯৬ সালের গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় প্রতি বছর ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়কালে ভারতের ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর যৌথ প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও পানি বণ্টন এবং বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ সেতুর নিকট যৌথ প্রবাহ পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম তত্ত্বাবধান।

o আন্তঃসীমান্ত নদী অববাহিকায় যৌথভাবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি প্রশমন, পানি সম্পদের আহরণ ও উন্নয়ন, নেপালে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম এবং গবেষণা ও কারিগরী সংক্রান্ত বিষয়ে নেপালের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।

o পানি সম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতা, আন্তঃসীমান্ত নদী অববাহিকায় চীন কর্তৃক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যা পূর্বাভাসের তথ্য-উপাত্ত বিনিময় ও সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে আলোচনার জন্য চীনের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।

o যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সেচ ও নিষ্কাশন কমিশন (ICID)-এর বাংলাদেশের সচিবালয় হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এই কমিশন ইন্টার-ইসলামিক নেটওয়ার্ক ফর ওয়াটার রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট (INWRDAM) এবং ওআইসি (OIC) এর পানি সম্পর্কিত বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে ।

আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন

দুইয়ের অধিক স্বাধীন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী ‘আন্তর্জাতিক নদী’ হিসেবে পরিচিত। এসব নদীর ওপর কোনো দেশের একক আধিপত্য থাকে না। এসকল নদী নিয়ে আন্তর্জাতিক আইনও রয়েছে। ১৯৬৬ সালের হেলসিংকি নিয়মাবলি অনুযায়ী, কোনো উজানের দেশ আন্তর্জাতিক নদীর ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু (বাঁধ, ব্যারেজ, বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্লুইজগেট) নির্মাণ করতে পারবে না যা ভাটির দেশের জন্য ক্ষতিকর। একইভাবে, ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের জলপ্রবাহ কনভেনশনেও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নদীকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না যাতে তা অন্য দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বা অসুবিধার সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক নদী নিয়ে এত আইন থাকার পরেও সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এর কিছুই মানছে না। আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদীগুলোর ওপর একের পর এক বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার কারণে বাংলাদেশ তার ন্যায্য পানি পাচ্ছে না। ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে ভারত বেশ কয়েকটি নদীতেই বাঁধ, ব্যারেজসহ বিভিন্নরকম স্থাপনা নির্মাণ করেছে। যা নিয়ে ভারতের বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধুতী রায় থেকে শুরু সচেতন ভারতীয় বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজও বিভিন্নভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আমাদের নদীমাতৃক দেশের নদীর সংখ্যা ১২০০ থেকে কমতে কমতে এখন মাত্র ২৩০টি। গঙ্গা চুক্তির ২৫ বছর হতে চললেও আমরা আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা বুঝে পাইনি। এক ফারাক্কা বাঁধের কারণেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গিয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২০টি নদী। এছাড়াও ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো ভারত শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে দিয়ে আমাদের খরার মুখে ফেলছে আবার বর্ষাকালে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের হাজারো গ্রাম পানির নিচে ডুবিয়ে দিচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছরই বর্ষাকালে ভয়ানক বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে মরুকরণ দেখা দেয়।

গঙ্গার জল বণ্টন 

বাংলাদেশ ও ভারত রাষ্ট্রদ্বয়ের বৈদেশিক সম্পর্কের একটি দীর্ঘকালীন ইস্যু। এই ইস্যুটি উত্তর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর জলসম্পদের সঠিক বণ্টন ও উন্নয়ন সম্পর্কিত। সুদীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত হয়েছে। একাধিক বৈদেশিক চুক্তি ও আলোচনা সত্ত্বেও এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব হয়নি।

মানচিত্রে উত্তর ভারতে গঙ্গা নদীর উৎস থেকে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত নদীর গতিপথ।

যদিও ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নতুন দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবেগৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ একটি সামগ্রিক বৈদেশিক চুক্তি সাক্ষর করেন। এই চুক্তিটি ছিল বাংলাদেশকে ন্যূনতম জলসরাবরাহের গ্যারান্টি সহ ৩০ বছরের জলবণ্টন চুক্তি। উল্লেখ্য, গঙ্গার নিম্ন অববাহিকায় বাংলাদেশের অধিকার স্বীকৃত। 

পটভূমি

বাংলাদেশের নদী-মানচিত্র

উত্তর ভারতের সমভূমি থেকে নেমে এসে গঙ্গা নদী ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমান্ত ধরে ১২৯ কিলোমিটার এবং তারপর বাংলাদেশের মধ্যে ১১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের কাছে গঙ্গার প্রথম শাখানদী ভাগীরথী উৎপন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলে এই নদীই আবার হুগলি নদী নামে পরিচিত। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ফারাক্কা বাঁধ নির্মিত হয়। এই বাঁধ গঙ্গার জলের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রিত করে এবং হুগলি নদীর নাব্যতা রক্ষার উদ্দেশ্যে কিছু পরিমাণ জল একটি ফিডার খালের সাহায্যে ভাগীরথী নদীর দিকে প্রবাহিত করা হতে থাকে।

বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্রের বৃহত্তম শাখানদী যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হবার পূর্বে গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণ করেছে। আরও ভাটিতে গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখানদী মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে এবং মেঘনার মোহনায় প্রবেশ করেছে। ৩৫০ কিলোমিটার প্রস্থবিশিষ্ট এই মোহনার মাধ্যমে গঙ্গা বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারত থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

সমাধান প্রচেষ্টা

১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান একটি বহুব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী, সহযোগিতা ও শান্তিচুক্তি সাক্ষর করেন।[৪] এই চুক্তি অনুযায়ী জলসম্পদ বণ্টন, সেচ, বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণের মতো সাধারণ বিষয়গুলির জন্য একটি যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়।


ফারাক্কা বাঁধ

ফারাক্কা বাঁধ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) দূরে অবস্থিত একটি বাঁধ। এই বাঁধের মাধ্যমে ভারত গঙ্গার জল নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে পলি জমে হুগলি নদীর নাব্যতা হ্রাস পেতে শুরু করলে কলকাতা বন্দর গভীর সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই সমস্যা সমাধানে শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি-জুন মাস) গঙ্গার জল হুগলি নদীর অভিমুখে প্রবাহিত করে পলি দূর করার জন্য এই বাঁধ নির্মিত হয়। বাংলাদেশ দাবি করে, ভারতে এইভাবে নদীর জলপ্রবাহের অভিমুখ পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের নদীগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৪ সালের মে মাসে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার আগে জলবণ্টন ইস্যুর সমাধানে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির মাধ্যমে ভারত স্বল্পমেয়াদের জন্য বাঁধের ফিডার খালটি চালু করার অনুমতি পায়। 

