শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

আরবি মহররম মাস নবীজির নাতি ইমাম হোসাইনের সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্বত্যাগের মর্মস্পর্ষি ঘটনার মাস আমাদেরকে সঠিক ও সততার শিক্ষা দেয়

 

#কারবালার হৃদয় বিদারক ইতিহাস

#যারা হোসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ পাক তাদেরকে ভালবাসেন 

১. কে ছিলেন হজরত হোসাইন (রা.)? 

প্রথমত তিনি ছিলেন রাসূল (সা.)-এর প্রিয়তম নাতি। মা ফাতিমা ও হজরত আলী (রা.)-এর কলিজার টুকরা। তিনি হলেন বেহেশতি যুবকদের সর্দার। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে এ দুজনকে (হাসান ও হোসাইন) মুহব্বত করল, সে আমাকে মুহব্বত করল। আর যে এদের সঙ্গে দুশমনি করল, সে আমার সঙ্গে দুশমনি করল।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি হোসাইন থেকে এবং হোসাইন আমার থেকে। আল্লাহ পাক তাদের ভালোবাসেন, যারা হোসাইনকে ভালোবাসে। ঐতিহাসিক কারবালা সত্যের দিশারি হয়ে মুমিন-মুসলিমের অন্তরে আজো জাগ্রত। কেয়ামত পর্যন্ত অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে কারবালার আদর্শ আত্মত্যাগের প্রেরণা হয়ে থাকবে। নামধারী মুসলমান ইয়াজিদ বাহিনীর ২২ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ৭২ জন সঙ্গীসহ প্রাণ বিসর্জন দিলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে ইমানি দায়িত্ব পালন করলেন। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু ইসলাম বৃক্ষের মূলে ঢেলে বৃক্ষটিকে চির সজীব রাখার জন্য চেষ্টা করলেন। রাসূল (সা.)-এর পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করা হল।  বেহেশতবাসীদের সর্দারকে হত্যা করে যারা মুসলমানিত্ব দাবি করে ও বেহেশত লাভের প্রত্যাশা করে তাদের চেয়ে বড় আহমক আর কে আছে? ইমাম হোসাইন (রা.) জীবনের শেষ মুহূর্তে  ইয়াজিদের সৈন্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমাকে হত্যা করলে আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবে? কী জবাব দেবে বিচার দিবসে রাসূল (সা.)-এর কাছে? তোমাদের মাঝে কি একজন মুসলমানও নেই? বর্তমানেও একশ্রেণির মুসলিম দেখা যায়, যারা ইয়াজিদের পক্ষে সাফাই গায়। ইমানের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে কারবালার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চায়। তাদের জানা উচিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি আমার পরে দুটি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি, প্রথমটি হল আল-কোরআন, দ্বিতীয়টি আমার ‘আহলে বায়েত’। আল্লাহর কোরআন ও আমার আহলে বায়েত একে অপর থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না। যারা এ দুটি জিনিসকে আঁকড়ে থাকবে, তারা কেয়ামতের দিন হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে মিলিত হবে এবং এ দু’বস্তু থেকে দূরে থাকলে ধ্বংস হয়ে যাবে।

-------------------------------------------------------------------

২. ইমাম হোসাইন কারবালা প্রান্তরে নেমে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ এখানে দু;খ ও বালা মুছিবতে স্থান। নেমে পড়, এখানেই আমাদের অবতরণে, রক্ত ঝরানোর এবং আমাদের কবরস্থান। ‘

এরপর সবাই নেমে পড়লেন। হোর এবং তার সঙ্গীরা অন্য এক দিকে তাঁবু ফেললো।

ইমাম হোসাইন (রাঃ)  নিজের করুণ পরিণতির কথা আগে হতেই জানতেন তাই অন্যদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধের পূর্ব হতেই নির্দেশ দেন,

‘ হে উম্মে কুলসুম, হে যয়নব, হে ফাতেমা, হে রোবাব, সাবধান! আমি যখন নিহত হবো, তখন যেনো গায়ের কাপড় ছিন্ন না করো। চেহারায় যেনো আঘাত না কর। এমন কথা মুখ দিয়ে না বলো যা আল্লাহ্‌র অপছন্দনী। ‘

উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ইমাম হোসাইন (রাঃ)  এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওমর বিন সা’দকে সেনা অধিনায়ক ঘোষণা করে চার হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে কুফা হতে পাঠায়। এই বাহিনী হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)  এর গতিরোধ করে পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

একের পর এক সেনাদল পাঠাতে থাকে জিয়াদ। যারফলে ৬ মোহররমের সময় সেনাসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার জন আর ওইদিকে ইমাম হোসাইনের পক্ষে রয়েছে সর্বসাকুল্যে শ খানেক মানুষ।

তবে সেদিন মহানবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের অনুরোধে প্রথম দিন যুদ্ধবিরতী ঘোষণা করা হয়। ইমাম হোসাইন তাঁর সাথে আগত অনেককেই অনুরোধ করেন ফিরে যেতে তবে তাঁরা কিছুতেই ইমামকে ছেড়ে নতুন জীবন গড়তে রাজি হোন নি। সেই রাতটি ইবাদাত, মোনাজাতে কাটিয়ে দেয়া হয়। 

---------------------------------------------------------------------

৩.

