সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১

শবে বরাত বা নিসফে শাবান পাল‌নে কুরআন ও বুযুর্গ‌দের ‌দৃ‌ষ্টি‌তে যৌ‌ক্তিকতা

শবে বরাত বা নিসফে শাবান পাল‌নের কুরআন ও বুযুর্গ‌দের ‌দৃ‌ষ্টি‌তে যৌ‌ক্তিকতা

শবে বরাত বা মধ্য-শা'বান (আরবি: نصف شعبان‎, প্রতিবর্ণী. নিসফে শাবান‎) বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরী শা'বান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ রাত। উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান নফল ইবাদাতের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করেন। অনেক অঞ্চলে, এই রাতে তাঁদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিসগ্রন্থের কোনো কোনো হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়। হাদিসগুলোর সনদ বিভিন্ন মানের এবং এবিষয়ে মতভেদ বিদ্যমান। হাদিস শাস্ত্রে 'শবে বরাত' বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো "নিসফ শাবান" বা "লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান" তথা "শা'বান মাসের মধ্য রজনী"। একটি হাদীসে বলা হয়েছে,

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।

— (ইবনু মাজাহ, আস- সুনান ১/৪৪৫; বাযযার, আল-মুসনাদ ১/১৫৭, ২০৭, ৭/১৮৬; আহমদ ইবনু হাম্বল, আল-মুসনাদ ২/১৭৬; ইবনু আবি আসিম, আস-সুন্নাহ,পৃ ২২৩-২২৪; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ১২/৪৮১; তাবরানী, আল-মুজাম আল-কাবীর, ২০/১০৮, ২২/২২৩; আল-মুজাম আল-আওসাত, ৭/৬৮; বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান, ৩/৩৮১; ইবনু খুযায়মা, কিতাবুত তাওহীদ ১/৩২৫-৩২৬।)[সনদ সহীহ][১][২][৩]

বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্নিত আছে, মুহাম্মাদ (সঃ) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোযা পালন করতেন। শাবান মাসের রোযা ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এমাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনো কখনো প্রায় পুরো শাবান মাসই তিনি নফল সিয়াম পালন করতেন। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

“এ মাসে রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম উঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, আমার রোযা রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”

— (নাসাঈ, আস-সুনান ৪/২০১; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৪৭।[সনদ হাসান][১])

হাদিস অনুসারে এই রাত দোয়া কবুল, ক্ষমা প্রার্থনা সহ আল্লাহ'র কাছে চাওয়ার রাত। যথা:

عليه وسلم : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينـزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا فيقول : ألا من مستغفر فأغفر له ألا من مسترزق فأرزق له ألا من مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر. (رواه ابن ماجه، والبيهقي في شعب الإيمان. وهذا حديث ضعيف لأن في سنده ابن أبي سبرة وهو معروف بوضع الحديث عند المحدثين. المرجع : تحفة الأحوذي بشرح جامع الترمذي وقال ناصر الدين الألباني في هذا الحديث: إنه واه جداً)

অর্থ : আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিবসে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন : আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিয্‌ক প্রার্থনাকারী আমি রিয্‌ক দান করব। আছে কি কোন বিপদে নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থ্যতা দান করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। ফুটনোটঃ [উক্ত হাদিসের রাবী (আবু বকর বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ) বিন আবু সাবরাহ সম্পর্কে ইমামগণ বলেন, তিনি দুর্বল। ২. ইবরাহীম বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে ইবনু হিব্বান সিকাহ বললেও অন্যত্রে তিনি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইমাম যাহাবী তাকে সত্যবাদী বলেছেন।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৮ হাদিসের মান: জাল হাদিস

আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমের হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ অংশে দুনিয়ার আকাশে আসেন। আর প্রতি রাতের মধ্যে শাবান মাসের পনের তারিখের রাতও অন্তর্ভুক্ত। অতএব এ হাদীস মতে অন্যান্য রাতের মত শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার আকাশে আসেন

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ; সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।

শবে বরাতের ইতিহাস

হযরত মুহাম্মদ (সা.) হতে শবে বরাতের ব্যাপারে অনেক হাদীস আমাদের হস্তগত হয়েছে। তবে যেসব হাদীসসমূহ পরিপূর্ণতার আলোকে ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্যতারাখে তা নিম্নে বর্ণিত হল, যথা:

রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন: শা’বান মাসের মধ্য রজনীতে (১৫ ই শা’বানের রাতে) ঘুমিয়ে ছিলাম এমন সময় জিব্রাঈল(আ.)আমার শিয়রে উপস্থিত হয়ে বলল: হে মুহাম্মদ উঠুন! এরপর সে আমাকে শোয়া থেকে উঠালো এবং বাকী কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে বলল: আকাশের দিকে চেয়ে দেখুন! আজ রাতে আসমানের দরজাসমূহ, রহমতের দরজাসমূহ খুলে যাবে এবং খুলে যাবে সকল সুখ, সমৃদ্ধি, ক্ষমা, রুযি, পরিত্রাণ পাওয়া ও পূনর্জ্জিবীত হওয়ার দরজাসমূহ ও আরো অন্যান্য ...।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এ রাতে চতুস্পদ জন্তুর গায়ের চুল ও পশমের পরিমাণ নিজ বান্দাগণকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করবেন। এ রাতে তিনি মৃত্যুর সময় এবং আগামী এক বছরের রিযিক (এখানে সকল নেয়ামতকেই বুঝানো হয়েছে) নির্ধারণ করবেন। হে মুহাম্মদ! যারা এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালাকে পবিত্র ও একক সত্তা যেনে তাঁর যিকির করবে, তাকে রাজি-খুশি করার জন্য নামায-দোয়া পড়বে, পবিত্র কোরআন পাঠ করবে ও অধিক পরিমাণে এস্তগফার করে রাতকে প্রভাবে পৌছাবে তাদের স্থান হবে বেহেশ এবং তারা ইতিপূর্বে যা কিছু (গোনাহ) আঞ্জাম দিয়েছে ও পরবর্তিতে আঞ্জাম দিবে তাও ক্ষমা করে দিবেন...।

দ্বিতীয় হিজরীর ১৫ইশা’বানের মধ্য রাতে উক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হয়। আর তখন থেকেই শবে বরাতের এ রসম-রেওয়াজ প্রচলিত হয়। (ইবনে তাউউস, আলী বিনমুসা, ইকবালুল আ’মাল, পৃ.- ২১২, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক: মুয়াস্সিসাতুল আয়া’লামিলিল মাতবুআ’ত, ১৪১৭ হিজরী। আল্ মাজলিসি, মুহাম্মদ বাকির, বিহরুল আনওয়ার, খণ্ড-৯৮,পৃ.-৪১৩, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক: মুয়াস্সিসাতুল ওয়াফা, ১৪০৩ হিজ)

আমরা এটা জানি যে, এ পৃথিবীতে কোন কিছুই কার্যকারণ ব্যতীত সংঘটিত হয় না। তাই ১৫ই শা’বান ফযিলত মণ্ডিত হওয়ার পেছনেও নিহিত রয়েছে উপযুক্ত কার্যকারণ। আর তা হচ্ছে আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়াতা’য়ালার সর্বশেষ হুজ্জাত, নবী(সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বংশধারার নবম সন্তান ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর শুভ জন্মরাত।

যিনি শেষ যমানায় আবির্ভূত হয়ে বিশ্বকে সমস্ত প্রকার অন্যায়-অত্যাচার, নীপিড়ন-নির্যাতন ও যালিমের যুলুম থেকে রক্ষা করে ন্যায়ের মানদন্ডের আওতায় নিয়ে আসবেন এবং খোদায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। তখন এ পৃথিবীতে থাকবে না কোন প্রকার যুলুম-অত্যাচার, থাকবে না কোন ভেদাভেদ, বাঘ ও ছাগল একই তীরে এক সঙ্গে পানি পান করবে। তখন না বাঘ ছাগলের উপর হামলা করবে আর না ছাগল বাঘকে ভয় পাবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে সে দিন দেখে যাওয়ার তৌফিক দান করুন।

এ রাত ফযিলত মণ্ডিত হবার প্রকৃত কারণ আমারা জানতে পারলাম। পবিত্র মা’সুমিন(আ.)-গণও এ রাত ফযিলত মণ্ডিত হবার প্রকৃত কারণ এই পবিত্র ব্যক্তিত্বের জন্ম গ্রহণের কারণকেই উল্লেখ করেছেন। সাইয়্যেদ বিন তাউস তিনি স্বীয় গ্রন্থে লিখেছেন: যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এত বড় ও সর্বাধিক উত্তম কল্যান বা অনুগ্রহ দান করেছেন সেহেতু প্রতিটি মানুষের উচিৎ সেই মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাঁর শুকরিয়া আদায় করা এবং শরীরের সর্বশেষ শক্তি দিয়ে এই সর্বোত্তম এলাহী নেয়া’মতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। (ইবনে তাউউস, আলীবিন মুসা, ইকবালুল আ’মাল, পৃ.-২০৭ থেকে ২৩৭ পর্যন্ত, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক:মুয়াস্সিসাতুল আয়া’লামি লিল মাতবুআ’ত, ১৪১৭ হিজরী। আল্ মাজলিসি, মুহাম্মদ বাকির, বিহরুল আনওয়ার, খণ্ড-৯৪, পৃ.-৮৫, হা.-৫, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক: মুয়াস্সিসাতুলওয়াফা, ১৪০৩ হিজরী।)

আমরা ১৫ই শা’বানের আমলে লিপিবদ্ধ একটি দোয়ায় পড়ে থাকি যে,

((اللهم بحق ليلتنا هذه و مولودها و حجتك و موعودها التى قرنت الى فضلها فضلا فتمت كلمتك صدقا و عدلا لا مبدل لكلماتك ...))

