শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১

ঘর রাঙ্গা‌নো , মন রাঙ্গা‌নো 

ঘর রাঙ্গা‌নো , মন রাঙ্গা‌নো 

ফ্ল্যা‌টের বা বা‌ড়িঘরের সেীন্দর্য দ্বারা প্রকাশ পায় আমা‌দের মানসিকতা কেমন ? তাই ঘর বা‌ড়ির বা ফ্ল্যা‌টের গোছা‌নো বা সাজা‌নোর প্রথম ধা‌পেই যে কাজ‌টি কর‌তে হ‌বে তা হল রং পছন্দ করা বা পেই‌ন্টিং করা‌নো । আধু‌নিক বি‌শ্বের সবাই এখন পেইন্ট করা‌নোর বিষ‌য়ে বে‌শি গুরুত্ব ‌দি‌য়ে থা‌কেন। 

ঘর রাঙাতে কোন রং?

ঘরের সাদামাটা দেয়ালে একটু রঙের ছোঁয়া না থাকলে যেন ভালোই লাগে না। পলেস্তারার পর চুনকাম, তারপর বাহারি নানা রঙের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। কিন্তু ঘরবাড়ি রাঙানোর এসব উপাদানে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ঘর রাঙাতে কোন রং ব্যবহার করবেন, সে ব্যাপারে একটু সচেতন হওয়া চাই। রঙের ভালো-মন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরনবী ব‌লেন , রঙে এমন কিছু সাধারণ উপাদান আছে, যেগুলো মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: অনেক রঙেই স্থায়িত্বের জন্য ইপক্সিজাতীয় সারফেকটেন্ট ব্যবহৃত হয়। এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আবার রঙে যাতে ছত্রাক না জন্মায়, সে জন্য ফরমালডিহাইড ব্যবহার করা হয়। এটিও ক্ষতিকর। 

বাসাবাড়ির গ্রিল বা ধাতব জিনিস রাঙাতে যে এনামেল পেইন্ট করা হয়, তাতে ক্ষতিকর উদ্বায়ী জৈবযৌগ ভিওসি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা যায়, সারাক্ষণ রঙের কাজের সংস্পর্শে থাকা মানুষের ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করলে রং ব্যবহারজনিত এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রঙের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলো কতক্ষণ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, তা বোঝার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে এর গন্ধ। রঙের গন্ধ একেবারে দূর হওয়ার পরই সেই ঘরে বসবাস শুরু করুন। প্রশস্ত দরজা-জানালার ব্যবস্থা যেন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং ঘরে আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত যাতায়াত নিশ্চিত করুন। কোন ঘরে কোন রং? ঘরের দেয়ালে রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের পছন্দ বা রুচি ও মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো প্রাধান্য পায়। 