কারবালা সংশ্লিষ্ট ইতিহাস সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষেপে জুবাইর ইবনে বাক্কার (রহ.) বলেন,

 হোসাইন ইবনে আলী (রা.) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের ৫ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। আর আশুরার জুমার দিনে ৬১ হিজরিতে তিনি শহীদ হন।

তাকে সিনান ইবনে আবি আনাস নাখায়ি হত্যা করে। 

হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে খাওলি ইবনে ইয়াজিদ আসবাহি হিময়ারি।

 সে হোসাইন ইবনে আলীর মাথা শরীর থেকে দ্বিখণ্ডিত করে এবং ওবায়দুল্লাহর ওরফে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে যায়।  

বলাবাহুল্য যে, কারবালার প্রান্তরে সে অশুভ দিনে পাপিষ্ঠরা যে নির্মমতা ও নির্দয়তার পরিচয় দিয়েছে, তা পাষণ্ড হৃদয়েও ব্যথা ও যাতনা সৃষ্টি করে।

শাহাদাতের পর হজরত হোসাইন (রা.)-এর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শা ও ৩৪টি তরবারির আঘাত দেখা যায়। 

শরীরে ছিল অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন।

তার সঙ্গে মোট ৭২ জনকে হত্যা করে ঘাতকরা।

হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল খিলাফত ব্যবস্থার পুণর্জীবন। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হোসাইনের (রা.) স্ত্রী, ছেলে, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ওরফে এয়াজিদ তাকে বাধা দেন। রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধের উদ্দেশে হজরত হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন।  

 ১/ তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেওয়া হোক।

 ২/ তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেওয়া হোক।

 ৩/ ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক।  

কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ওরফে ইয়াজিদ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণা ভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।

অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ওরফে ইয়াজিদ চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী হজরত হোসাইনকে (রা.) অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে পানির হাহাকার শুরু হয়। তিনি ইয়াজিদ বাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, 

‘আমি যুদ্ধ করতে আসিনি, এমনকি ক্ষমতা দখল আমার উদ্দেশ্য নয়। খিলাফতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার আমার কাম্য। ’

ইয়াজিদ বাহিনী ১০ মুহাররম তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ অসম যুদ্ধে একমাত্র ছেলে হজরত জায়নুল আবেদিন (রহ.) সহ ৭২ জন শহীদ হন। 

হজরত হোসাইন (রা.) মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান। অবশেষে তিনি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। 

হজরত হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্শা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে পাঠানো হয়। ইয়াজিদ ভীত ও শঙ্কিত হয়ে ছিন্ন মস্তক প্রত্যর্পণ করলে কারবালা প্রান্তরে তাকে কবরস্থ করা হয়।

ইতিহাস সাক্ষী, হজরত হোসাইন (রা.)-কে কারবালা প্রান্তরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, মাত্র ৫০ বছরের ব্যবধানে করুণ পন্থায় তাদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

---------------------------------------------------------------

৪.

“শাহ আস্ত হোসাইন, বাদশাহ্ আস্ত হোসাইন

দিন আস্ত হোসাইন, দিন পানাহ আস্ত হোসাইন

সার দাদ না দাদ দাস্ত দার দাস্ত এ ইয়াযীদ

হাক্কা কে বিনায়ে লা ইলা আস্ত হোসাইন”।

“আধ্যাত্বিক জগতের সম্রাট হলেন হোসাইন, বাদশাহ হলেন

হোসাইন, ধর্ম হলেন হোসাইন, ধর্মের আশ্রয় দাতা হলেন

হোসাইন , দিলেন মাথা, না দিলেন হাত ইয়াযীদের হাতে

সত্য তো ইহাই যে, লা-ইলাহার সমস্ত স্তম্ভ হলেন হোসাইন”

- গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)

-------------------------------------------------------------------

৫.

"হুসাইনের তরবারি ছিল 'লা' বা না যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর এই তরবারি দিয়ে তিনি কুফুরিকে বা ঈমানহীনতাকে ধ্বংস করেছেন। কারবালায় তিনি তাওহিদের চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন। এটা আমাদের মুক্তির শ্লোগান। আমরা আসলে হুসাইনের কাছ থেকে তাওহিদের শিক্ষা পেয়েছি।'' 

----আল্লামা ইকবাল (রহঃ)

--------------------------------------------------------------------------

৬.