হে আল্লাহ্! তোমাকে এ রাতের ও এ রাতে জন্মগ্রহণকারীর উছিলা দিয়ে ডাকছি এবং তোমার সত্য ও প্রতিশ্রুত হুজ্জাতের উছিলা ধরছি যে, যার কারণে ফযিলতের উপর ফযিলত দিয়েছো। আর তোমার সত্য ও ন্যায়ের বাণী পরিপূর্ণতায় পৌচেছে এবং তোমার বাণীর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার ক্ষমতা করো নেই। (ইবনে তাউউস, আলীবিন মুসা, ইকবালুল আ’মাল, পৃ.-২১৯, বৈরুত প্রিন্ট, প্রকাশক: মুয়াস্সিসাতুল আয়া’লামিলিল মাতবুআ’ত, ১৪১৭ হিজরী।)

ইমাম মাহদী (আ.ফা.)যে ২৫৫ হিজরীর ১৫ই শা’বানে জন্মগ্রহণ করেছেন তার প্রমাণ শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের অনেক রেওয়ায়েতেই পাওয়া যায় এবং উক্ত হাদীসসমূহে এ বিষয়টিও পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, এ রাতে তাঁর জন্মগ্রহণই হচ্ছে এ রাতের ফযিলতের কারণ। (আল্ কুলাইনী, মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব, আল্ কাফী, খণ্ড-১, পৃ.-৫১৪, তেহরান প্রিন্ট, প্রকাশক: দারুলকুতুবিল ইসলামিইয়্যা, সন ১৩৬৫ ফার্সি। আছ্ ছাদুক, মুহাম্মদ বিন আলী ইবনুল হুসাইন, কামালু্দ্দিন ওয়া তামামুন্ নেয়া’মাত, খণ্ড-২, পৃ.-৪৩২, তেহরান প্রিন্ট, প্রকাশক:দারুল কুতুবিল ইসলামিইয়্যা, সন ১৩৯৫ ফার্সি। সাবরাবি, আব্দুল্লাহ্ বিন মুহাম্মদ, আল্ ইত্তাহাফু বিহুব্বিল আশরাফ, পৃ.-১৭৯। ইবনে ছাব্বাগুল মালিকি, নুরুদ্দিন আলী বিনমুহাম্মদ, আল্ ফুছুলুল মুহিম্মাতু ফি মায়া’রিফাতিল আইম্মাহ্, পৃ.-৩১০।)

আল কুরআন ও হাদীস পাকের আলোকে পবিত্র শবে বরাত

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

অর্থঃ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

সূরা আদ-দুখান (الدّخان), আয়াতঃ ১।

حمٓ

অর্থঃ হা-মীম।

সূরা আদ-দুখান (الدّخان), আয়াতঃ ২। 

وَٱلْكِتَٰبِ ٱلْمُبِينِ

অর্থঃ শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।

সূরা আদ-দুখান (الدّخان), আয়াতঃ ৩। 

إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةٍ مُّبَٰرَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ

অর্থঃ আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।

সূরা আদ-দুখান (الدّخان), আয়াতঃ ৪। 

فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

অর্থঃ এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।

তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) এঁর শানে রিসালাত ও পবিত্র আহলে বাঈত পাক (আঃ) আজিম শান পাকে তাজিম প্রকাশ পূর্বক নিবেদন করছি যে,

পবিত্র ইসলাম ধর্মে আরবী ১২ মাসের অষ্টম মাস শাবান। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি আল-কুরআনের ভাষায়- ليلة مباركة (লাইলাতুম মুবারাকা) বা বরকতময় রজনী, আর  পবিত্র হাদীস পাকের ভাষায়-ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান) বা শাবানের মধ্য রজনী।

পবিত্র শবে বারাআত কি বা কেন ?

“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল-براءت যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল পবিত্র শবে বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শবে বারাআত( شب براءت)

পবিত্র শবে বারাআত কে হাদিস পাকের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”(ليلة النصف من شعبان) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত।

কেউ কেউ “পবিত্র শবে বরাআত” নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত জেহালাত বা মূর্খতা এবং অজ্ঞতার যুক্তি দিয়ে থাকেন। যাহারা মূর্খতা এবং অজ্ঞতার মধ্যে নিমজ্জিত এবং যাহারা সাম্প্রদায়িক গোড়ামীর মধ্যে আছেন। 

তাহাদের চৈতন্যদান এর উদ্দেশ্যেই বিনীত ভাবে নিবেদন করছি, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি আল-কুরআন ও পবিত্র হাদিস পাকে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু আল-কুরআন পাকের এবং পবিত্র  হাদিস পাকে কোথাও কি "নামায" শব্দ আছে?