সাধারণত বিভিন্ন ঘরের রং আলাদা হলেই ভালো হয়। তবে ঘরের তিন দেয়াল অফ-হোয়াইট কিংবা সাদা রেখে বাকি এক দিকের দেয়ালে রঙের ভিন্নতা আনলে সব দিক থেকেই ভালো। রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারসন গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, ড্রয়িংরুমের দেয়ালের রং হতে পারে লাল। রংটি চিত্তাকর্ষক এবং জমজমাট পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। সবার আগে যেহেতু এ ঘরই বাইরের মানুষের চোখে পড়ে, রুচির পরিচয় অনেকখানি তুলে ধরা যায় অতিথিকক্ষের মাধ্যমে। খাবারঘরের দেয়ালটিতেও উজ্জ্বল রং (যেমন: কমলা) ব্যবহার করতে পারেন। এ ঘরে সাধারণত হই-হুল্লোড়, আড্ডা খুব বেশি হয়। তাই উজ্জ্বল রংগুলো সেখানে সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। ছোট শিশুদের ঘরের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য নীল আর মেয়েদের জন্য গোলাপি ধাঁচের রং ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া একরঙা দেয়ালের পরিবর্তে একটি ফিচার দেয়ালে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্য রাখা যেতে পারে। শোবারঘরের জন্য বেগুনির মতো রং জুতসই। বয়স্ক মানুষেরা বেশি রঙের ব্যবহার অপছন্দ করলে তাঁদের ঘরের জন্য চার দেয়ালেই হালকা বা অফ-হোয়াইট ধরনের রং ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ বা ইলিউশন ব্যবহার করলে ফ্লোরাল কিংবা লতাপাতা নকশার ইলিউশনকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। পুরো বাড়ির ছাদ ও মেঝেতেও সাদার ব্যবহার থাকলে ভালো। এতে ঘরগুলোকে প্রশস্ত মনে হয়। অফ-হোয়াইট কিংবা সাদার পরিবর্তে চার দেয়ালজুড়ে একই রং ব্যবহার করলে হিজিবিজি ও আবদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দেশে প্রচলিত যত রং দেশে বর্তমানে কিছু প্রতিষ্ঠানের প্লাস্টিক পেইন্ট, ডিস্টেম্পার, ইলিউশন ইত্যাদি রং পরিবেশবান্ধব উপায়ে বাজারে এসেছে। তাই রং কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল করে কিনুন, তা পরিবেশবান্ধব কি না। আর দামেরও খুব একটা তারতম্য নেই, সাধ্যের নাগালেই। যাঁরা ইতিমধ্যে অন্য রং কিনে ফেলেছেন, তাঁদের জন্য গুলশান নাসরিনের পরামর্শ—রঙের গন্ধ পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর ঘরে বসবাস শুরু করুন অথবা রঙের বিষক্রিয়া দূর করতে ঘরে বেশি করে ‘ইনডোর প্ল্যান্ট’ লাগান। 

বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের রং তৈরি হয়—

(**) ওয়াটার বেইজড ও ওয়েল বেইজড রং। 

বাংলাদেশ পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) বলছে, ওয়াটার বেইজড রঙে কোনো সিসা ব্যবহৃত হয় না। তবে ওয়েল বেইজড রঙে সামান্য পরিমাণে সিসা ব্যবহৃত হয়। রং ব্যবহারের ঝুঁকি বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিএমএর সাবেক মহাসচিব আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রঙেই সবচেয়ে কম সিসা ব্যবহার করা হয়। যেটুকু সিসা ব্যবহৃত হয়, সেটাও দূর করতে কাজ চলছে। বাংলাদেশের গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত রংকে পুরোপুরি সিসামুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে দুই-আড়াই বছর ধরে বেসরকারি সংস্থা ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এবং বিপিএমএ যৌথভাবে কাজ করছে। রং করার তরিকা বাড়ি নতুন হোক বা পুরনো। 

ভেতরবাড়ি কিংবা বাইরবাড়ি।

 * বাড়ির বাইরের দেয়ালে রং করতে চাইলে মাথায় রাখুন আবহাওয়া। বাইরের দেয়ালে রং লাগানোর জন্য গ্রীষ্মকাল সবচেয়ে উপযোগী। ভেতরের দেয়ালে বছরের যেকোনো সময় রং করাতে পারেন। চাইলে বর্ষাকালেও ভেতরের দেয়ালে রং করা যায়। বাড়ির বাইরের দেয়ালে রং করতে চাইলে মাথায় রাখুন আবহাওয়া। বাইরের দেয়ালে রং লাগানোর জন্য গ্রীষ্মকাল সবচেয়ে উপযোগী। ভেতরের দেয়ালে বছরের যেকোনো সময় রং করাতে পারেন। চাইলে বর্ষাকালেও ভেতরের দেয়ালে রং করা যায়।

 * প্রথমবার রং করানোর ক্ষেত্রে সিমেন্টের আস্তরের ৯০ দিন পর সিলার ব্যবহার করুন। সিমেন্টের আস্তরণ পুরোপুরি শুকাতে তিন মাস সময় লাগে।

