শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০

ঈদে মিলাদুন্ন‌বি পাল‌নের যেী‌ক্তিক দ‌লিল ও ইতিহাস এবং প্রাস‌ঙ্গিকতা -



 

ঈদে  মিলাদুন্ন‌বি  পাল‌নের যেী‌ক্তিক দ‌লিল  ও ইতিহাস এবং প্রাস‌ঙ্গিকতা -

ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (আরবি: مَوْلِدُ النَبِيِّ‎‎ মাওলিদু এন-নাবীয়ী, আরবি: مولد النبي মাওলিদ আন-নাবী, কখনো কখনো সহজভাবে বলা হয় مولد মাওলিদ, মেভলিদ, মেভলিট, মুলুদ আরো অসংখ্য উচ্চারণ; কখনো কখনো: ميلاد মিলাদ) হচ্ছে শেষ নবীর জন্মদিন হিসেবে মুসলমানদের মাঝে পালিত একটি উৎসব। মুসলিমদের মাঝে এ দিনটি বেশ উৎসবের সাথে পালন হতে দেখা যায়। তবে উৎসব নিয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের মাঝে অনেক বিতর্ক রয়েছে। হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল-এর বারো তারিখে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।[১] বাংলাদেশি মুসলমানরা এই দিনকে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী বলে অভিহিত করেন। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কাছে এই দিন নবী দিবস নামে পরিচিত।

ইতিহাস

হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে মিলাদুন্নবীর প্রচলন শুরু হয়। রাসূল, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন এর জন্মদিন, এসবের মূল প্রর্বতক ছিল খলীফা আল মুয়িজ্জু লি-দীনিল্লাহ।

এখানে উল্লেখ্য যে, মিশরের এইসব অনুষ্ঠানাদি তখনো মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েনি।  পরবর্তীতে যিনি ঈদে মিলাদুন্নবীকে মুসলিমবিশ্বের অন্যতম উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তিনি হলেন, ইরাক অঞ্চলের ইরবিল প্রদেশের  আবু সাঈদ কুকবুরী । সে হিসেবে জানা যায়, ৭ম হিজরী থেকে আনুষ্ঠানিক মিলাদ উদযাপন শুরু হয়। মিলাদের উপর সর্বপ্রথম গ্রন্থ রচনা করে আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে হাসান ইবনে দেহিয়া আল কালবী ।

পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি?

ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উৎযাপন করা ইত্যাদি। আর মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমরা নবীজীর আগমনকে বুঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়। সুতরাং অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আধারের বুক চিড়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তি নিয়ে এসে মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন। নবীজীর পবিত্র শুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

কুরআনুল কারীমের দৃষ্টিতে পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম :

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন-

অর্থাৎ- আল্লাহ বলেন, হে প্রিয় রাসূল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের ঘটনা”- (রোজে আজলের সময়ের) যখন আমি (আল্লাহ) আম্বিয়ায়ে কেরামগণের নিকট থেকে এইভাবে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, যখন ‘আমি তোমাদেরকে কিতাব এবং হিকমত’ অর্থাৎ নবুয়ত দান করবো, অতঃপর তোমাদের কাছে এক মহান রাসূলের শুভাগমন হবে- যিনি তোমাদের প্রত্যেকের নবুয়তের সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা সকলে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনযন করবে এবং সর্বোত্তমভাবে তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। তোমরা কি এ কথার অঙ্গীকার করছো এবং অঙ্গীকারে কি অটল থাকবে? সমস্ত নবীগণ বললেন- হাঁ, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ তায়ালা বললেন- তোমরা পরস্পর স্বাক্ষী থেকো এবং আমি ও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী রইলাম। এর পরেও যে কেউ পিছপা হয়ে যাবে- তারা হবে ফাসেক।