অবশ্য, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশে সেনাশাসন প্রতিষ্ঠার পর দুই রাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সকল প্রকার আলাপ-আলোচনা বন্ধ করে দেয়। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের একটি শীর্ষ সম্মেলনে এবং ৩১তম জাতিসংঘ সাধারণ সভার বৈঠকে ভারতে একতরফা পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।  অন্যান্য রাষ্ট্র ও জাতিসংঘের পরামর্শক্রমে ভারত ও বাংলাদেশ পুনরায় আলোচনা শুরু করলেও, তা থেকে কোনো সমাধানসূত্র পাওয়া সম্ভব হয় না।


সাময়িক চুক্তি সম্পাদন

১৯৭৭ সালে ভারতের তদনীন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ও বাংলাদেশের তদনীন্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনকালে দুদেশের বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। উক্ত দুই নেতা সেই বছর একটি পাঁচ বছরের জলবণ্টন চুক্তি সাক্ষর করেন। কিন্তু ১৯৮২ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার আর পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। 

১৯৮২ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের তদনীন্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ভারতের সঙ্গে দুই বছরের জলবণ্টন নিয়ে একটি মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (মউ) সাক্ষর করেন। ১৯৮৫ সালের ২২ নভেম্বর আরও একটি মউ সাক্ষরিত হয়।  তবে প্রবাহিত জলের পরিমাপ বৃদ্ধি নিয়ে কোনো চুক্তি সাক্ষরিত হয়নি। ভারতও চুক্তি সম্প্রসারিত করতে অস্বীকার করে। ১৯৯৩ সালের শুখা মরশুমে বাংলাদেশের দিকে জলপ্রবাহ পূর্বের ৩৪,৫০০ কিউসেকের বদলে কমিয়ে ১০,০০০ কিউসেক করে দেওয়া হয়।[২] বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ সভা এবং সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশনে (সার্ক) বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও বিশেষ ফল হয় না।


১৯৯৬ সালের চুক্তি সম্পাদন

 

ভারত ও বাংলাদেশে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল

১৯৯৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হলে দুই দেশের বৈদেশিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর উভয় দেশের নেতৃত্ব নতুন দিল্লিতে মিলিত হয়ে একটি ৩০ বছরের সামগ্রিক চুক্তি সাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ফারাক্কা থেকে দুই দেশের মধ্যে জল বণ্টন করা হতে থাকে। পূর্ববর্তী ৪০ বছরের গড় মাত্রা অনুযায়ী ভারত গঙ্গার জলের ভাগ পেতে থাকে। যে কোনো সংকটের সময় বাংলাদেশকে ৩৫,০০০ কিউসেক জল সরবরাহ করার গ্যারান্টিও দেওয়া হয়।

গঙ্গার জলের দীর্ঘকালীন বণ্টনব্যবস্থা ও অন্যান্য সাধারণ নদীগুলি ক্ষেত্রে একই রকমের জলবণ্টন ব্যবস্থা কার্যকরী করার জন্যও উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে ভারতের গঙ্গার জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং গঙ্গার নিম্ন অববাহিকায় বাংলাদেশের অধিকার সহ জলের সমান ভাগ পাওয়ার অধিকার – দুইই প্রতিষ্ঠিত হয়। উভয় রাষ্ট্রই জলসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা সুনিশ্চিত করার কথা বলে। এই চুক্তির ফলে কুষ্ঠিয়া ও গড়াই-মধুমতী নদীর উপর বাঁধ ও সেচপ্রকল্প পারমিট পায়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে জল সরবরাহ এবং বঙ্গোপসাগরের লবনাক্ত জলের প্রকোপ থেকে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে রক্ষা করা।


বাংলাদেশের ক্ষতি সাধন 

শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে বাংলাদেশকে কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। প্রত্যক্ষ ভাবে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়; যদি পরোক্ষ হিসাব করা হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে। প্রফেসর এম, আই চৌধুরী এবংসৈয়দ সফিউল্লাহ জাতিসংঘ পরিবেশ অধিদপ্তর ও হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল কার্বন প্রবাহ’ গবেষণা প্রকল্পে বিভিন্ন গুরত্বপুরন তথ্য উঠে আসে । ৮ বছরের সমীক্ষার ফলাফল সংক্ষেপে নিম্নোরূপ :

1. পদ্মা নদী দিয়ে পলিপ্রবাহ প্রায় ২০% কমে গেছে (১৯৬০ সালের তুলনায়)।

2. কার্বন প্রবাহ কমেছে ৩০%।

3. পলিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে জমির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে।

4. মিনারেল এবং নিউট্রিয়েন্ট কমে যাওয়ার ফলে নদী ও জলাভূমিতে ফাইটোপ্লাকটন উৎপাদন কমেছে ৩০%। ফাইটোপ্লাকটন হচ্ছে খাদ্য চক্রের প্রথম ধাপ। এ থেকে ক্রমান্বয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ জীবের উৎপাদন ঘটে। পদ্মা-ব্রক্ষপুত্রের সঙ্গমস্থল আরিচাঘাটে সমীক্ষা থেকে যে ফিশ ক্যালেন্ডার তৈরী করা হয়েছে তাতে দেখা যায় ৩৫ বছর আগের তুলনায় বর্তমান মৎস্য উৎপাদন মাত্র ২৫%। ইলিশ মাছ এখানে পাওয়া যায় না বল্লেই চলে। ইলিশ মাছ স্যাড গোত্রীয় মাছ। ০-৪২০ বিষ্ণুরেখার যেখানেই সমূদ্র সংলগ্ন নদী রয়েছে সেখানেই এই মাছ পাওয়া যায়। বৎসরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই মাছ নোনা পানি থেকে মিঠা পানিতে আসে ডিম পাড়ার জন্য। উজানে এদের আগমন বাঁধ কিম্বা ঐ ধরনের বাধার পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত সংবেদনশলীল। ফারাক্কার আগে এক সময় রাজশাহী পদ্মা অবধি ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। এখন আরিচাতেই এ মাছ পাওয়া যায় না। ফারাক্কা বিদ্যমান থাকলে আশংকা করা হয় পদ্মা এবং তার কমান্ড অঞ্চলে ইলিশ মাছ আদৌ পাওয়া যাবে না।

5. জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুধারী তলোয়ারের মত কাজ করছে। একদিকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূল অঞ্চল তলিয়ে যাওয়া আর তার সাথে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের সমতল ভূমির ক্রমান্বয়ে দেবে যাওয়া যাকে বলা হয় সাবসিডেন্স। এর হার বছরে ৫ মি.মি.। নদীর প্লাবনের কারণে সঞ্চিত পলি সাবসিডেনসের নেতিবাচক প্রভাবকে এতকাল পুষিয়ে নিয়ে আসছিল। ফারাক্কার কারণে এমনটি আর হতে পারছে না ।

6. টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টোশিও ইসুজুকা ও আমাদের যৌথ গবেষণায় ষ্ট্রনসিয়াম আইসোটপ সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে পুরো বঙ্গোপসাগর জুড়ে সময় অনুচক্রে তীব্র ফাইটোপ্লাকটন বিকাশ ঘটে। আর এর অনুঘটক হচ্ছে নদী বাহিত নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টি উপাদান ও মিনারেল। ফারাক্কা বাঁধের কারণে প্রক্রিয়াটি বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে সমগ্র বঙ্গোপসাগর জুড়ে মৎস্য উৎপাদন আশংকাজনকভাবে কমে যেতে পারে। বঙ্গোপসাগরের মাছের উপর ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠিও নির্ভরশীল।একই সাথে কার্বন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার উপশম কম হবে

7. প্রফেসর কেট ক্র্যান্ক (কানাডা) এর সাথে যৌথ গবেষণায় দেখা যায় যে ফারাক্কার কারণে নদী বাহিত পলির গ্রেইন সাইজ স্পেকট্রাল প্যার্টান অর্থাৎ পলি কণার সাইজ এর তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের মাটির ভৌত কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ।[৬]

বিস্তৃত অঞ্চল মরুকরণসম্পাদনা

পদ্মার পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তর অববাহিকায় বিশেষ করে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ভূগর্ভস্থ পানির প্রথম স্তর ৮-১০ ফুট জায়গা বিশেষে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। । মওসুমী বৃষ্টি ও এই স্তরে রিচার্য করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সেচের জন্য খরার মৌসুমে এখন ভরসা দ্বিতীয় স্তর (>৩০০ ফুট)। বরেন্দ্র অঞ্চলে এই স্তরটা মোটামুটি ফসিল পানি দিয়ে পূর্ণ। ব্যাপক সেচের ফলে এই স্তর থেকে কতদিন পানি উত্তোলন করা যাবে কে জানে। পানির অভাবে মাটির আদ্রতা শুষ্ক মওসুমে ৩৫% কমে গেছে। পানি প্রবাহের এমন করুণ অবস্থা থেকে সৃষ্ট হয় মরুকরণ প্রক্রিয়া। নদীর পানি থেকে জলীয় বাষ্প সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বায়ুর আদ্রতা সৃষ্টিতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। খরার সময় পদ্মা নিজেই যখন বিশুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয় সে তখন স্থলভূমির বায়ুতে আদ্রতার যোগান কিভাবে দিবে। আদ্রতার অভাবে দিনের নিম্নতম এবং উচ্চতম তাপমাত্রার তারতম্য বৃদ্ধি পায়। ৬০ দশকে এই তারতম্য যেখানে ৫-৮ সে. ছিল এখন সেটা বৃদ্ধি পেয়ে ৮-১২ সে. এ দাঁড়িয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে মরুকরণ প্রক্রিয়ার ব্যাহিক রূপ এই অঞ্চলের জনগণ ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করছেন। মরুকরণের অনেক বায়ো মার্কার রয়েছে, এইগুলো হতে পারে পানি নির্ভর উদ্ভিদ এবং আরো সুক্ষ স্তরে অণুজীব। আশা করা যায় দেশের নতুন প্রজন্মের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জাতীয় স্বার্থে এ ব্যাপারে গবেষণায় ব্রত হবেন।

নদীর নাব্যতা সম্পাদন

ফারাক্কা পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গঙা নদীর (পদ্মা) প্রবাহে চরম বিপর্যয় ঘটে। প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর নাব্যতা কমে যায়। ফলে প্রায় বাংলাদেশর বর্তমানে প্রায়ই বড় বন্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশের গড়াই নদী এখন সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত।

মাটির লবণাক্ততা সম্পাদন

ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের মাটির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা খুলনার রুপসা নদীর পানিতে ৫৬৩.৭৫ মিলিগ্রাম/লিটার ক্লোরাইড আয়নের উপস্থিতি পেয়েছেন। তাছাড়া, মিঠা পানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে লবন, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিতে প্রবেশ করছে।

কৃষি সম্পাদন

কৃষির অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। পানির স্তর অনেক নেমে যাওয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের জি-কে সেচ প্রকল্প মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেচযন্ত্র গুলো হয়ত বন্ধ হয়ে আছে অথবা সেগুলোর উপর তার ক্ষমতার চাইতে বেশি চাপ পড়ছে। এই প্রকল্পের অন্তর্গত প্রায় ১২১,৪১০ হেক্টর জমি রয়েছে। মাটির আর্দ্রতা, লবনাক্ততা, মিঠা পানির অপ্রাপ্যতা কৃষির মারাত্বক ক্ষতি করেছে।

মৎস্য সম্পাদন

পানি অপসারণের ফলে পদ্মা ও এর শাখা-প্রশাখাগুলোর প্রবাহের ধরন, পানি প্রবাহের বেগ, মোট দ্রবীভূত পদার্থ (Total dissolved solids) এবং লবণাক্ততার পরিবর্তন ঘটেছে। এই বিষয় গুলো মাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গঙ্গার পানির উপর এই এলাকার প্রায় দুই শতেরও বেশি মাছের প্রজাতি ও ১৮ প্রজাতির চিংড়ী নির্ভর করে। ফারাক্কা বাঁধের জন্য মাছের সরবরাহ কমে যায় এবং কয়েক হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েন।

নৌ-পরিবহনসম্পাদনা

শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ৩২০ কিলোমিটারের বেশি নৌপথ নৌ-চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, কয়েক হাজার লোক বেকার হয়ে পড়ে, নৌ-পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়।

ভূ-অভ্যন্তরে পানির স্তরসম্পাদনা

ভূ-অভ্যন্তরের পানির স্তর বেশিরভাগ জায়গায়ই ৩ মিটারের বেশি কমে গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন দ্রবিভুত পদার্থের , ক্লোরাইড, সালফেট ইত্যাদির ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেও পানির স্তর কমছে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি, শিল্প, পানি সরবরাহ ইত্যাদির উপর। মানুষের বাধ্য হয়ে ১২০০ মিলিগ্রাম/লিটার দ্রবিভুত পদার্থ সম্পন্ন পানি পান করছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO = World health organization) ৫০০ মিলিগ্রাম/লিটারের কম দ্রবীভূত পদার্থ সম্পন্ন পানিকেই মানুষের পান করার জন্য উপযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।