মহররম

কাজী নজরুল ইসলাম।

নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া -

আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া,

কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে?

সে কাঁদনে আসু আনে সিমারের ও ছোরাতে।

রুদ্র মাতম ওঠে দুনিয়া দামেস্কে -

জয়নালে পরালো এ খুনিয়ারা বেশ কে?

হায় হায় হোসেনা ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়,

তলোয়ার কেঁপে ওঠে এজিদের পাঞ্জায়

উন্ মাদ দুল দুল ছুটে ফেরে মদিনায়

আলীজাদা হোসেনের

দেখা হেথা যদি পায়।

মা ফাতিমা আসমানে কাঁদি খুলি কেশপাশ

বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস

রণে যায় কাসিম ঐ দু'ঘড়ির নওশা

মেহেদির রঙটুকু মুছে গেল সহসা !

‘হায় হায়’ কাঁদে বায় পূরবী ও দখিনা----

‘কঙ্কণ পঁইচি খুলে ফেল সকীনা!’

কাঁদে কে রে কোলে ক’রে কাসিমের কাটা-শির ?

খান্ খান্ হয়ে ক্ষরে বুক-ফাটা নীর !

কেঁদে গেছে থামি’ হেথা মৃত্যু ও রুদ্র,

বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র !

গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা,

“আম্মা গো পানি দাও ফেটে গেল ছাতি মা!”

নিয়ে তৃষা সাহারার,দুনিয়ার হাহাকার,

কারবালা-প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার !

দুই হাত কাটা তবু শের-নর আব্বাস,

পানি আনে মুখে, হাঁকে দুশ্ মনও ‘সাব্বাস্’ !

দ্রিম্ দ্রিম্ বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা,

হাঁকে বীর “শির দেগা,নেহি দেগা আমামা !

কলিজা কাবাব সম ভূনে মরু রোদ্দুর

খাঁ খাঁ করে কারবালা নাই পানি খজ্জুর

মার স্তনে দুধ নাই বাচ্চারা তড়পায়

জিভ চুষে কচি জান থাকে কিরে ধড়টায়

দাও দাও জ্বলে শিরে কারবালা ভাস্কর

কাঁদে বানু পানি দেও মরে যাদু আসগর

পেলনাতো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন

ডাকে মাতা পানি দেব ফিরে আয় বাছা শোন -

পুত্র হীনা আর বিধবার কাঁদনে

ছিড়ে আনে মর্মের বত্রিশ বাধনে

তাম্বুতে সজ্জায় কাঁদে একা জয়নাল

দাদা তেরি ঘর কিয়া বরবাদ পয়মাল

‘হাইদরী-হাঁক-হাঁকি দুলদুল-আসওয়ার

শম্ শের চম্ কায় দুষমনে ত্রাস্ বার।

খ’সে পড়ে হাত হ’তে শত্রুর তরবার,

ভাসে চোখে কিয়ামতে আল্লার দরবার!

নিঃশেষ দুষমন্ ; ও কে রণ-শ্রান্ত

ফোরাতের নীরে নেমে মুছে আঁখি-প্রান্ত ?

কোথা বাবা আস্ গর? শোকে বুক-ঝাঁঝরা

পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাঁজরা !

ধুঁকে ম’লো আহা তবু পানি এক কাৎরা

দেয় নি রে বাছাদের মুখে কম্ জাত্ রা !

অঞ্জলি হ’তে পানি প’ড়ে গেল ঝর্-ঝর্,

লুটে ভূমে মহাবাহু খঞ্জর-জর্জ্জর !

হল্ কুমে হানে তেগ ও কে ব’সে ছাতিতে ?

--আফ্ তাব ছেয়ে নিল আঁধিয়ারা রাতিতে ।

‘আস্ মান’ ভ’রে গেল গোধূলিতে দুপুরে,

লাল নীল খুন ঝরে কুফরের উপরে !

বেটাদের লোহু-রাঙা পিরাহান-হাতে,আহ্-

‘আরশের’ পায়া ধরে,কাঁদে মাতা ফাতেমা,

“এয়্ খোদা বদ্ লাতে বেটাদের রক্তের

মার্জ্জনা কর গোনাহ পাপী কম্ বখতের ।”

কত মোহর্ রম এলো,গেল চ’লে বহু কাল-

ভুলিনি গো আজো সেই শহীদের লোহু লাল !