(*)সূত্রঃ তৃতীয় পারা, সূরা আল-ইমরান ৮১-৮২ নং আয়াত।

এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো (১) আয়াতের ইবারাতুন নস-এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অন্যান্য নবীগণ থেকে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গীকার আদায় করেছিলেন। (২) দালালাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত নবীগণ সেদিন মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। (৩) ইশারাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মূলত ঐ মাহফিলটি নবীজীর আগমনী বা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর মাহফিল ছিল। (৪) ইক্বতেজাউন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ঐ সময় সমস্ত নবীগণ কি্বয়াম অবস্থায় ছিলেন। কারণ ঐ দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই এবং পরিবেশটিও ছিল আদবের।

আরো লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে- এই আয়াতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ নবীজীর আগমন সম্পর্কে রোজ আজলের মধ্যে সমস্ত নবীগণকে উপস্থিত রেখে আলোচনা করেছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন প্রিয় আল্লাহর রাসূল, তাঁর সাথে মানুষের তুলনা হবেতো দূরের কথা, অন্য কোনো নবীর ও তুলনা হয়না। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীদের নিকট দুটি হুশিয়ারী বাণী প্রদান করেছেন। যথা- (১) আমার বন্ধুর উপর ঈমান আনতে হবে। (২) আমার বন্ধুকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।

মানুষ যখন কোনো নেয়ামত ও রহমত প্রাপ্ত হয় তখন তার জন্য আনন্দ উৎসব করা তার স্বভাবগত কাজ, আর আল্লাহর নির্দেশও তাই। যেমন- পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-

অর্থাৎ- হে মানবকুল তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং অন্তর সমূহের বিশুদ্ধতা, হেদায়াত এবং রহমত ঈমানদারদের জন্য। হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত ধন দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা ইউনুছ, আয়াত নং- ৫৭-৫৮)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ আদ দুররুল মুনছুর এ উল্লেখ করেন-

অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন বুঝানো হয়েছে আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দু’আলম নূরে মোজাচ্ছম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন, (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতালি্লল আলামীন) অর্থাৎ হে হাবীব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি।

(*)সূত্রঃ সূরা আম্বিয়া আয়াত নং- ১০৭, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী (রহঃ) কৃত তাফসীরই আদ দুররুল মুনছুর, ৪র্থ খন্ড- ৩৬ পৃষ্ঠায় ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

সামান্য জাগতিক নিয়ামত লাভ করলে তজ্জন্য ঈদ উৎসব করার সরাসরি উদাহরণ আমরা পবিত্র কুরআন মাজীদে দেখতে পাই। যেমন-

অর্থাৎ- মরিয়ম তনয ঈসা (আঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের রব, আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা খাদ্য খাঞ্চা অবতরণ করুন যা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী সকলের জন্য ঈদ হবে এবং আপনারই নিদর্শন হবে, সুতরাং আমাদেরকে রিযিক দান করুন। আর আপনিইতো হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিক দাতা। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং- ১১৪)।

এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে খাঞ্চাভরা খাদ্য আসলে তা যদি হযরত ঈসা (আঃ)-এর ভাষায় পূর্ব ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ, উৎসবের কারণ ও আল্লাহর নিদর্শন হয়, তাহলে সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম সত্ত্বা, রহমতের ভান্ডার, প্রিয় নবী আকাও মাওলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার মত মহান নিয়ামতের শুভাগমনের দিন কতইনা মর্যাদাবান, গুরুত্বপূর্ণও আনন্দের দিন বা মাস তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

রাসুল (স:) পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’  পালন ক‌রে‌ছেন  কিনা ?

ইমাম বায়হাকী (রহ:) হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন:

 ‘হুযূর পাক (দ:) নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। 

অতএব, রাসূলে খোদা (দ:) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, 

 তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, 

যেমনি ভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। 

তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (দ:) দিবসে কৃতজ্ঞতা সূচক খুশি প্রকাশার্থে আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই, 

মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ 

এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (দ:)-এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।

— হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা

খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিল কি-না?