ভারতের ক্ষতিসম্পাদনা

একচল্লিশ বছর আগে গঙ্গার উপর যখন ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়, তার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জলপ্রবাহের একটা অংশকে হুগলী নদীতে চালিত করে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা।সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল না-হলেও ফারাক্কার জেরে গঙ্গার উজানে যে পলি পড়া শুরু হয়েছে, তারে জেরে প্রতি বছরই বর্ষার মরশুমে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ।। বহুদিন ধরেই মালদহ-মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা তীরবর্তী দুর্ভোগ ও বিপর্যয়কবলিত মানুষ ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। একই সঙ্গে তারা ক্ষতিপূরণ, ভূমি ও পুনর্বাসন দাবি করে আসছে। অব্যাহত বন্যা ও নদীভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও তারা দাবি জানিয়ে আসছে। বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের জন্যও ফারাক্কা বাঁধ বড় রকমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পার্শ্ববর্তী বিহারও ফারাক্কা বাঁধের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেখানে চলমান বন্যায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ও ২ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিহার রাজ্য সরকারের দাবি, ফারাক্কা বাঁধের কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় প্রতিবছরই রাজ্য বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। 

তিস্তা প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগ, ‘দুশ্চিন্তায়’পররাষ্ট্র স‌চিব শ্রিংলাকে ঢাকায় পাঠালো ভারত

অনির্ধারিত এক ঝটিকা সফরে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। গত ১৮ আগস্ট, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। এই সফর নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কিছু না বলেও দেশে মেগা প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটে শ্রিংলার এই বলে জানিয়ে ভারতের গণমাধ্যম।

‘চায়নাস তিস্তা প্লানস: ফরেন সেক্রেটারি লাইকলি টু ভিজিট বাংলাদেশ টুডে’ শিরোনামে এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

এতে বাংলাদেশের তিস্তা নির্ভর সেচ বা কৃষি প্রকল্পে চীন ১০০ কোটি ডলার সহায়তা করবে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন কল্লোল ভট্টাচার্য।   

ওই প্রতিবেদনে কল্লোল ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিস্তায় সেচ প্রকল্পে চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের সহায়তা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে পানিবন্টন বিষয়ক সমঝোতার কেন্দ্রে রয়েছে এই তিস্তা। এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তায় পানির লেভেল আশানুরূপ পর্যায়ে রাখতে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভারতের সঙ্গে পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ব্যর্থতার পর চীনের সঙ্গে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারের সূত্রগুলো অনলাইন ইউরেশিয়া ভিউ’কে জানিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ আসছে তাকে সামনে রেখে মঙ্গলবার এক দিনের জন্য ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। আর এই সঙ্গে ওই ইস্যুগুলো সামনে চলে এসেছে।

ইউরেশিয়াভিউ’র বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদেন বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিস্টোরেশন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি আটকে আছে। এক্ষেত্রে চীনের এই ঋণ হবে সম্পর্কের ‘ল্যান্ডমার্ক’, কারণ, এতে ভারত-বাংলাদেশ তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির পরিণতিকে সিল করে দেবে।

আরো বলা হয়, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত একটি বিশাল প্রজেক্টে চীনের অর্থায়ন মেনে নেয়া হয়েছে। এতে অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে চীন। বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা এই প্রকল্প শুরু করতে পারবো।

দ্য হিন্দু আরো জানায়, ডিসেম্বর ও মে মাসে তিস্তা নদীতে পানির স্তর বেশি রাখার জন্য বৃহত্তর একটি শেয়ার দাবি করছে বাংলাদেশ। এ সময়ে পানির স্তর শুকিয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষিকাজ কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার বার উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও এই তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভারত সরকার তার প্রতিশ্রুত এই ‘ল্যান্ডমার্ক চুক্তি’কে সামনে এগিয়ে নিতে পারেনি।

তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে নদীটির বিস্তৃত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুজ্জীবনে একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

'তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন' নামে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক আট হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ.এম. আমিনুল হক এই তথ্য জানিয়েছেন।

প্রকল্পটি চীনের ঋণ সহায়তায় পরিচালিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চীন তিস্তা নদীতে কি ধরণের প্রকল্প হতে পারে সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা নেয়ার জন্য জরিপ পরিচালনা করেছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মি. হক বলেন, "চাইনিজদের সাথে যেটা সেটা হচ্ছে ওরাই স্টাডি-টা করেছে নিজেদের খরচে। আমরা ইআরডিকে জানিয়েছি যে অর্থায়নের ব্যাপারে বিদেশি সহায়তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এখন চাইনিজরা যদি ইআরডির সাথে যোগাযোগ করে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে হয়তো এটা আগাবে।"

বর্তমানে পরিকল্পনাটি ইআরডির আওতায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভারত থেকে বাংলাদেশে যে ৫৪টি নদী প্রবেশ করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিস্তা। এটি ভারতের সোলামো লেক থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে এটি চিলমারির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে।

বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফরের সময় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরো কয়েকটি বিষয়ে চীনের সহায়তা চেয়েছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট। সেই সফরে চীন আশ্বাস দেয় যে তারা জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ক কেন্দ্র এবং তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়ন করবে দেশটি।

এ বিষয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ.কে.এম. এনামুল হক শামীম বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ২১টি প্রস্তাব দাতা দেশগুলোর সাথে তুলে ধরে। এরমধ্যে তিস্তার এই প্রকল্পটির প্রস্তাবনাও ছিল।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, ছয় মাস আগে এ ধরণের কয়েকটি প্রকল্প দাতা দেশগুলোর সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে তিস্তার প্রকল্পটির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন।

এখন অর্থায়নের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ধারণ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ - ইআরডি।

তিনি বলেন, "আমরা প্রকল্প দিয়েছি, চীন আগ্রহ দেখিয়েছে, তারা ইআরডির সাথে যোগাযোগ করবে এবং ইআরডিও তাদের সাথে যোগাযোগ করবে। এটা এখন ইআরডি-তে আছে।"

তবে ইআরডি বলছে যে প্রকল্পটির অর্থায়ন নিয়ে এখনো চীনের সাথে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়নি। তারা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছে মাত্র।

এ বিষয় ইআরডি-এর অতিরিক্ত সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, "আমরা সবেমাত্র পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে একটি প্রস্তাবনা পেয়েছি। এটা প্রস্তুত হতে আরো অনেক সময় লাগবে।"

"আমরা আসলে প্রাথমিক পর্যায়েও যেতে পারিনি এখনো। এটা নিয়ে আলোচনা করবো চীনের সাথে, সেটাও করি নাই এখনো।"

কী থাকবে তিস্তা বিষয়ক প্রকল্পটিতে?