তাওহীদ কে আমরা ঈমানের শর্ত বলি। কিন্তু আল-কুরআন পাকে এবং পবিত্র  হাদীস পাকের কোথাও তাওহীদ শব্দ নেই। তাই বলে কি তাওহীদ আল-কুরআন এবং পবিত্র হাদীস পাক দিয়ে প্রমাণিত নয়? আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থ বোধক কুরআন হাদিস পাকের উদ্ধৃত শব্দ “সালাত”ই হল নামায। আমরা যাকে তাওহীদ বলি কুরআন হাদীস পাকের একত্ববাদ প্রকাশক সকল শব্দই হল এ তওহীদ।

তেমনি আমরা যাকে “শবে বারাত” বলি তথা শাবানের পনের তারিখের রাত বলে থাকি এই অর্থ বোধক শব্দ পবিত্র হাদিস পাকে পাওয়া গেলে তা’ই হবে শবে বারাআত। আর এই অর্থবোধক পবিত্র হাদীস পাকে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”। সুতরাং তাই হল শবে বারাত।

পবিত্র আল-কুরআন পাকে শবে বরাত বা নিসফে শাবান :

পবিত্র আল-কুরআন পাকে ও নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাবের ভাষ্য-

সূরা দুখানের ১-৪ নং আয়াত পাকে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ

حم-والكتاب المبين- إنا أنزلناه فى ليلة مباركة- إنا كنا منذرين- فيها يفرق كل أمر حكيم-

হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ।

এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য নির্ভরযোগ্য

মুফাসসিরগণের মতামত নিম্নে প্রদত্ত হইলঃ 

১। তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে,

ان انزلناه فى ليلة مباركة هى ليلة القدر او ليلة النصف من شعبان نزل فيها من ام الكتاب من السماء السابعة الى السماء الدنيا انا كنا منذرين-

অর্থাৎঃ নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। 

২। তাফসীরে তাবারী শরীফ পৃষ্ঠা-২২, খন্ড ১০ -এ বর্ণিত আছে যে,

عن محمد بن سوفة, عن عكرمة فى قول الله تبارك وتعالى (فيها يفرق كل أمر حكيم) قال: فى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وتنسخ الأحياء من الأموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم أحد, ولا ينقص منهم أحد.

كذا أخرج ابن جرير وابن منذر وابن أبى حاتم وكذا فى روح المعانى-

মহান আল্লাহ পাকের বাণী فيها يفرق كل أمر حكيم এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না।

অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনুল মুনজির ও ইবনু আবি হাতেম (রাঃ)। এরূপ রেওয়াত ও রুহুল মায়ানীতে আছে।

৩। তাফসীরে কুরতুবী পৃষ্ঠা-১২৬, খন্ড ১৬ এ বর্ণিত আছে যে,

ولها أربعة أسماء: الليلة المباركة, وليلة البراءة, وليلة الصك, وليلة النصف من شعبان-

হযরত ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে-

ক।  লাইলাতুম মুবারাকা,

খ। লাইলাতুল বারাআত 

গ। লাইলাতুছ্ ছাক 

ঘ। লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান।

৪। তাফসীরে বাগভী পৃষ্ঠা-২২৮, খন্ড ৭ -এ বর্ণিত আছে যে,

عن ابن عباس رضى الله عنهما أن الله يقضى الأقضية فى ليلة النصف من شعبان, ويسلمها إلى أربابها فى ليلة القدر- 

অর্থাৎঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন শবে বরাতের রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ঠ দায়িত্ববান ফেরেস্তাদের কাছে ন্যস্ত করেন শবে ক্বদরের রাতে। 

এ রকম ৬৫ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মুবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবান অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথা ও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহের নাম নিম্নে প্রদত্ত হইল। 

(১) তাফসীরে ইবনু আবি হাতেম, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-২১৪। (২) তাফসীরে রুহুল মায়ানী, খণ্ড-২৫, পৃষ্ঠা-১১০। 

(৩) তাফসীরে বাহরুল মুহীত, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৪। 

(৪) তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫৭০। 

(৫) তাফসীরে যাদুল মাছির, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২২। 

(৬) তাফসীরে নাসাফী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩০২। 

(৭) তাফসীরে নিসাপুরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। 

(৮) তাফসীরে কাশ্শাফ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৭২। 

(৯) তাফসীরে নুকুত ওয়াল উয়ূন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০।

(১০) তাফসীরে দুররে মানসূর, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৬৯।

(১১) তাফসীরে খাজেন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৪৩। 

(১২) তাফসীরে আল বোরহান, খণ্ড-২৩, পৃষ্ঠা-১১৬। 

(১৩) তাফসীরে রাযী, খণ্ড-১৭, পৃষ্ঠা-১৩৩। 

(১৪) তাফসীরে আলুসী, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-৪২৪। 

(১৫) তাফসীরে হাক্কী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬। 

(১৬) তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬, পৃষ্ঠা-১২৭। 

(১৭) তাফসীরে সাভী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩০২। 

(১৮) তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৪৬। 

(১৯) তাফসীরে জামিউল বায়ান, খণ্ড-২০, পৃষ্ঠা-১৫১। 

(২০) তাফসীরে নুসূকী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২০। 

(২১) তাফসীরে কাদের, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। 

(২২) তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। 

(২৩) তাফসীরে কাসেমী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। 

(২৪).তাফসীরে কোশাইরী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯০,।

(২৫) তাফসীরে আবু সাউদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৩০। 

(২৬) তাফসীরে আয়াতুল আহকাম, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। 