 * দেয়াল খুব ভালো করে শুকিয়ে গেলে ভেতরের দেয়ালে সিলার ব্যবহার করুন। এতে দেয়াল মসৃণ হবে। * আর বাইরের দেয়ালে মসৃণতা আনতে পুডিং প্রলেপ দিন। পুডিং ব্যবহার করার আগে পানি দিয়ে দেয়াল ভিজিয়ে নিন। খরচ কমাতে চাইলে পুডিংয়ের পরিবর্তে তিন কোট রং অর্থাৎ তিনবার রঙের প্রলেপ দিলেও দেয়াল মসৃণ হবে।

 * দেয়ালে রং করার আগে পাথর দিয়ে দেয়াল ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে। প্রাইমারি কোট শুকানোর পর সেকেন্ডারি কোট ব্যবহার করুন। এবং সেকেন্ডারি কোট ভালোভাবে শুকালে তারপর টারশিয়ারি বা ফাইনাল কোট রং দেওয়া উচিত। * পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে বাইরের দেয়াল তিন বছর পর পর রং করা উচিত। ভেতরের দেয়ালের রং সাধারনত পাঁচ বছর পর্যন্ত উজ্জ্বল থাকে। 

* পুরনো বাড়ির বাইরে দেয়ালে রং করার আগে ছত্রাকগুলোকে চেঁছে তুলে ফেলতে হবে। তারপর দেয়ালে অ্যান্টি-ফাঙ্গাশ সলিউশন ব্যবহার করুন। এতে দেয়ালের রং দীর্ঘস্থায়ী হবে। * বাড়ির দেয়ালের জন্য সাধারণত ডিসটেম্পার ও প্লাষ্টিক পেইন্ট এই দুই ধরনের রং ব্যবহার হয়।

 * বাইরের দেয়ালে আবহওয়ার প্রভাব থাকে। তাই এখানে ব্যবহার করুন অ্যাক্রেলিক ইমালশন। জেনে রাখুন বাড়ির ভেতরে ডিসটেম্পার : ইট, কংক্রিট ও প্লাস্টারের ওপর ডিসটেম্পার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ডিসটেম্পার, যেমন-অ্যাক্রেলিক, সিনথেটিক, ড্রাই ইত্যাদি। অ্যাক্রেলিক ডিসটেম্পার পানি দিয়ে ধোয়া যায়। কিন্তু সিনথেটিক ও ড্রাই ডিসটেম্পার পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। 

প্লাস্টিক পেইন্ট : প্লাস্টিক ইমালশন নামেই বেশি পরিচিত। পানি বেজড রং, যা দীর্ঘস্থায়ী ও ধোয়া যায়। প্লাস্টিক পেইন্ট তিন ধরনের। রেগুলার, ইকোনমিক ও প্রিমিয়ার ইমালশন। বাইরের দিকে বাড়ির বাইরের দিকে আবহওয়ার প্রভাব থাকে। তাই বাড়ির ভেতর থেকে বাইরের রং ভিন্ন হয়। 

সিমেন্ট পেইন্ট : পানি বেজড রং। অ্যাক্রেলিক ইমালশন : বেশি ব্যবহৃত রং এবং দীর্ঘস্থায়ী ও ধোয়া যায়। টেক্সার প্লাস্টার : এটা ইমালশন বেজড রং। এতে পানির বদলে ইমালশন ব্যবহার করা হয়। 

• বাড়ি সাজাতে কোন দেওয়ালে কোন রং? 

জেনে নিন বাস্তু-কথা বাড়ির মূল দরজায় অধিষ্ঠান সূর্যের। সেই কারণেই এই জায়গার রং লাল বা হলুদ হওয়া উচিত। ঘরের মূল দরজায় ও তার দেওয়ালে কখনোই কালো রং লাগাবেন না। এখানে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো। হাইলাইটস • ঘরের লিভিং এরিয়া নিয়ন্ত্রিত করে চাঁদ। এখানে উজ্জ্বন রং লাগাবেন। সাদা রংও চলতে পারে। • এছাড়া হালকা হলুদ, গোলাপী বা পার্পল রং লিভিং এরিয়ার জন্য শুভ। এড়িয়ে চলুন লাল ও নীল রং। বাস্তুমতে মনে করা হয় যে ঘরের এক একটি অংশ এক একটি গ্রহের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ঘরে গ্রহের অবস্থান আরও ভালো করতে সঠিক রং নির্বাচন তাই অত্যন্ত জরুরি। বাস্তু ঠিক না থাকলে যে ঘরে অশান্তি লেগে থাকবে, জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসীরা তা জানেন। সেই কারণে বাড়িতে রং করার আগে জেনে নিন কোন ঘরের দেওয়াল কোন রঙের জন্য উপযুক্ত। 