আল্লামা শাহাবুদ্দীন ইবনে হাজর হায়তামী (রহঃ) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করার নীতি প্রচলন ছিল। যেমন-

অর্থাৎ - হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করবে, সে ব্যক্তি বেহেশ্তে আমার সাথী হবে”। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাজীম ও সম্মান করলো, সে যেন ইসলামকেই জীবিত রাখলো”। হযরত ওসমান (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করলো, সে যেন বদর ও হোনাইনের যুদ্ধে শরীক হলো”। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করবে এবং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার উদ্যোক্তা হবে, সে দুনিয়া থেকে (তওবার মাধ্যমে) ঈমানের সাথে বিদায় হবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। 

(*)সূত্রঃ আন নে’মাতুল কোবরা আলাল ফি মাওলিদি সাইয়্যেদ ওলদে আদম ৭-৮ পৃষ্ঠা।

সাহাবা আজমায়ীন গনের মিলাদুন্নবি (স:) :

পবিত্র হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে "

ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ

ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗﻪِ ﺻَﻠَّﻰ

ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸﻪِﺗَﺮْﻴِ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ

ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ

ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ

ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚ

অর্থাৎ হজরত আবু দ্বারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত ,  

দয়াল রাসূল পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হজরত আমির আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  দেখতে পেলেন আমির আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  উনার পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল পুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছেন | 

অর্থাৎ নবীজি এইদিনে পৃথিবীতে আসছেন , 

পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়েছে  ইত্যাদি | 

এই ঘটনা শ্রবণ করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে হজরত আমির আনসারীকে বললেন ,

 আল্লাহ পাক তোমার জন্য উনার রহমতের দরজা প্রশস্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেস্তাগন তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন | 

 যে কেউ তোমাদের মত এইরূপ কাজ করবে সেও তোমাদের মত রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে |

 (*)সূত্রঃ  কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাকীকতে মোহাম্মদী ও মীলাদে আহমদী : পৃষ্ঠা ৩৫৫)

আওলিয়া কেরামের পবিত্র মিলাদুন্নবী (স:) পালন:

প্রসিদ্ধ তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন--

ﻗﺎﻝ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻋﻨﻪ ﻭﺩﺩﺕ ﻟﻮ ﮐﺎﻥ ﻟﯽ ﻣﺜﻞ ﺟﺒﻞ ﺍﺣﺪ ﺫﮬﺒﺎ ﻓﺎﻧﻔﻘﺘﻪ ﻋﻠﯽ ﻗﺮﺍﺀﺓ ﻣﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﯿﻪ ﻭﺳﻠﻢ

অর্থাৎ-আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে,

 আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ’ থাকতো তাহলে তা মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম ।

— আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১

শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো, জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ সালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!

(*) সূত্র: আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা ।

ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মোহাদ্দিস হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন-

“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রাত্রকে ঈদ হিসেবে পালন করে, 

তার উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন। 

আর যার মনে হিংসা এবং [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুশমনির] রোগ রয়েছে, তার ঐ (নবী বিদ্বেষী) রোগ আরও শক্ত আকার ধারণ করে”।

[মা সাবাতা বিসসুন্নাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং-৮৬]

পবিত্র মিলাদুন্নবী (স:) এর গুরুত্ব তুলে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া কয়েকটা ঘটনার মধ্যে নিম্নে একটা উল্লেখ করলাম:

 হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার রচিত “আদ দুররুস সামীন ফী মুবাশশারাতিন নবীয়্যিল আমীন” 

কিতাবের ৯ম পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ

“আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি প্রতি বছরই নবীকুল সর্দার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ উপলক্ষ্যে বিরাট খাবার আয়োজন করে আসছিলাম। 

অতঃপর এক বছর খাবারের আয়োজন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। 

সুতরাং অল্প ভাজ্যকৃত চনা ব্যতীত আর কিছুই আমি জোগাড় করতে পারিনি। 

কাজেই সেগুলো উপস্থিত লোকদের মাঝে বন্টন করে দিলাম। অতঃপর আমি স্বপ্নে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাত লাভ করে ধন্য হলাম। 

দেখলাম, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে ঐ চনাগুলো মওজুদ আছে। 

তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত ও হাস্যোজ্জল”।

[(*) সূত্র: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন, পৃষ্ঠা নং-৮১, ফতুয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা নং- ১৩৭, হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৮]

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ" مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.

অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মিলাদ্দুনবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক- উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন সৃষ্টি করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন।

আর আল্লাহ পাক উনাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। 

আর তার নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস সালামগণ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।

 যখন উনারা ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক উনাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। 

আর উনাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাক- উনার সন্নিধানে ছিদ্দিক্বের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ্!

(*) সূত্র:

* ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল

* আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা।

 

ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন-

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া উর্দু কিতাবের প্রচ্ছদ---

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া উর্দু কিতাবের যে অংশে ইবনে কাসির (রহঃ) মিলাদ শরীফের পক্ষে লিখেছেন

ইবনে কাসীর, যাকে সালাফী/ওহাবীরা তাফসীর ও ইতিহাস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে থাকে, তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামের মুজাহিদ সুলতান গাযী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ভগ্নিপতি শাহ মালিক আল-মুযাফফর সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

 অথচ সালাফীরাই ইবনে কাসীরের কথাকে বিকৃত করে এই মর্মে মিথ্যে ছড়িয়েছে যে মুযাফফর শাহ একজন ফাসেক, নিষ্ঠুর ও বেদআতী শাসক ছিলেন (নাউযু বিল্লাহ)। 

প্রকৃতপক্ষে ইবনে কাসীর লিখেন:

أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى

(মুযাফফর শাহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজ ছিল অতি উত্তম। তিনি কাসিইউন-এর কাছে জামেয়া আল-মুযাফফরী নির্মাণ করেন.....(প্রতি) রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকের সাথে মীলাদ শরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপন করতেন। উপরন্তু, তিনি ছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক - রাহিমুহুল্লাহ ওয়া একরাম - শায়খ আবুল খাত্তাব (রহ:) সুলতানের জন্যে মওলিদুন নববী সম্পর্কে একখানি বই লিখেন এবং নাম দেন ‘আত্ তানভির ফী মওলিদ আল-বাশির আন্ নাযীর’।

 এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করেন। সালাহিয়া আমল পর্যন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করেন। 

তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান। আস সাবত এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন যিনি সুলতানের আয়োজিত মওলিদ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; 

ওই ব্যক্তি বলেন:

 ‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-ভর্তি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মিষ্টির আয়োজন করতেন’।

(*) সূত্র: তারিখে ইবনে কাসীর, ‘আল-বেদায়াহ ওয়ান নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা।


 দেশে দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

যেভাবে শুরু

পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মুসলমান মাত্রই নয়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের আরবি ১২ রবিউল আউয়ালে আরবের তৎকালীন অন্ধকার যুগে ইসলামের মহান নেতা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম সমগ্র মানবজাতির জন্য ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। তাঁর মাধ্যমেই মহান রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে আসমানি গ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজিল করেন, যা সর্বকালে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ও পথপ্রদর্শনের জন্য যথেষ্ট। এই পবিত্র কোরআনের ৩৩ নম্বর সূরা আল আজহাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য দোয়া করেন। হে বিশ্বাসীগণ তোমরাও নবীর জন্য দোয়া কর ও পূর্ণ শান্তি কামনা কর।’ পবিত্র এই বাণীর আলোকে মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর বিভিন্ন পদ্ধতি বা আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে তা স্থানীয় কৃষ্টি, সভ্যতা ও লৌকিকতার মিশ্রণে নতুন রূপ লাভ করে। আরব বিশ্ব কাব্য সাহিত্যে বিশেষ সমৃদ্ধ ছিল বিধায় কবিতার ছন্দে মহানবী (সা.)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাঁর জন্য দোয়া করা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। ছন্দের সঙ্গে সুরের সংমিশ্রণে নাতে রসুল (সা.) চালু হয়। পরে ছন্দ ও সুরের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শুরু হলে বিভক্তি দেখা দেয় মুসলমান সমাজে। আবার সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ওহাবি আন্দোলনের বিস্তার মহানবী (সা.) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং দরুদ ও সালাম পেশের পদ্ধতিকে অতিমাত্রায় সীমিত করে ফেলে বলে অনেক নবীপ্রেমিক ও সুফিবাদে বিশ্বাসীদের অভিযোগ। তবে এ কথা সত্য, অভিযোগ থাকলেও মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে নিজস্ব রীতিনীতিতে তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে বদ্ধপরিকর দেশ-বিদেশের লাখো কোটি মুসলমান।