(২৭) তাফসীরে রুহুল বয়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৯৮। 

(২৮) তাফসীরে কাশেফুল আসরার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৯৪-৯৮।

(২৯) তাফসীরে মাওয়ারদী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১০২। 

(৩০) তাফসীরে সিরাজুম মুনির, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৫৮। 

তাফসিরে রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড ৫৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু উক্ত রুজি রোজগার ও রিজিক বন্টনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার হযরত মিকাঈল (আঃ) এর উপর, কার্যসমূহ ও বন্দেগীর দায়িত্ব ভার ১ম আসমানের ফেরেস্তা হযরত ইসরাইল (আঃ) এর উপর, বিপদাপদ ও দুঃখ দুর্দশায় দূরীকরনের দায়িত্বভার হযরত আযরাইল (আঃ) এর উপর অর্পণ করেন।

পবিত্র শবে বরাতের রজনী যে মুসলিম উম্মার জন্য একটি রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও ফজিলত পূর্ণ রজনী এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সমস্ত মুফাসসিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।

পীরানে পীর দাস্তেগীর গওসূল আজম শায়েখ আবু মুহাম্মদ মহিউদ্দিন আব্দুল ক্বাদের জিলানী আল-হাসানী ওয়াল হুসাইনী (আঃ) পাক তদ্বীয় কিতাব “গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন” এর ১ম খন্ডে-এ ৬৮৪ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন যে,

 قال الله عز وجل حم والكتاب المبين انا انزلناه فى ليلة مباركة قال ابن عباس رضى الله عنهما حم قضى الله ما هو كائن الى يوم القيمة والكتاب المبين يعنى القران- انا انزلناه يعنى القران فى ليلة مباركة هى ليلة النصف من شعبان وهى ليلة البرأة وقال ذالك اكثر المفسرين-

অর্থাৎঃ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- হা-মী-ম প্রকাশ্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের শপথ- যে কুরআন কে আমি মুবারক (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন যে, রোজ কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার আছে- তা মহান আল্লাহ পাক ফয়সালা করে দিয়েছেন। শপথ উজ্জল প্রকাশ্য গ্রন্থ তথা আল-কুরআনের যাকে আমি বরকতময় রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজনীতে নাযিল করেছি- ঐ ১৫ শাবানের রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল বরাআত- এবং অধিকাংশ মোফাসসিরীনে কেরাম এ মত পোষন করেছেন।

পবিত্র হাদীস পাকের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলীলঃ

দলীল নংঃ ১

عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن

অনুবাদঃ হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করেছেন অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতে।

মহান আল্লাহ পাক তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।

সূত্রঃ 

১। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫।

২। মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪।

৩। মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২।

৪।আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬।

৫। আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫।

৬। সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০।

৭। মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩।

৮। মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯।

৯। শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪।

উল্লেখিত পবিত্র হাদীস পাকের সনদ বিষয়ক আলোচনাঃ

১ম হাদীসের সনদ সহীহ, এ জন্য হযরত ইমাম ইবনে হিব্বান একে কিতাবুস সহীহ-এ বর্ণনা করেছেন।

হযরত ইমাম মুনযিরী, ইবনে রজব, কাস্তাল্লানী, যুরকাবী, নুরুদ্দীন হাইসামী (রহঃ) এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এ হাদীস পাকটিকে আমলযোগ্য সহীহ বলেছেন। 

সূত্রঃ দেখুন! তারগীব তারহীব ২/১১৮, ৩/৪৫৯ লাত্বাইফুল মা‘আরিফ ১৫১-৩, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫, শারহুল সাওয়াহিব-১০/৫৬১।


বর্তমানে আহলে হাদীস ভাইদের প্রসিদ্ধ শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানী সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ ৩/১৩৫-১৩৯-এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পরে লেখেন, ‘এ সব রেওয়ায়েতের মাধ্যমে এ হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়।’ এরপর শাইখ আলবানী ঐ সব লোকের বক্তব্য খণ্ডন করেন, যারা কোন ধরনের খোঁজ-খবর ছাড়াই বলে দেন যে লাইলাতুল বরা‘আতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই। তদ্রূপ শাইখ আব্দুর রহমান মুবারকপূরী তুহফাতুল আহওয়াজী -২/৫৩-এ লাইলাতুল বারা‘আতের হাদীসকে আমলযোগ্য প্রমাণিত করেন।

দলীল নংঃ ২

عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )

অনুবাদঃ আমিরুল মুমিনিন ইমামুল মুত্তাক্বীনা ওলীয়ে খোদা ওসীয়ে মুস্তাফা হযরত আলী বিন আবু তালীব (আঃ) থেকে বর্ণিত। দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করেছেন-যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত। তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমা প্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত।

সূত্রঃ

১। সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮।

২। শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২।

উল্লেখিত হাদীস পাকের  সনদ বিষয়ক আলোচনাঃ

হাদীস পাকের সনদ যয়ীফ কিন্তু মুহাদ্দিসীনে কিরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো- ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। দেখুন! 