 * বাড়ির মূল দরজায় অধিষ্ঠান সূর্যের। সেই কারণেই এই জায়গার রং লাল বা হলুদ হওয়া উচিত। ঘরের মূল দরজায় ও তার দেওয়ালে কখনোই কালো রং লাগাবেন না। এখানে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো। 

 * ঘরের লিভিং এরিয়া নিয়ন্ত্রিত করে চাঁদ। এখানে উজ্জ্বন রং লাগাবেন। সাদা রংও চলতে পারে। এছাড়া হালকা হলুদ, গোলাপী বা পার্পল রং লিভিং এরিয়ার জন্য শুভ। এড়িয়ে চলুন লাল ও নীল রং। 

 * রান্নাঘরের ওপর নিয়ন্ত্রণ মঙ্গল ও সূর্যের। এখানে অবশ্যই হলুদ বা কমলা রং লাগান। রান্নাঘরে যেন সূর্যের আলো প্রবেশ করে। এখানে গাঢ় রং ব্যবহার করবেন না।

 * শোওয়ার ঘরের ওপর শনি ও শুক্রের প্রভাব থাকে। এখানে ফ্রস্ট কালার লাগাতে পারলে ভালো। শোওয়ার ঘরের জন্য গোলাপী, হালকা সবুজ এবং ক্রিম কালার বেছে নিতে পারেন। লাল বা নীল রং বেডরুমে একেবারেই চলবে না। 