শোভাযাত্রা ও সমাবেশ (লিবিয়া)

উত্তর আফ্রিকার এক বৃহৎ রাষ্ট্র লিবিয়া, ভূমধ্যসাগর ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশের মাঝে অবস্থিত এই দেশে সপ্তম শতকে ইসলামের বিস্তার শুরু হয়। তবে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্র এবং লিবিয়ার পূর্বে অবস্থিত শহর থেকে তৎকালে প্রচলিত কাফেলা, বেদুঈন, ধর্ম প্রচারক এবং সুফি দরবেশদের মধ্যে একাদশ শতকে লিবিয়ায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে লিবিয়ার জনসংখ্যা ৭২ লাখ যার ৯৬.৬ শতাংশই মুসলমান। দেশটির মুসলমানদের মধ্যে অধিকাংশ সুফি মতবাদে বিশ্বাস করে এবং প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন পালনে সুফি মতবাদে প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করে। রাজধানী ত্রিপোলিসহ লিবিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিখ্যাত কিছু সুফি মতানুসারী নিয়ন্ত্রিত মসজিদ রয়েছে, যেখানে যথাযথ মর্যাদায় ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়। এই দিনে দেশটিতে ছুটি পালন করা হয় এবং প্রাচীন ঐতিহ্যে বিভিন্ন শহরের রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করা হয়। এসব মিছিলে সমবেতভাবে ভক্তিমূলক গান ও নাতে রসুল (সা.)-এর মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর মাহাত্ম্য বন্দনা করা হয়। সেই সঙ্গে মিছিলে বিশেষ ধরনের ঢোল ও বড় মন্দিরা বা ট্রাম্পেট বাজান হয়। মিছিল বা শোভাযাত্রা শেষে রসুল (সা.)-এর ভক্তরা একটি স্থানে সমবেত হয় যেখানে একজন ধর্মীয় নেতা ইসলাম এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর আদর্শের বক্তব্য রাখেন। বর্তমানে বিরাজমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আগের মতো জৌলুসের সঙ্গে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনে কিছুটা ভাটা পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়াও সৌদি আরব থেকে ওহাবি মতবাদ ছড়িয়ে পড়ায় লিবিয়ায় সালাফি মতাদর্শের বিস্তার ঘটেছে, যারা গোঁড়া সুফিদের মতো জাঁকজমকের সঙ্গে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনে বিরোধিতা করে। গৃহযুদ্ধের কারণে কয়েক বছর কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হলেও সাম্প্রতিককালে আবারও শুরু হয়েছে এই বিশেষ দিনের আনুষ্ঠানিকতা ও আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগি। এ সময় উৎসবের আমেজে রাস্তায় দোকানপাট বসে এবং শিশুদের খেলনা বিক্রি হয়। এ ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী বর্ণিল পোশাকে শিশুরা আনন্দে মেতে ওঠে। আধুনিকতার পরশে সাম্প্রতিককালের মিছিলে রঙিন ও আলোকিত ছাতা এবং বেলুনের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

সিকাতেন উৎসব (ইন্দোনেশিয়া)