ধারণা করা হচ্ছে যে, এই প্রকল্পটিতে তিস্তার উপকূল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতারসহ নানা কারণে তিস্তা সমস্যার কোন সমাধান এখনো হয়নি।
ছবির ক্যাপশান,

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতারসহ নানা কারণে তিস্তা সমস্যার কোন সমাধান এখনো হয়নি।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেহেতু তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিনের যে দ্বন্দ্ব রয়েছে সেটি কাটিয়ে শুকনো মৌসুমে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বলেন, প্রকল্পটিতে এখনো পর্যন্ত যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলো হচ্ছে নদীগর্ভে ড্রেজিং করা, রিভেটমেন্ট বা পাড় সংস্কার ও বাধানো এবং ভূমি পুনরুদ্ধার।

এছাড়া বন্যা বাঁধ মেরামতেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, তিস্তা রেস্টোরেশন প্রকল্পে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাড় বাধানো ও সংস্কার, নদীর বিস্তৃতি একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাপে আনা এবং ভূমি পুনরুদ্ধার।

"তিস্তার বিস্তৃতি কোন এলাকায় হয়তো পাঁচ কিলোমিটার, কোথাও দেড় কিলোমিটার বা কোথাও তিন কিলোমিটার আছে। সেক্ষেত্রে এই বিস্তৃতি কমিয়ে দেড় বা দুই কিলোমিটার কিংবা প্রকল্পের নকশায় যা আছে সে অনুযায়ী করা হবে।"

তিনি বলেন, এর ফলে তিস্তার পারে থাকা শত শত একর জমি বা ভূমি পুনরুদ্ধার হবে যা ভূমিহীন মানুষ কিংবা শিল্পায়নের কাজে লাগানো হবে।

সেই সাথে ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, গভীরতা বাড়িয়ে এবং বিস্তৃতি কমিয়ে যদি একই পরিমাণ পানির প্রবাহ ঠিক রাখা যায় তাহলে নদীর পাড়ের জমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এছাড়া তিস্তা নদীতে যাতে ভাঙন রোধ করা যায় সে বিষয়েও পরিকল্পনা রয়েছে।

তিস্তা চুক্তির অবস্থা কী

গত ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার মুখে তা আটকে যায়।

এরপর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি আশ্বস্ত করেন যে তিস্তার পান ভাগাভাগি নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হবে।

কিন্তু এর পর পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও তিস্তা সমস্যার কোন সমাধান এখনো হয়নি।

সবশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মীমাংসা আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হয়নি।

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়া এবং দ্বিপাক্ষিক কিছু ইস্যুতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরণের হতাশা রয়েছে।

এমন অবস্থায় তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারতের আশায় বসে না থেকে বাংলাদেশ নিজ থেকে উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ.কে.এম. এনামুল হক শামীম বলেন, এই পরিকল্পনাটি এখনো খুবই প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। এটি নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি।

এদিকে প্রকল্পটির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া বলেন, চীনই আসলে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ থেকেই তিস্তা প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি চীনের সহায়তায় হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের অর্থায়নের এক বিলিয়ন ডলার কিন্তু বাংলাদেশকে সহায়তা হিসেবে নয় বরং ঋণ হিসেবে দেয়ার কথা রয়েছে। যা বাণিজ্যিক সুদের হার মিলিয়ে ফেরত দিতে হবে।

এই অর্থ ফেরত দিতে না পারলে কি ধরণের পরিণতি হতে পারে সে বিষয়টিও ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করেন রুকসানা কিবরিয়া।

তবে চীনের এই সহায়তার বিষয়টি ভারত খুব ভালভাবে নেবে না বলেও মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক।

# তথ্য সুত্র :বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ ওয়েব#

- জাহিদ আহমেদ ও তার স্মৃতি পরিষদ।

ahmedzahid75@gmail.com

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০২০

টাকা ও জীব‌ণের দার্শ‌নিক অর্থ এবং তাত্বিক তুলনা

 

টাকা ও জীব‌ণের দার্শ‌নিক অর্থ এবং তাত্বিক  তুলনা  -

-----------------------------------------------------------

#বুয়েট পাস এমন একজনকে জানি যার বিবাহিত জীবনের ১৩টা বছর শুধু একটা বাচ্চা নেয়ার চেষ্টায় কাটিয়ে দিচ্ছে। তার জীবনে সফলতা আছে কিন্তু পূর্ণতা নাই।


#ব্যাংকের এ,জি,এম এমন একজনকে জানি যার বউ, দুইটা বাচ্চা রেখে আরেকজনের সাথে পালিয়ে গেছে।তার জীবনে সফলতা পূর্ণতা সবই ছিলো কিন্তু ভালোবাসাটা কপালে জুটেনি।


#এম,বি,এ পাশ করা একজনকে চিনি, লেখা পড়া শেষ করে ভালো কিছু করার জন্যে চলে যান দেশের বাহিরে , তারপর বিবাহের প্রস্তাব দেন ১৪ বছরের ভালোবাসার মানুষটির পরিবারে। শুধুমাত্র ছেলে প্রবাসী বলে বিবাহ দেননি। ভালো চাকুরী মানেই কি সব কিছু??


#প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করা এক মেয়ের গল্পটা জানি, কি নিদারুণ অত্যাচার সহ্য করে একদিন গলায় বিষ ঢেলে দিলো। ভালোবাসার জন্যে ঘর ছেড়েছিলো, সফলতা আসেনি কখনও।


#দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েটার গল্পটা জানি।শুধু গায়ের রঙটা কালো বলে প্রেমিকের বাবা মায়ের হাজারো অবহেলার কথা মাথায় তুলে নিয়ে রিলেশনটা ব্রেকাপ করতে হয়েছিলো। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়েও সে সুখী হতে পারছে না।


#ক্যারিয়ার গঠনের জন্য যে মেয়ে বাবা মাকে বিয়ের কথা উচ্চারণ করতে দেয়নি, সে মেয়েটির শেষ পর্যন্ত বিয়েই হয়নি। টাকা পয়সা সব আছে কিন্তু স্বামী সংসার নেই।


#চাকুরী না পাওয়া তরুণের গল্পটাও করুণ। বেকার থাকার সময়ে প্রেমিকার বিয়ের আয়োজনটা থামাতে পারে নাই। চাকুরীটা হাতে পাওয়ার আগেই বাবা মারা গেলো। "সফলতা মানেই চাকরী " বাক্যটা তার কাছে সম্পূর্ণ মিথ্যা।


#একজন প্রফেসরের সাথে আমার কথা হয়েছিলো। তিনি বলেছিলো.... বিবাহের চার বছর পর থেকে স্বামী অসুস্থ। আজ বারো বছর হলো দুই সন্তান ও অসুস্থ স্বামী নিয়ে সংসার করছি। জীবনে কি পেলাম? সবই ছিলো, ভালো চাকুরী, দুই সন্তান। শুধু অর্থই জীবনের সব কিছু এ কথা তার কাছে হাস্যকর।


#একজন সংসার চালা‌তে হিম‌সিম খায় টাকার জন্য তবুও সংসা‌রের বেী বাচ্চা আর মা ভাই‌কে নি‌য়ে শা‌ন্তি‌তেই অা‌ছে ! কি হ‌বে ঐ টাকার আধিক্য দি‌য়ে ?