 * বাথরুমে বাস রাহু ও কেতুর। এখানে রং নির্বাচন তাই একটু ভেবেচিন্তে করাই ভালো। নীল বা সাদা রং এখানে ব্যবহার করতে পারেন। বাথরুমে আলোর ব্যবস্থা যেন ভালো থাকে। পাশাপাশি জলের অপচয় একদমই করা চলবে না। ঘরের সাদামাটা দেয়ালে একটু রঙের ছোঁয়া না থাকলে যেন ভালোই লাগে না। কিন্তু ঘর রাঙাতে যে কোন রং ব্যবহার করলেই কি হবে? একটা মানানসই রঙের ব্যপারোও তো আছে। তাই রং বাছাইয়ের ব্যপারে একটু সচেতন হওয়া দরকার। তবু হায় ভুলে যাই বারে বারে, দূরে এসে ঘর চাই বাঁধিবারে, আপনার বাঁধা ঘরেতে কি পারে ঘরের বাসনা মিটাতে। ‘সব ঠাঁই মোর ঘর আছে’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই নতুন বাঁধা ঘর নিয়ে মনের আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এই ইটপাথরের শহরে আমরা যেন সবাই প্রবাসী। গ্রামের মায়া ছিন্ন করে শহরে এসেছি ক্ষণিকের ঘর বাঁধতে। সেই ক্ষণিকের ঘরে দেয়ালের রং বা অঙ্গসজ্জা যদি হয় বিবর্ণ, তাহলে ঘরে মন বসানো কঠিন। অথচ দেয়ালে একটু রুচিশীল রঙের ছোঁয়া পাল্টে দিতে পারে পুরো ঘরের আবহ। তাই অন্দরসাজ বা ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে দিনকে দিন সচেতন হয়ে উঠছেন এই শহরের মানুষেরা। ফলে সচেতনতার পাশাপাশি দেয়ালের রঙের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে মন চাইলেই তো দেয়াল রাঙানো সম্ভব হয় না, তার জন্য রয়েছে কিছু আলাদা নিয়মকানুন। এছাড়া বছরের কোন সময়টাতে ওয়াল পেইন্টিং করাতে চাচ্ছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। স্থাপত্য রীতি অনুযায়ী সাধারনত নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেয়াল রং করার আদর্শ সময় ধরা হয়। কারণ, এই সময় বাতাসের আর্দ্রতা থাকে কম। আবার বৃষ্টিও একেবারে হয় না বললেই চলে। ফলে দেয়াল থাকে শুষ্ক আর আর্দ্রতামুক্ত। তাই দেয়াল রং করাতে চাইলে বর্ষা আসার আগেই উদ্যোগ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে Sheba.xyz হতে পারে আপনার বিশ্বস্ত সহযোগী। কেন ঘর রাঙানোর জন্য Sheba.xyz কে বেছে নেবেন, সেটা পরে বলছি। তার আগে দেয়ালের রং করার ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি কিছু বিষয় জেনে নেয়া দরকার। ওয়াল পেইন্টিংয়ের কিছু খুঁটিনাটি: ঘরের দেয়ালে রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের পছন্দ বা রুচি ও মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো প্রাধান্য পায়। সাধারণত বিভিন্ন ঘরের রং আলাদা হলেই ভালো হয়। তবে ঘরের তিন দেয়াল অফ-হোয়াইট কিংবা সাদা রেখে বাকি এক দিকের দেয়ালে রঙের ভিন্নতা আনলে সব দিক থেকেই ভালো। বয়স্ক মানুষেরা বেশি রঙের ব্যবহার অপছন্দ করলে তাঁদের ঘরের জন্য চার দেয়ালেই হালকা বা অফ-হোয়াইট ধরনের রং ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ বা ইলিউশন ব্যবহার করলে ফ্লোরাল কিংবা লতাপাতা নকশার ইলিউশনকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। পুরো বাড়ির ছাদ ও মেঝেতেও সাদা রংয়ের উপস্থিতি থাকলে ভালো। এতে ঘরগুলোকে প্রশস্ত মনে হয়। অফ-হোয়াইট কিংবা সাদার পরিবর্তে চার দেয়ালজুড়ে একই রং ব্যবহার করলে হিজিবিজি ও আবদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঘর অনুযায়ী রং নির্বাচন: প্রধান দরজার আশেপাশে: ঘরের প্রধান দরজা দিয়েই আমরা ক্লান্ত হয়ে ঘরে ঢুকি কিংবা সতেজ হয়ে বের হই। তাই প্রধান দরজার আশেপাশে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা উচিত। কালো, নীল, ধুসর ধরনের রং এখানে এড়িয়ে গেলে ভালো। ড্রয়িংরুম: সবার আগে ড্রয়িংরুমটাই বাইরের মানুষের চোখে পড়ে। তাই ড্রয়িংরুমটা রুচিশীল রংয়ে রাঙানো জরুরী। এক্ষেত্রে রোজ বেরি, ওশেন গ্রীন, ফ্রেঞ্চ গ্রে, ভায়োলেট, ক্রিম কালার ও লেমন ইয়ালো হতে পারে ভালো রং। কারন এই রংগুলো মনকে উজ্জীবিত ও সতেজ করে তোলে। ডাইনিংরুম: হলুদ বা কমলার মতো উষ্ণ, উজ্জ্বল রংগুলো আমাদের ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের দেয়াল ও ইন্টেরিয়রে সাধারনত এই তিনটা রংকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আবার হই-হুল্লোড়, আড্ডা এগুলো ডাইনিংরুমেই খুব বেশি হয়। তাই ডাইনিংরুমে যে কোনো উজ্জ্বল রংয়ের ব্যবহার সেখানে সুন্দর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। বেডরুম: দিনশেষে বেডরুমটাই আপনার স্বস্তির জায়গা। তাই শোবার ঘরের জন্য হালকা, সতেজ, শান্তি ও স্নিগ্ধ আমেজ আনে এমন রং থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে হোয়াইট, অফ হোয়াইট, লাইট ভায়োলেট, লাইট গ্রিন, লেমন ইয়েলো, ফ্রেঞ্চ গ্রে, ক্রিম ইত্যাদি শীতল রং দেওয়া যায়। এই ধরনের রং মনে আনে শান্তি ও স্বস্তির আমেজ। তাই শোবার ঘরে এই রংগুলোরই বেশি ব্যবহার হয়। সেক্ষেত্রে গাড় রং বেডরুমে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। রান্নাঘর: ঘরে সবুজের ছোঁয়া রাখতে চাইলে খাবারের ঘরটা কাজে লাগানো যেতে পারে। ঘর ছোট হলে এখানে ব্যবহৃত জিনিসগুলো একটু সবুজ রঙের হলে সহজেই মানিয়ে যাবে। রান্নাঘরে সূর্য বা প্রাকৃতিক আলোর প্রবেশ নিশ্চিত করা খুবই জরূরী। এতে করে রংয়ের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। তাই রান্নাঘরে রং করার সময় গাঢ় রংয়ের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে। বাচ্চাদের ঘর: ছোট শিশুদের ঘরের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারন রং বাচ্চাদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে অনেক বেশি। বাচ্চাদের ঘরে রং করার আগে তার সঙ্গে কথা বলে পছন্দ বুঝে নেওয়া যেতে পারে। শিশুর পছন্দের কোনো চরিত্র থাকলে সেটা আঁকিয়ে নিতে পারেন দেয়ালে। তবে এখানে এমন চরিত্রই আঁকা উচিত, যা শিশুর অন্তত পাঁচ-আট বছর পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে। রং নির্বাচনে যে ভুলগুলো এড়িয়ে যাবেন: ঘরের রং নির্বাচন করা খুব সহজ কিছু না। বরং মাঝে মাঝে আমাদের ধাঁধায় পড়ে যেতে হয়, কোন ঘরের জন্য কোন রং নির্বাচন করবো সেটা নিয়ে। তাই রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু ভুল সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। 