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা ২৭ কোটিরও বেশি, যার প্রায় ৮৮ শতাংশই মুসলমান। সেই হিসাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস ইন্দোনেশিয়ায়। আবার মুসলমানদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ সুন্নি হওয়ায় পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় সুন্নিপ্রধান দেশও ইন্দোনেশিয়া। তবে ইন্দোনেশিয়া কোনো ইসলামিক বা মুসলমান রাষ্ট্র নয়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ত্রয়োদশ শতকে আরবসহ অন্যান্য মুসলমান দেশের বাণিজ্যিক জাহাজ ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপে ব্যাপকভাবে নোঙর ফেলত এবং জাহাজে আসা মুসলমান ব্যবসায়ী ও শ্রমিক-কর্মচারীরা স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তখন স্থানীয় অধিবাসী এবং শাসক শ্রেণি  মুসলমানদের সততা, ব্যবহার ও জীবনাচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ শুরু করে। পরে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ধর্ম প্রচার করে নিরলস পরিশ্রমে বিশ্বের বুকে ইন্দোনেশিয়া আজ জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশ। আরবি শাইহাদাতাইন ‘কিংবা শাহাদাহ’ শব্দের অনেক অর্থের একটি হলো সাক্ষ্য দেওয়া বা স্বীকার করে নেওয়া। এই শাইহাদাতাইন শব্দ থেকেই ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ভাষায় সিকাতেন নামক একটি শব্দের উৎপত্তি, যা মূলত ১২ রবিউল আউয়াল ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপপুঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উৎসব পালনকে বুঝায়। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা এই জাভা দ্বীপপুঞ্জেই অবস্থিত। তাই এই সিকাতেন বা মিলাদুন্নবী (সা.) উৎসবে ব্যাপক মুসলমানের একাত্মতা লক্ষ্য করা যায়। ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা যায় জাকার্তার শাসক সুলতান হামেং কুবুওয়ানারের আমলে এই উৎসব শুরু হয়। নবীপ্রেমিক সুলতান হামেং কুবুওয়ানা ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম বিস্তারে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তাই তিনি একটি উৎসবের মাধ্যমে ইসলামের মর্মবাণী ও মহানবী (সা.)-এর জীবনী সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেদিনের সেই ছোট্ট উৎসব আজ ব্যাপক ব্যাপ্তি পেয়েছে। বর্তমানে জাকার্তাসহ ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সাকাতেন বা ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী উৎসব হয়। এই উৎসবে স্থানীয় সংস্কৃতির মিশ্রণে মহানবী (সা.)-এর জীবনী আলোচনা হয় এবং অন্যান্য ইবাদত করা হয়। বিশেষত্ব ১২ রবিউল আওয়াল তারিখে বিভিন্ন মসজিদ ও বাসাবাড়িতে ব্যাপকভাবে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হয় ইসলামের প্রবক্তা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। এ উপলক্ষে সারা রাত মেলার আদলে রাস্তাঘাট ও বাজারে বেচাকেনা চলে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বড় বড় ডেকচিতে নারিকেল, বাদাম, চিংড়ি ও মরিচের সংমিশ্রণে বিশেষ ধরনের ভাত রান্না করা হয়, যা স্থানীয়ভাবে সিগোগরিই নামে পরিচিত। এমনি ধরনের আরেকটি খাবার হলো গুগুনগান যা তৈরি হয় জাউভাত, বাদাম, সবজি, মরিচ ও ডিমের সংমিশ্রণে, মুসলমানরা এই খাবার সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খায়। অনেকে আবার কিছু খাবার ফসলের মাঠে ছিটিয়ে দেয় আরও বেশি ফসলের আশায়।

তোপধ্বনি দিয়ে শুরু (পাকিস্তান)