#একজন অ‌নেক টাকার মা‌লিক , ঢাকায় অন্তত ২০ টি বা‌ড়ি প্রাইম লো‌কেস‌নে ,‌ছে‌লেরা সব বি‌দে‌শে থা‌কে , কিড‌নির ডায়া‌লে‌সিস কর‌তে হয় সপ্তা‌হে ৩ বার , দেখাশুনার জন্য কা‌জের লোক অা‌ছে অথচ তি‌নি সব থে‌কেও একা ? কি হ‌বে টাকার মা‌লিক হ‌য়ে ? জীব‌নের কি অর্থ ?


আসলেই জগতে কে সুখে আছে? টাকায় সুখ দিয়েছে কয়জনকে? জীবনে সফলতা মানেই কি সুখ? একটা জীবনে সুখী হয়ে মারা গেছে ক-জন!!


সুখী দেখেছিলাম আমার এলাকার রুস্তম পাগলাকে, সে এক বেলা পেট ভরে খেয়ে কি আয়েশী হাসিটাই না হেসেছিলো!! শুধু ভরা পেটেই যে সুখে থাকতে পারে তার চেয়ে সুখী আর কেও নাই!! 


আমরা যারা মানুষ, তাদের মন ভরে সুখ কখনো আসে না। আমরা কখনো পরিপূর্নভাবে সুখীও হতে পারি না।।

বাস্তবতাগুলো বড় ফ্যাকাশে, স্বপ্নের মতো রঙিন হয় না।

একটু সুখের জন্যে অনেক কিছুর দরকার নেই শুধুমাত্র মনটা একটু ভালো করুন, সৃষ্টিকর্তার তরে নিজেকে সপে দিন, আর কাউকে ঠকাবেন না।

সুখী হবেন অবশ্যই।

--সংগৃহীত---


- জা‌হিদ আহ‌মেদ ও তার স্মৃ‌তি প‌রিষদ।

ahmedzahid75@gmail.com

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

আরবি মহররম মাস নবীজির নাতি ইমাম হোসাইনের সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্বত্যাগের মর্মস্পর্ষি ঘটনার মাস আমাদেরকে সঠিক ও সততার শিক্ষা দেয়

 

#কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস

#যারা হোসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ পাক তাদেরকে ভালবাসেন 

১. কে ছিলেন হজরত হোসাইন (রা.)? 

প্রথমত তিনি ছিলেন রাসূল (সা.)-এর প্রিয়তম নাতি। মা ফাতিমা ও হজরত আলী (রা.)-এর কলিজার টুকরা। তিনি হলেন বেহেশতি যুবকদের সর্দার। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে এ দুজনকে (হাসান ও হোসাইন) মুহব্বত করল, সে আমাকে মুহব্বত করল। আর যে এদের সঙ্গে দুশমনি করল, সে আমার সঙ্গে দুশমনি করল।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি হোসাইন থেকে এবং হোসাইন আমার থেকে। আল্লাহ পাক তাদের ভালোবাসেন, যারা হোসাইনকে ভালোবাসে। ঐতিহাসিক কারবালা সত্যের দিশারি হয়ে মুমিন-মুসলিমের অন্তরে আজো জাগ্রত। কেয়ামত পর্যন্ত অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে কারবালার আদর্শ আত্মত্যাগের প্রেরণা হয়ে থাকবে। নামধারী মুসলমান ইয়াজিদ বাহিনীর ২২ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ৭২ জন সঙ্গীসহ প্রাণ বিসর্জন দিলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে ইমানি দায়িত্ব পালন করলেন। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু ইসলাম বৃক্ষের মূলে ঢেলে বৃক্ষটিকে চির সজীব রাখার জন্য চেষ্টা করলেন। রাসূল (সা.)-এর পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করা হল।  বেহেশতবাসীদের সর্দারকে হত্যা করে যারা মুসলমানিত্ব দাবি করে ও বেহেশত লাভের প্রত্যাশা করে তাদের চেয়ে বড় আহমক আর কে আছে? ইমাম হোসাইন (রা.) জীবনের শেষ মুহূর্তে  ইয়াজিদের সৈন্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমাকে হত্যা করলে আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবে? কী জবাব দেবে বিচার দিবসে রাসূল (সা.)-এর কাছে? তোমাদের মাঝে কি একজন মুসলমানও নেই? বর্তমানেও একশ্রেণির মুসলিম দেখা যায়, যারা ইয়াজিদের পক্ষে সাফাই গায়। ইমানের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে কারবালার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চায়। তাদের জানা উচিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি আমার পরে দুটি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি, প্রথমটি হল আল-কোরআন, দ্বিতীয়টি আমার ‘আহলে বায়েত’। আল্লাহর কোরআন ও আমার আহলে বায়েত একে অপর থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না। যারা এ দুটি জিনিসকে আঁকড়ে থাকবে, তারা কেয়ামতের দিন হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে মিলিত হবে এবং এ দু’বস্তু থেকে দূরে থাকলে ধ্বংস হয়ে যাবে।

-------------------------------------------------------------------

২. ইমাম হোসাইন কারবালা প্রান্তরে নেমে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ এখানে দু;খ ও বালা মুছিবতে স্থান। নেমে পড়, এখানেই আমাদের অবতরণে, রক্ত ঝরানোর এবং আমাদের কবরস্থান। ‘

এরপর সবাই নেমে পড়লেন। হোর এবং তার সঙ্গীরা অন্য এক দিকে তাঁবু ফেললো।

ইমাম হোসাইন (রাঃ)  নিজের করুণ পরিণতির কথা আগে হতেই জানতেন তাই অন্যদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধের পূর্ব হতেই নির্দেশ দেন,

‘ হে উম্মে কুলসুম, হে যয়নব, হে ফাতেমা, হে রোবাব, সাবধান! আমি যখন নিহত হবো, তখন যেনো গায়ের কাপড় ছিন্ন না করো। চেহারায় যেনো আঘাত না কর। এমন কথা মুখ দিয়ে না বলো যা আল্লাহ্‌র অপছন্দনী। ‘

উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ইমাম হোসাইন (রাঃ)  এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওমর বিন সা’দকে সেনা অধিনায়ক ঘোষণা করে চার হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে কুফা হতে পাঠায়। এই বাহিনী হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)  এর গতিরোধ করে পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

একের পর এক সেনাদল পাঠাতে থাকে জিয়াদ। যারফলে ৬ মোহররমের সময় সেনাসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার জন আর ওইদিকে ইমাম হোসাইনের পক্ষে রয়েছে সর্বসাকুল্যে শ খানেক মানুষ।

তবে সেদিন মহানবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের অনুরোধে প্রথম দিন যুদ্ধবিরতী ঘোষণা করা হয়। ইমাম হোসাইন তাঁর সাথে আগত অনেককেই অনুরোধ করেন ফিরে যেতে তবে তাঁরা কিছুতেই ইমামকে ছেড়ে নতুন জীবন গড়তে রাজি হোন নি। সেই রাতটি ইবাদাত, মোনাজাতে কাটিয়ে দেয়া হয়। 

---------------------------------------------------------------------

৩.