মুসলিম তোরা আজ জয়নাল আবেদীন

ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা কেঁদে তাই যাবে দিন

ফিরে এল আজ সেই মহরম মাহিনা

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা।

উষ্ণীষ কোরআনের হাতে তেগ আরবীর

দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শীর।

তবে শোন ঐ শোন বাজে কোথা দামামা

শমশের হাতে নাও বাধ শিরে আমামা

বেজেছে নাকাড়া হাঁকে নাকিবের তুর্য

হুঁশিয়ার ইসলাম ডুবে তব সূর্য

জাগো ওঠো মুসলিম হাঁকো হায়দারী হাঁক

শহীদের দিলে সব লালে লাল হয়ে যাক।

নওশার সাজ নাও খুন খচা অস্তিন

ময়দানে লুটাতেরে লাশ এই খাস দিন

হাসানের মত পিব পিয়ালা সে জহরের

হোসেনের মত নিব বুকে ছুরি কহরের

আসগর সম দেব বাচ্চাদের কুরবান

জালিমের দাদ নেব দেব আজগোর জান

সখিনার শ্বেত বাস দেব মাতা কন্যায়

কাশিমের মত দেব জান রুধি অন্যায়

মহরম কারবালা কাঁদো হায় হোসেনা

দেখ মরু সূর্য এ খুন যেন শোষে না।

---------------------------------------------------------------------

৭.

ঢাকার  ঐতিহাসিক  হোসাই‌নি দালা‌নের ইতিহাস ইমাম হোসাইনের  আত্বত্যাগকে বার  বার  মনে  করিয়ে দেয়  -


Add caption






ঢাকার না‌জিমু‌দ্দিন রোডস্হ হোসাই‌নি দালা‌নে ইমাম হোসাইন কে শ্রদ্ধায় স্মরন করা হয় ।

প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো এ স্থাপনা মোগল আমলের ঐতিহ্যের নিদর্শন। মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়।[১] এর নির্মাণকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। ইমামবাড়ার দেয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায়, শাহ সুজার সুবেদারির সময় তাঁর এক নৌ-সেনাপতি মীর মুরাদ এটি হিজরী ১০৫২ সনে (১৬৪২ খ্রিস্টাব্দ) সৈয়দ মীর মোরাদ কর্তৃক নির্মিত হয়।তিনি প্রথমে তাজিয়া কোণা নির্মাণ করেন। ইমামবাড়া তারই পরিবর্ধিত আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর 'বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ' বইয়ে ভবনের দেয়ালে লাগানো শিলালিপির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পরীক্ষার পর দেখেছেন ওই শিলালিপিটি নকল নয়। শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে নির্মাতা হিসেবে মীর মুরাদের নাম। ঐতিহাসিক এম হাসান দানীও বলেছেন, 'মীর মুরাদই এখানে প্রথম ছোট আকারের একটি ইমামবাড়া স্থাপন করেছিলেন। পরে এটি ভেঙে যায় এবং নায়েব-নাজিমরা নতুন করে তা নির্মাণ করেন।ইতিহাসবিদ জেমস টেলর তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেন, ১৮৩২ সালেও আদি ইমামবাড়া টিকে ছিল। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দুই দফায় ইমামবাড়ার সংস্কার হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি প্রায় বিধ্বস্ত হয়।পরে খাজা আহসানউল্লাহ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে তা পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করেন। ১৯৯৫-এ একবার এবং পরবর্তীতে ২০১১ তে পুনর্বার দক্ষিণের পুকুরটির সংস্কার করা হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে পুর্রহোসেনী দালান ইমামবাড়ার সংস্কারসাধন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। ইরান সরকারের উদ্যাগে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে হোসেনী দালানের ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়। ইরান সরকার এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। ইরানের স্থপতিবিদ ও শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। ফলে ইরানের ধর্মীয় স্থাপনার বাহ্যিক রূপ ও নান্দনিকতা এ সংস্কার কাজে প্রতিফলিত হয়েছে। মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সংস্কারের আগে ভেতরে রং-বেরঙের নকশা করা কাচের মাধ্যমে যে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন আয়াত ও মুদ্রা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। একইভাবে এর পূর্বদিকের ফটকে এবং উত্তর দিকের চৌকোনা থামগুলোয় আয়াত ও সুরা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। টাইলসগুলো ইরান থেকে আমদানি করা এবং এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইরানের ধর্মীয় শিল্পকলা ক্যালিগ্রাফি। ইরানের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনায় এ ধরনের টাইলস রয়েছে বলে জানা যায়। 

- জা‌হিদ আহ‌মেদ  ও তার স্মৃ‌তি প‌রিষদ।

ahmedzahid75@gmail.com





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ইসলামিক /মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি

 ইসলাম‌িক  বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি  --------------------------------------------------------------- পা‌কিস্তান , সৌ‌দি আর‌ব ...