সরকারিভাবে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃত বিশ্বের অন্যতম মুসলমান অধ্যুষিত দেশ পাকিস্তান। বর্তমানে দেশটিতে ২১ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস, যার ৯৬ শতাংশ মুসলমান। ভৌগোলিকভাবে পাকিস্তানের পূর্বে-ভারত এবং পশ্চিমে ইরান। ফলে পাকিস্তানের শিল্পসাহিত্য, আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও সংস্কৃতিতে ভারত ও ইরান তথা পারস্যের প্রবল প্রভাব লক্ষণীয়। এ ছাড়া সুফিবাদ প্রচার ও প্রসারের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে পাকিস্তানের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ফলে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী তথা ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সমগ্র পাকিস্তানে নানা আনুষ্ঠানিকতা সমগ্র বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়ে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর এক মাস আগে থেকেই পাড়ামহল্লা ও রাস্তাঘাটে ছোট ছোট দোকান গড়ে ওঠে বিশেষ ধরনের ব্যাজ, সবুজ পতাকা, টুপি ও ব্যানারের পসরা নিয়ে। অন্যান্য দোকানেও এসব সুভ্যেনির পাওয়া যায়। মিলাদুন্নবী (সা.) আগমন উপলক্ষে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ৩১ বার এবং অন্যান্য রাজ্যের রাজধানীতে ২১ বার তোপধ্বনি বা কামানের গোলা বিকট শব্দে ফাটিয়ে মহানবী (সা.)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর আগমন ঘোষিত হয়। এ সময় দেশটির সরকারি ও বেসরকারি  ভবনগুলোতে দিনে জাতীয় পতাকা ও রাতে  রং-বেরঙের আলোকসজ্জা সবাইকে মুগ্ধ করে। এ ছাড়া ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর শিক্ষাবিষয়ক ব্যানার টাঙানো হয় রাস্তাঘাটে। শহরাঞ্চলে চলে সম্মেলন, আলোচনা সভা, প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইবাদত-বন্দেগি ও রোজা রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বড় আকারের মিলাদ মাহফিল ও মিলাদ শেষে তবারক হিসেবে বিরিয়ানি বিতরণ পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী প্রথা। কোনো কোনো স্থানে নাতে রসুল (সা.), ইসলামী গান ও কাওয়ালি শোনা যায়। তবে সব ছাড়িয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয় পাকিস্তানের লাহোরে  অবস্থিত মিনার ই পাকিস্তান চত্বরে। রবিউল আওয়াল মাসের ১১ তারিখ রাতে মিনার ই পাকিস্তানে লক্ষাধিক মুসলমান মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, দরুদ ও সালাম পেশ করেন এবং তবারক বিতরণ করেন। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি মুসলমান পরিবারে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশেষ খাবার তৈরি হয় এবং প্রতিবেশী, নিকটাত্মীয় ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

সব পথ মিশে শ্রীনগরে (ভারত)

ভারতে বসবাসরত মুসলমানদের মধ্যে পাকিস্তানি মুসলমানদের অনুকরণে একই রীতিনীতি ও আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশাল দেশ হিসেবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ এলাকার সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যমূলক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েও মুসলমানগণ মহানবী (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত শ্রীনগর এলাকার মুসলমানগণ। ইতিহাস মতে, ইংরেজি ১৬৩৫ সালে জনৈক সৈয়দ আব্দুল্লাহ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি পবিত্র দাড়ি ভারতের বিজাপুরে নিয়ে আসেন। তার পুত্র সৈয়দ হামিদের হাত ঘুরে পরবর্তীতে সেই পবিত্র দাড়ি মোবারক কাশ্মীরের ব্যবসায়ী নুরুদ্দিনের হাতে হস্তান্তরিত হয়। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে এই সংবাদ পৌঁছলে তিনি এই দাড়ি মোবারক হজরত খাজা মঈনুউদ্দিন চিশতির দরগায় সংরক্ষিত রাখেন এবং এই পবিত্র দাড়ি নিজের কাছে রাখার দায়ে ব্যবসায়ী নূরুদ্দীনকে বন্দী করেন। ১৭০০ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব নিজেই নূরুদ্দীনকে মুক্তি দেন এবং তার কাছে মহাপবিত্র দাড়ি ফেরত পাঠান।