ঘরের জন্য রং পছন্দ করতে গিয়ে যে ভুলগুলো সবচেয়ে বেশি হয় সেগুলো হলো: 

• প্রথমেই ওয়াল পেইন্ট নির্বাচন করা: ঘরের আসবাবপত্রের কথা মাথায় না রেখেই অনেকসময় আমরা ঘরের জন্য রং নির্বাচন করে ফেলি। এই ভুলটা করা যাবে না। প্রথমে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ঘরে কোন কোন রংয়ের আসবাবপত্র রয়েছে। সেই রংয়ের সাথে যায় এমন ওয়াল পেইন্ট বেছে নেয়া উচিত। • ঘরের ‘মুড’ নির্ধারন করতে না পারা: প্রতিটা ঘরের আলাদা মুড বা আবহ থাকে। যেমন, আপনি যদি চান মাস্টার বেডরুমের পরিবেশ হবে শান্ত, তাহলে হালকা কোনো রং বেছে নিতে হবে। তেমনি ড্রয়িংরুমে যদি চান প্রাণবন্ত পরিবেশের আবহ আনতে, সেক্ষেত্রে যে কোনো উজ্জ্বল রং নির্বাচন করা উচিত। 

• সব ঘরের জন্য একই ধরনের রং বেছে নেয়া: সব ঘরে একই টাইপের রং ব্যবহার করলে সেটা হয়ে ওঠে একঘেয়ে। এই জন্য ঘরের ব্যবহার বুঝে সেটাতে উজ্জ্বল বা হালকা রং বেছে নিতে হবে। 

• প্রাকৃতিক আলোর প্রতি খেয়াল না রাখা: যত বৈচিত্রপূর্ণ লাইটই ব্যবহার করি না কেন, আউটলুক কেমন হবে সেটা নির্ভর করে প্রাকৃতিক আলো কতটুকু ঘরে প্রবেশ করতে পারছে তার উপর। যদি যথেষ্ট পরিমাণে আলো বাতাস ঘরে প্রবেশ করে, তাহলে হালকা রং বেছে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘরের অবস্থান যদি এমন হয় যে খুব বেশি দিনের আলো ঢুকতে পারে না, সেক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা উচিত। 