কারবালা সংশ্লিষ্ট ইতিহাস সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষেপে জুবাইর ইবনে বাক্কার (রহ.) বলেন,

 হোসাইন ইবনে আলী (রা.) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের ৫ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আর আশুরার জুমার দিনে ৬১ হিজরিতে তিনি শহীদ হন।

তাকে সিনান ইবনে আবি আনাস নাখায়ি হত্যা করে। 

হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে খাওলি ইবনে ইয়াজিদ আসবাহি হিময়ারি।

 সে হোসাইন ইবনে আলীর মাথা শরীর থেকে দ্বিখণ্ডিত করে এবং ওবায়দুল্লাহর ওরফে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে যায়।  

বলাবাহুল্য যে, কারবালার প্রান্তরে সে অশুভ দিনে পাপিষ্ঠরা যে নির্মমতা ও নির্দয়তার পরিচয় দিয়েছে, তা পাষণ্ড হৃদয়েও ব্যথা ও যাতনা সৃষ্টি করে।

শাহাদাতের পর হজরত হোসাইন (রা.)-এর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শা ও ৩৪টি তরবারির আঘাত দেখা যায়। 

শরীরে ছিল অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন।

তার সঙ্গে মোট ৭২ জনকে হত্যা করে ঘাতকরা।

হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল খিলাফত ব্যবস্থার পুণর্জীবন। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হোসাইনের (রা.) স্ত্রী, ছেলে, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ওরফে এয়াজিদ তাকে বাধা দেন। রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধের উদ্দেশে হজরত হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন।  

 ১/ তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেওয়া হোক।

 ২/ তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেওয়া হোক।

 ৩/ ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক।  

কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ওরফে ইয়াজিদ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণা ভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।

অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ওরফে ইয়াজিদ চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী হজরত হোসাইনকে (রা.) অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে পানির হাহাকার শুরু হয়। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, 

‘আমি যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখল আমার উদ্দেশ্য নয়। খিলাফতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার আমার কাম্য। ’

ইয়াজিদ বাহিনী ১০ মুহাররম তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ অসম যুদ্ধে একমাত্র ছেলে হজরত জায়নুল আবেদিন (রহ.) সহ ৭২ জন শহীদ হন। 

হজরত হোসাইন (রা.) মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান। অবশেষে তিনি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। 

হজরত হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্শা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে পাঠানো হয়। ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে ছিন্ন মস্তক প্রত্যর্পণ করলে কারবালা প্রান্তরে তাকে কবরস্থ করা হয়।

ইতিহাস সাক্ষী, হজরত হোসাইন (রা.)-কে কারবালা প্রান্তরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, মাত্র ৫০ বছরের ব্যবধানে করুণ পন্থায় তাদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

---------------------------------------------------------------

৪.

“শাহ আস্ত হোসাইন, বাদশাহ্ আস্ত হোসাইন

দিন আস্ত হোসাইন, দিন পানাহ আস্ত হোসাইন

সার দাদ না দাদ দাস্ত দার দাস্ত এ ইয়াযীদ

হাক্কা কে বিনায়ে লা ইলা আস্ত হোসাইন”।

“আধ্যাত্বিক জগতের সম্রাট হলেন হোসাইন, বাদশাহ হলেন

হোসাইন, ধর্ম হলেন হোসাইন, ধর্মের আশ্রয় দাতা হলেন

হোসাইন , দিলেন মাথা, না দিলেন হাত ইয়াযীদের হাতে

সত্য তো ইহাই যে, লা-ইলাহার সমস্ত স্তম্ভ হলেন হোসাইন”

- গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)

-------------------------------------------------------------------

৫.

"হুসাইনের তরবারি ছিল 'লা' বা না যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর এই তরবারি দিয়ে তিনি কুফুরিকে বা ঈমানহীনতাকে ধ্বংস করেছেন। কারবালায় তিনি তাওহিদের চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন। এটা আমাদের মুক্তির শ্লোগান। আমরা আসলে হুসাইনের কাছ থেকে তাওহিদের শিক্ষা পেয়েছি।'' 

----আল্লামা ইকবাল (রহঃ)

--------------------------------------------------------------------------

৬.

মহররম

কাজী নজরুল ইসলাম।

নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া -

আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া,

কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে?

সে কাঁদনে আসু আনে সিমারের ও ছোরাতে।

রুদ্র মাতম ওঠে দুনিয়া দামেস্কে -

জয়নালে পরালো এ খুনিয়ারা বেশ কে?

হায় হায় হোসেনা ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়,

তলোয়ার কেঁপে ওঠে এজিদের পাঞ্জায়

উন্ মাদ দুল দুল ছুটে ফেরে মদিনায়

আলীজাদা হোসেনের

দেখা হেথা যদি পায়।

মা ফাতিমা আসমানে কাঁদি খুলি কেশপাশ

বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস

রণে যায় কাসিম ঐ দু'ঘড়ির নওশা

মেহেদির রঙটুকু মুছে গেল সহসা !

‘হায় হায়’ কাঁদে বায় পূরবী ও দখিনা----

‘কঙ্কণ পঁইচি খুলে ফেল সকীনা!’

কাঁদে কে রে কোলে ক’রে কাসিমের কাটা-শির ?

খান্ খান্ হয়ে ক্ষরে বুক-ফাটা নীর !

কেঁদে গেছে থামি’ হেথা মৃত্যু ও রুদ্র,

বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র !

গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা,

“আম্মা গো পানি দাও ফেটে গেল ছাতি মা!”

নিয়ে তৃষা সাহারার,দুনিয়ার হাহাকার,

কারবালা-প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার !

দুই হাত কাটা তবু শের-নর আব্বাস,

পানি আনে মুখে, হাঁকে দুশ্ মনও ‘সাব্বাস্’ !

দ্রিম্ দ্রিম্ বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা,

হাঁকে বীর “শির দেগা,নেহি দেগা আমামা !