তবে ইতিমধ্যে তার মৃত্যু ঘটলে পরিবারের অন্য সদস্যরা যথাযথ মর্যাদায় তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগ থেকে একটি মাজার গড়ে ওঠে। যেখানে এই পবিত্র দাড়ি এখনো সংরক্ষিত আছে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে এখানে একটি মসজিদ গড়ে ওঠে। বর্তমানে এলাকার মূল আকর্ষণ হলো, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর দিন এই পবিত্র দাড়ি সবাইকে দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দুর্লভ সৌভাগ্য অর্জনের জন্য নবীপ্রেমিক লক্ষাধিক মুসলমান এই মসজিদ ও মাজারে জমায়েত হন এবং ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাত ও দিনটি অতিবাহিত করেন। তাদের অনেকেই মিলাদুন্নবী (সা.) পালনের জন্য নির্ধারিত দিনের বেশ আগেই মসজিদে অবস্থান শুরু করেন এবং ক্রমাগত ইবাদত-বন্দেগি করতে থাকেন। অন্যদিকে আজমির শরিফ এবং দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার প্রাঙ্গণে ও পার্শ¦বর্তী মসজিদে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ব্যাপক ইবাদত-বন্দেগি চলতে থাকে।

জশনে জুলুস (বাংলাদেশ)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজন করেন, এবং ছুটি ঘোষনা করেন।

জাতীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন : স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম হাক্বানী আলেম –ওলামাদের সুসংগঠিত করে পবিত্র ইসলাম উনার সঠিক রুপ জনগনের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠ পোষকতায় ঢাকার সীরাত মজলিস নামে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পবিত্র রবিউল আওয়াল শরীফ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে সর্ব প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহন করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধ বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন । সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ‌ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত । এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে । ঈদে-মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষনাও করেন। ( তথ্যসূত্রঃ আবু তাহের মুহাম্মদ মানজুর, ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান,ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা (ঢাকা:ই.ফা.বা. )জানুয়ারী-মার্চ-২০০৯ পৃ-৪১,মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান,মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও ইসলাম সম্প্রসারনে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদান,অগ্রপথিক, জাতীয় শোক দিবস সংখ্যা, ঢাকা: ই.ফা.বা.)আগষ্ট-১৯৯৯,পৃ-২৪ )

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের পর থেকে আজ অবধি বাইতুল মোকারমে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হয়ে আসছে।

পাকিস্তান এবং ভারতের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপযাপিত হয়। এ দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, সেমিনার ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তবে এ ক্ষেত্রে হালের নতুন সংযোজন হলো বিশাল শোভাযাত্রা, যা জশনে জুলুস নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা পীর সাহেবরা তার অনুসারীদের নিয়ে এই শোভাযাত্রা করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে আরেকটি মহৎ উদ্যোগ হলো স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি।

সরকারিভাবে এ সময় রাস্তায় কালেমা খচিত পতাকা লাগানো হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনে রাতে আলোকসজ্জা করা হয়। মসজিদ, মাজার এবং বাড়ির অন্দর মহলেও চলে মিলাদ ও দরুদ পাঠের মহাযজ্ঞ। বিগত কয়েক বছর ধরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও ব্যাপক আকারে জশনে জুলুস বা শোভাযাত্রা পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়াও ১২ আউলিয়ার পুণ্যভূমিখ্যাত চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাজারকে কেন্দ্র করে বড় আকারের মিলাদ এবং তবারক বিতরণ চট্টগ্রামের পুরনো ঐতিহ্য।

তথ্য সুত্র : ‌দৈ‌নিক প‌ত্রিকা , ইসলা‌মিক বই ও ইন্টার‌নেট ।

- জা‌হিদ  আহ‌মেদ  ও তার স্মৃ‌তি  প‌রিষদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ইসলামিক /মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি

 ইসলাম‌িক  বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি  --------------------------------------------------------------- পা‌কিস্তান , সৌ‌দি আর‌ব ...