সূত্রঃ কিতাবুল আযকার-৭, ফাতহুল কাদীর-১/৪৬৭, আল আজবিবাতুল ফাযেলাহ-৫৭।

 عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب

অনুবাদঃ উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন-এক রাতে দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে (মদীনা শরীফের কবরস্থান) গিয়ে আমি হুজুর পাক (দঃ) কে দেখতে পেলাম। হুজুর পাক (দঃ) বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? (তুমি যে তালাশে বের হলে?) তোমার কি মনে হয় মহান আল্লাহ পাক  এবং তাঁর রাসূল (দঃ) তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? (তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রি যাপন করবেন?)

হযরত আয়শা (রাঃ) বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। হুজুর পাক (দঃ) তখন বললেন যখন শাবান মাসের ১৫-ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন মহান আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।

সূত্রঃ ১। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯।

২। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮।

৩। মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯।

উল্লেখিত হাদীস পাকের সনদ বিষয়ক আলোচনাঃ

হাদীস পাকটি আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণ যোগ্য। সকল রাবী সিক্কাত, সনদের মধ্যে ইনক্বিতা থাকায় ইমাম বুখারী (রহঃ) যয়ীফ বলেছেন। 

সূত্রঃ সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ-৩/৩১৮।

দলীল নংঃ ০৩

 ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﺍﻻﺷﻌﺎﺭﻯ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ

ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻟﻴﻄﻠﻊ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ

ﺧﻠﻘﻪ ﺍﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺍﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ ) ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ )

অনুবাদঃ হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রাঃ) দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) হতে বর্ণনা করেন। হুজুর পাক (দঃ) ইরশাদ ফরমান যে, মধ্য শাবানের রাত্রিতে মহান  আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী বষর্ণ করেন এবং তার সমস্ত বান্দাদের কে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।

সূত্রঃ ১। ইবনে মাজাহ শরীফ, পৃষ্ঠা-১০০, হাদীস নং-১৩৮৯।

২। মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫। 

৩। ইমাম বায়হাকী,শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩৮২। 

৪। ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১৩৩, হাদীস নং-২৯। 

৫। মিসবাহুজ জুজাযাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪২, হাদীস নং-৪৮৭।

৬। আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৩য়, হাদীস নং-২৭১৮।

৭। আহলে হাদীস তথা লা- মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দীন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা” এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩১ আরো ৫ টি হাদীস রয়েছে।

দলীল নংঃ ০৪

সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ ইবনে মাজাহ শরীফের ১০০ পৃষ্ঠায় এবং মিশকাত শরীফের ১১৫ পৃষ্ঠায় আমীরুল মু'মিনিন ইমামুল মুত্তাকীন ওলীয়ে খোদা ওসীয়ে মুস্তাফা ইমামে হক হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) হতে মারফু মুত্তাছিল সনদে রেওয়ায়েত করেন- যে, দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ ফরমান যে,

 اذا كانت ليلة النصف من شعبان- فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا- فيقول الا من مستغفرلى فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا كذا حتى يطلع الفجر-

অনুবাদঃ যখন শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র আগমন করে তখন তোমরা রাত্র জাগরণ করতঃ মহান আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী কর এবং এর পূর্ববর্তী দিনে (১৫ তারিখে) রোজা পালন কর। কেননা চৌদ্দ তারিখের সূর্য অস্থ যাওয়া তথা ১৫ তারিখের রাত্র আরম্ভ হওয়ায় সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক দুনিয়ার আসমানে স্বীয় তাজাল্লী প্রকাশ ফরমান। অর্থাৎ দুনিয়া বাসীর প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দান করতঃ দয়াপূর্ণ কুদরতী আওয়াজে আহ্বান করে থাকেন। আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আজকের এ পবিত্র রাত্রে আমি আল্লাহর দরবারে নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। রুজি-রিজিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাদের চাহিদা অনুপাতে রিজিক দানের ফয়সালা করে দিব। কোন বিপদগ্রস্থ লোক বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের বিপদ দূরীভূত করে দিব। এমন আরো বিষয়ে কেউ প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তা সবই তোমাদেরকে দান করব।

মহান আল্লাহ পাক এরূপ করুনাপূর্ণ ঘোষনা সুবহে সাদিক পর্যন্ত চলতে থাকে।

এছাড়াও হাদীসটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত আছেঃ 

সূত্রঃ 

১। শুয়াবুল ঈমান” ৩য় খন্ড পৃষ্ঠা -৩৭৯ হাদীস নং-৩৮২২।

২। মিসবাহুয যুযায” ১ম খন্ড পৃষ্ঠা,-৪৪ হদীস নং-৪৮৬।

৩। মুসনাদে আহমদ” ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা।

পবিত্র শবে বরাতের রজনীতে বিশেষ বা নফল আমলঃ 

মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মহিমান্বিত রাত পবিত্র শবে বরাত। ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিশুদ্ধ জীবন যাপনের জন্য আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভ করার সুযোগ ঘটে এই পবিত্র রাতে। বছর ঘুরে এই পবিত্র রাত আসে সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে।