কলিজা কাবাব সম ভূনে মরু রোদ্দুর

খাঁ খাঁ করে কারবালা নাই পানি খজ্জুর

মার স্তনে দুধ নাই বাচ্চারা তড়পায়

জিভ চুষে কচি জান থাকে কিরে ধড়টায়

দাও দাও জ্বলে শিরে কারবালা ভাস্কর

কাঁদে বানু পানি দেও মরে যাদু আসগর

পেলনাতো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন

ডাকে মাতা পানি দেব ফিরে আয় বাছা শোন -

পুত্র হীনা আর বিধবার কাঁদনে

ছিড়ে আনে মর্মের বত্রিশ বাধনে

তাম্বুতে সজ্জায় কাঁদে একা জয়নাল

দাদা তেরি ঘর কিয়া বরবাদ পয়মাল

‘হাইদরী-হাঁক-হাঁকি দুলদুল-আসওয়ার

শম্ শের চম্ কায় দুষমনে ত্রাস্ বার।

খ’সে পড়ে হাত হ’তে শত্রুর তরবার,

ভাসে চোখে কিয়ামতে আল্লার দরবার!

নিঃশেষ দুষমন্ ; ও কে রণ-শ্রান্ত

ফোরাতের নীরে নেমে মুছে আঁখি-প্রান্ত ?

কোথা বাবা আস্ গর? শোকে বুক-ঝাঁঝরা

পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাঁজরা !

ধুঁকে ম’লো আহা তবু পানি এক কাৎরা

দেয় নি রে বাছাদের মুখে কম্ জাত্ রা !

অঞ্জলি হ’তে পানি প’ড়ে গেল ঝর্-ঝর্,

লুটে ভূমে মহাবাহু খঞ্জর-জর্জ্জর !

হল্ কুমে হানে তেগ ও কে ব’সে ছাতিতে ?

--আফ্ তাব ছেয়ে নিল আঁধিয়ারা রাতিতে ।

‘আস্ মান’ ভ’রে গেল গোধূলিতে দুপুরে,

লাল নীল খুন ঝরে কুফরের উপরে !

বেটাদের লোহু-রাঙা পিরাহান-হাতে,আহ্-

‘আরশের’ পায়া ধরে,কাঁদে মাতা ফাতেমা,

“এয়্ খোদা বদ্ লাতে বেটাদের রক্তের

মার্জ্জনা কর গোনাহ পাপী কম্ বখতের ।”

কত মোহর্ রম এলো,গেল চ’লে বহু কাল-

ভুলিনি গো আজো সেই শহীদের লোহু লাল !

মুসলিম তোরা আজ জয়নাল আবেদীন

ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা কেঁদে তাই যাবে দিন

ফিরে এল আজ সেই মহরম মাহিনা

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা।

উষ্ণীষ কোরআনের হাতে তেগ আরবীর

দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শীর।

তবে শোন ঐ শোন বাজে কোথা দামামা

শমশের হাতে নাও বাধ শিরে আমামা

বেজেছে নাকাড়া হাঁকে নাকিবের তুর্য

হুঁশিয়ার ইসলাম ডুবে তব সূর্য

জাগো ওঠো মুসলিম হাঁকো হায়দারী হাঁক

শহীদের দিলে সব লালে লাল হয়ে যাক।

নওশার সাজ নাও খুন খচা অস্তিন

ময়দানে লুটাতেরে লাশ এই খাস দিন

হাসানের মত পিব পিয়ালা সে জহরের

হোসেনের মত নিব বুকে ছুরি কহরের

আসগর সম দেব বাচ্চাদের কুরবান

জালিমের দাদ নেব দেব আজগোর জান

সখিনার শ্বেত বাস দেব মাতা কন্যায়

কাশিমের মত দেব জান রুধি অন্যায়

মহরম কারবালা কাঁদো হায় হোসেনা

দেখ মরু সূর্য এ খুন যেন শোষে না।

---------------------------------------------------------------------

৭.

ঢাকার  ঐতিহাসিক  হোসাই‌নি দালা‌নের ইতিহাস ইমাম হোসাইনের  আত্বত্যাগকে বার  বার  মনে  করিয়ে দেয়  -


Add caption






ঢাকার না‌জিমু‌দ্দিন রোডস্হ হোসাই‌নি দালা‌নে ইমাম হোসাইন কে শ্রদ্ধায় স্মরন করা হয় ।

প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো এ স্থাপনা মোগল আমলের ঐতিহ্যের নিদর্শন। মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়।[১] এর নির্মাণকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। ইমামবাড়ার দেয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায়, শাহ সুজার সুবেদারির সময় তাঁর এক নৌ-সেনাপতি মীর মুরাদ এটি হিজরী ১০৫২ সনে (১৬৪২ খ্রিস্টাব্দ) সৈয়দ মীর মোরাদ কর্তৃক নির্মিত হয়।তিনি প্রথমে তাজিয়া কোণা নির্মাণ করেন। ইমামবাড়া তারই পরিবর্ধিত আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর 'বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ' বইয়ে ভবনের দেয়ালে লাগানো শিলালিপির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পরীক্ষার পর দেখেছেন ওই শিলালিপিটি নকল নয়। শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে নির্মাতা হিসেবে মীর মুরাদের নাম। ঐতিহাসিক এম হাসান দানীও বলেছেন, 'মীর মুরাদই এখানে প্রথম ছোট আকারের একটি ইমামবাড়া স্থাপন করেছিলেন। পরে এটি ভেঙে যায় এবং নায়েব-নাজিমরা নতুন করে তা নির্মাণ করেন।ইতিহাসবিদ জেমস টেলর তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন, ১৮৩২ সালেও আদি ইমামবাড়া টিকে ছিল। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দুই দফায় ইমামবাড়ার সংস্কার হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি প্রায় বিধ্বস্ত হয়।পরে খাজা আহসানউল্লাহ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে তা পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করেন। ১৯৯৫-এ একবার এবং পরবর্তীতে ২০১১ তে পুনর্বার দক্ষিণের পুকুরটির সংস্কার করা হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে পুর্রহোসেনী দালান ইমামবাড়ার সংস্কারসাধন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। ইরান সরকারের উদ্যাগে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে হোসেনী দালানের ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়। ইরান সরকার এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। ইরানের স্থপতিবিদ ও শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। ফলে ইরানের ধর্মীয় স্থাপনার বাহ্যিক রূপ ও নান্দনিকতা এ সংস্কার কাজে প্রতিফলিত হয়েছে। মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সংস্কারের আগে ভেতরে রং-বেরঙের নকশা করা কাচের মাধ্যমে যে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন আয়াত ও মুদ্রা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। একইভাবে এর পূর্বদিকের ফটকে এবং উত্তর দিকের চৌকোনা থামগুলোয় আয়াত ও সুরা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। টাইলসগুলো ইরান থেকে আমদানি করা এবং এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইরানের ধর্মীয় শিল্পকলা ক্যালিগ্রাফি। ইরানের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনায় এ ধরনের টাইলস রয়েছে বলে জানা যায়। 

- জা‌হিদ আহ‌মেদ  ও তার স্মৃ‌তি প‌রিষদ।

ahmedzahid75@gmail.com





ইসলামিক /মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি

 ইসলাম‌িক  বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি  --------------------------------------------------------------- পা‌কিস্তান , সৌ‌দি আর‌ব ...