• রং পরীক্ষা না করা: ঘরের ভেতরে বা বাইরে, যেখানেই রং করেন না কেন, সেটা বেশ ব্যয়বহুল। তাই হুট করে রং নির্বাচন না করে সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা উচিত। দোকানে যে রং ভালো লাগবে সেটা আপনার দেয়ালে নাও ভালো লাগতে পারে। তাই রং করার আগে ছোট করে ট্রায়াল করে নিতে পারেন। এভাবে পরীক্ষা করে নিলে রং নির্বাচনটা যথাসম্ভব নিখুঁত হবে। ভেতরের দেয়াল বনাম বাইরের দেয়ালের রং নির্বাচন: ঘরের ভেতরের এবং বাইরের দেয়ালের কাজ বিপরীতমুখী। তাই রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘরের ও বাইরের দেয়ালের জন্য আলাদা রং বেছে নেয়া উচিত।

 • ঘরের ভেতরের রং: ঘরের ভেতরে দুই ধরনের রং বেছে নেয়া যেতে পারে। একটি হচ্ছে ডিসটেম্পার, অন্যটির নাম প্লাস্টিক পেইন্ট। ডিসটেম্পার করা হয় সাধারণত ইট, কংক্রিট ও প্লাস্টারের ওপর। অ্যাক্রেলিক, সিনথেটিক, ড্রাই ইত্যাদি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ডিসটেম্পার। অ্যাক্রেলিক ডিসটেম্পার পানি দিয়ে ধোয়া যায়। কিন্তু সিনথেটিক ও ড্রাই ডিসটেম্পার পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। ডিসটেম্পার ব্যবহার করতে না চাইলে সেক্ষেত্রে প্লাস্টিক পেইন্ট বা প্লাস্টিক ইমালশন বেছে নিতে পারেন। এটা হচ্ছে পানি ভিত্তিক রঙ, যা দীর্ঘস্থায়ী। এই রং আপনি পানি দিয়েও ধুতে পারবেন। প্লাস্টিক পেইন্ট তিন ধরণের- রেগুলার, ইকোনমিক ও প্রিমিয়াম ইমালশন।

 • বাড়ির বাইরের দেয়ালের রং: বাড়ির বাইরের দিকে যে রং-ই ব্যবহার করেন না কেন, সেটা হতে হবে অনেক বেশি টেকসই ও সুরক্ষিত। কারন বাইরের দেয়ালকে রোদ- বৃষ্টির প্রভাব মোকাবেলা করতে হয়। তাই অনেকে সিমেন্ট পেইন্ট রং বেছে নেন। এই রং ওয়াটার বেজড রং। তবে বাইরের দেয়ালে অ্যাক্রেলিক ইমালশন রংয়ের ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। কারন এই রং দীর্ঘস্থায়ী ও পানি দিয়ে ধোয়া যায়। অনেকে আবার টেক্সার প্লাস্টার ব্যবহার করে থাকেন। এটা ইমালশন ভিত্তিক রঙ। এতে পানির বদলে ইমালশন ব্যবহার করা হয়। খেয়াল রাখুন

 • হালকা রঙে ঘর বড় দেখায়। গাঢ় রঙে ঘর ছোট মনে হয়। 

• কম আলোর ঘরে হালকা রং ব্যবহার করুন। 

• ঘরের সিলিংয়ের রং নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। সিলিংয়ে সাদা বা দেয়ালের রং থেকে আরো হালকা রং ব্যবহার করলে ঘর উজ্জ্বল দেখায়।

- জা‌হিদ আহ‌মেদ ও তার স্মৃ‌তি প‌রিষদ। 

 তথ্যসুত্র : বি‌ভিন্ন ও‌য়েব লিংক থে‌কে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ইসলামিক /মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি

 ইসলাম‌িক  বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি  --------------------------------------------------------------- পা‌কিস্তান , সৌ‌দি আর‌ব ...