পবিত্র ইসলাম ধর্মে এই রাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত। পবিত্র এই রাতে একনিষ্ঠ ভাবে মহান আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করলে, আল্লাহ পাকের কাছে নিজের পাপ-গুনাহ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন এবং অনুতপ্ত বান্দাকে গুনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে মাফ করে দেন। ইনশাআল্লাহ। 

তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) এই পবিত্র রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকতে মুসলমানদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। শবে বরাত সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘জিবরাইল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আপনি আপনার উম্মতদের জানিয়ে দিন, তারা যেন পবিত্র শবে বরাতের রাতকে জীবিত রাখে।’ অর্থাৎ তারা যেন ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাতটি কাটিয়ে দেয়।

মহিমান্বিত এই রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহ পাকের দরবার পাকে নিজেদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র আল-কুরআন মজিদ তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবন যাপনের জন্য।

একইসঙ্গে নিজ পিতা-মাতার জন্য, মরহুম আত্মীয়-স্বজনসহ চিরবিদায় নেয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মসজিদ পাক গুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকেই মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থেকে শেষ রাতে সেহরি খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখেন। যাহার যেমন শারীরিক সক্ষমতা আছে তিনি সেভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকবেন। 

শাবান মাসের পরই আসে পবিত্র মাহে রমজান। তাই শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। শবে বরাতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি।

পবিত্র শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবীতেঃ 

“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লাহি তা'য়ালা রাক‘আতাই ছালাতিল লাইলাতিল বারাতি নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার”।

বাংলায় নিয়তঃ- “ আমি ক্বেবলামুখী হয়ে মহান আল্লাহ  পাকের উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দুই 'রাক'আত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।

শবে বরাতের নামাজঃ 

শবে বরাতের নামাজ দু'রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ফজিলাতের ও ছওয়াবের কাজ। এভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই উত্তম।

প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু কালামে পাক তেলাওয়াত ও তাসবিহ্-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহ পাকের দরবার পাকে করুণ ভাবে ফরিয়াদ করে দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে। যাহার যত টুকু শারীরিক ক্ষমতা আছে। 

পবিত্র শবে বরাতে এভাবে নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে। তাই আসুন এই পবিত্র রাতে আমরা বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায় করি।

দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করলেন,

هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على

عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين

ويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم

‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। মহান আল্লাহ পাক অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ দান করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।‘ 

সূত্রঃ শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮।

হযরত ইমাম বাইহাকী (রহঃ) এই হাদীস পাকটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন,

هذا مرسل جيد

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদা ও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওয়ীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে – এগুলো ঠিক নয়।

সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। আল-কুরআন পাক তেলওয়াত করা। দোয়া দরূদ শরীফ পড়া। ইস্‌তেগফার করা। দোয়া করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

পবিত্র শবে বরাতের পরদিন রোযা রাখার বিধানঃ 

সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছেঃ 

 عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر

মওলায়ে কায়েনাত ওলীয়ে খোদা ওসীয়ে মুস্তাফা ইমামে হক হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (আঃ) থেকে বর্ণিত, 

দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, ১৫ ই শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পাক প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্‌হে সাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।

সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪ শু’আবুল ঈমান-৩৮২৩-২২। 

তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

১৫  ই শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিক্‌হের একাধিক কিতাবেই এদিনে রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষ ভাবে এ দিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী (দাঃবাঃ) তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে পবিত্র শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের ১৫ ই তারিখে রোযা রাখা। গভীর ভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসুলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, পবিত্র শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।‘ সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’

তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, রমযানের দু-একদিন পূর্বে রোযা রেখো না। যাতে রমযানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।

একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শাবানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর হুজুর পাক (দঃ) প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণ কে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা আইয়ামে বীয এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শাবানের ও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে। তবে শুধুমাত্র ১৫ শাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথক ভাবে কেউই উল্লেখ করেন নি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে তবে ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে।

আহলে সুন্নাতের ফিকাহবিদগণের দৃষ্টিতে লাইলাতুল বারা‘আতঃ 

হানাফী মাজহাব ফিক্বহে হানাফীঃ

আল্লামা শামী, ইবনে নুজাইম, আল্লামা শরমবুলালী, শাইখ আব্দুল হক দেহলভী, হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী, মুফতী মুহাম্মদ শফী সাহেব রহ. সহ প্রমুখ উলামায়ে কেরামের মতে লাইলাতুল বারা‘আতে শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী জাগ্রত থেকে একাকীভাবে ইবাদত করা মুস্তাহাব, তবে জমায়েত হয়ে নয়। 

সূত্রঃ আদ দুররুল মুখতার-২/২৪-২৫, আল বাহরুর রায়িক-২/৫২, মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ-৩৬, মারাক্কিল ফালাহ-২১৯, জাওয়ালুস সিনাহ-১৭, লাইলাতুল বরা‘আতের হাক্বীক্বত- শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তাক্বী উসমানী।

শাফেয়ী মাজহাব ফিক্বহে শাফেয়ীঃ

হযরত ইমাম শাফী (রহঃ)এর মতেও শা‘বানের ১৫ তম রাতে অধিক অধিক দু‘আ কবূল হয়ে থাকে।  

সূত্রঃ কিতাবুল উম্ম-১/২৩১।

হাম্বালী মাজহাব ফিক্বহে হাম্বলীঃ

শাইখ ইবনে মুফলিহ হাম্বলী, আল্লামা মানসূর আল বাহুতী এবং ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) সহ প্রমূখ উলামায়ে কিরামের নিকট লাইলাতুল বারা‘আতে ইবাদাত করা মুস্তাহাব। 

সূত্রঃ দেখুন! আল মাবদা-২/২৭, কাশশাফুল কিনা-১/৪৪৫, লাত্বায়িফুল মা‘আরিফ-১৫১-৬০।

মালিকী মাজহাব ফিক্বহে মালিকীঃ

ইবনুল হাজ্জ্ব মালিকী (রহঃ) বলেন সলফে সালিহীন তথা পূর্বযুগের আউলিয়াগণ এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। 

সূত্রঃ আল মাদখাল-১/২৯২-৯৩।

সারকথাঃ আহলে সুন্নাতের সকল মাযহাবের উলামায়ে কিরামের মতে পবিত্র শবে বরাত/লাইলাতুল বারা‘আতে ইবাদাত করা মুস্তাহাব।

আহলুল হাদীস ভাইদের প্রতি আবেদন

লাইলাতুল বারা‘আত সম্পর্কে কোন আপত্তি থাকলে আপনারা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ এর ইক্বতিযাউস সিরাতুল মুস্তাক্বীম-২/৬৩১-৬৪৩, আলবানী এর সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ-৩/১৩৫-১৩৯, ইমাম মুবারকপুরীর তুহফাতুল আহওয়াজী-২/৫৩ এবং ইবনে রজব হাম্বলীর লাত্বায়িফুল মা‘আরিফ ১৫১-১৬০ ইত্যাদি প্রমুখ উলামাদের কিতাব দেখুন।

এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত/একাকী ভাবেঃ 

এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী ভাবে করণীয়। ফরয নামাযতো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে/ইবাদত খানাতে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। 

সূত্রঃ ইক্‌তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯।

অবে কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।

পবিত্র শবে বরাতের হালুয়া-রুটিঃ 

পবিত্র শবে বরাতের রাতে পবিত্র খাবার হালুয়া-রুটি ও অন্যান্য উন্নত খাবার তৈরী করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কারণ ইহা এক ধরণের উন্নত হালাল খাবার। আর দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) মিষ্টি অধিক ভালবাসতেন। 

সূত্রঃ বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮১৭ পৃষ্ঠা সহ আরো বিভিন্ন পৃষ্ঠায় ১১টি হাদীস রয়েছে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মিশকাত শরীফ ৩৬৪পৃষ্ঠা। 

এছাড়া তিরমিযী শরীফে উল্লেখ আছে দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করেছেন “হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে অন্য/খাবার দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন নামাজে দন্ডায়মান হও, তবেই তো শান্তিতে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে। 

এতে বুঝা গেল যে, মেহমানদারী করা খাওয়ানো ও বেহেস্ত লাভের একটি মাধ্যম/উছিলা। পবিত্র শবে বরাতে উপরোক্ত হাদীসের উপর আমল করার সুযোগ হয়।

প্রথমতঃ মুসলমানগণ নামাজে যাবে একে অপরের সাথে সাক্ষাত হবে এবং একে অপরের সাথে সালাম আদান-প্রদান করবে। আর 

দোজাহানের বাদশাহ তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন সালাম আদান-প্রদান একটি উত্তম আমল।

দ্বিতীয়তঃ পবিত্র শবে বরাতে ভাল খাবার বন্টনের মাধ্যমে মানুষকে খাবার খাওয়ানো হলো। পাশাপাশি গরিব-মিসকিনরা একদিন ভাল খাবার খাওয়ার সুযোগ পেল।

তৃতীয়তঃ আত্বীয়-স্বজন একে-অপরের বাসা/বাড়িতে খাবার বিতরণের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। 

(**) তথ্য সুত্র : জাতীয় প‌ত্রিকায় লি‌খিত বি‌ভিন্ন আলেম,মুফ‌তি ও মওলানাদের কলাম থে‌কে ও বি‌ভিন্ন ইসলা‌মিক পুস্তক থে‌কে সংগ্র‌হিত।

- জা‌হিদ আহ‌মেদ ও তার স্মৃ‌তি প‌রিষদ।

ইসলামিক /মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি

 ইসলাম‌িক  বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি  --------------------------------------------------------------- পা‌কিস্তান , সৌ‌দি আর‌ব ...