রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)

 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)

 

যারা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অতি দূরের বিষয় ভাবছেন- তারা নীচের উদাহরণগুলো খেয়াল করুন- আপনি যখন কম্পিউটারের সাথে দাবা খেলেন- সেটা আসলে খেলেন এক ধরণের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে!  গুগলে আপনি যখন একটা কিছু খোজেন, তখন আপনাকে কি দেখানো হবে- সেটাও ঠিক করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সূক্ষ্ম এক নেটওয়ার্ক। আমরা যখন ফেসবুক ব্যবহার করি- তখন স্ক্রিনের কোণার দিকগুলোতে যেসব বিজ্ঞাপন/ 'পিপল ইউ মে নো' টাইপের জিনিসপত্র ভেসে ওঠে- সেগুলোর পেছনে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফেসবুকে আপনার বিভিন্ন একটিভিটি/ তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার পছন্দ/অপছন্দ বের করার চেষ্টা করে এবং সেই অনুযায়ী ফলাফল দেখায়। চিন্তা করুন একবার- ফেসবুকে আপনাকে আরেকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য বেচারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক বিশাল নেটওয়ার্ক- দিনরাত কি খাটাখাটনিটাই না করছে!


বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে (যেমন-আমাজন) মানুষকে যেসব বিজ্ঞাপন দেখানো হয়- সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের দেশে এখনো সেটা ফেসবুকের মত জনপ্রিয় হয় নি দেখে উদাহরণটা ফেসবুক দিয়েই দেয়ার চেষ্টা করলাম।

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন হয়ে উঠেছে একটি একাডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্র যেখানে পড়ানো হয় কিভাবে কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার তৈরি করতে হয় যা বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করবে।

মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। [১] কম্পিউটারকে মিমিকস কগনেটিক এককে আনা হয় যাতে করে কম্পিউটার মানুষের মত ভাবতে পারে । যেমন শিক্ষা গ্রহণ এবং সমস্যার সমাধান । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হল মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি। কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, এআই গবেষণার ক্ষেত্রটি "বুদ্ধিমান এজেন্ট" -এর অধ্যয়ন হিসাবে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে: যে কোনও যন্ত্র যা তার পরিবেশকে অনুধাবন করতে পারে এবং এমন কিছু পদক্ষেপ নেয় যা কিছু লক্ষ্য অর্জনে তার সাফল্যকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নেয়। "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" শব্দটি প্রয়োগ করা হয় তখন যখন একটি মেশিন "জ্ঞানীয়" ফাংশনগুলিকে কার্যকর করে যা অন্যান্য মানুষের মনের সাথে মিল থাকে, যেমন "শিক্ষা গ্রহণ" এবং "সমস্যা সমাধানের" সাথে সংযুক্ত। আন্দ্রেয়ার কাপলান এবং মাইকেল হেনলিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞায় বলেন "এটি একটি সিস্টেমের বহির্ভূত তথ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারার ক্ষমতা, এমন তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং ঐ শিক্ষা ব্যবহার করে নমনীয় অভিযোজনের মাধ্যমে বিশেষ লক্ষ্য করা।"[২]

মেশিনগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে সক্ষম হয়ে উঠে তখন মানসিক সুবিধার জন্য বুদ্ধিমত্তাকে সংজ্ঞা থেকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপটিক্যাল অক্ষর স্বীকৃতিটি "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার" উদাহরণ হিসাবে আর অনুভূত হয় না, তখন এটি একটি রুটিন প্রযুক্তি হয়ে ওঠে। বর্তমানে যে সক্ষমতাগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে সেগুলি মানুষের বক্তব্যকে সফলভাবে বুঝতে পারে, কৌশলগত গেম সিস্টেম (যেমন দাবা এবং যাওয়া) উচ্চতর স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চালাতে পারে, সামরিক সিমুলেশন এবং জটিল উপাত্ত ব্যাখ্যা করতে পারে।

এআই গবেষণাকে কতগুলো উপ শাখায় বিভক্ত করা যেতে পারে যা নির্দিষ্ট সমস্যা, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ সরঞ্জামের ব্যবহার বা নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলির সন্তুষ্টির দিকে ফোকাস করে।

 

ইতিহাস

চিন্তা করতে সক্ষম কৃত্রিম মানুষ মূলত গল্প বলার যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে কার্যকর যুক্তি প্রদর্শনের জন্য একটি যন্ত্র তৈরির চেষ্টা করার ধারণাটি সম্ভবত রামন লোল (১৩০০ খ্রিস্টাব্দে) এর সাথে শুরু হয়। তার ক্যালকুলাস রেটিওসিনেটরের সাথে, গটফ্রিড লিবিনিজ গণিত মেশিনের ধারণাকে সম্প্রসারিত করেছিলেন (উইলহেলম স্কিকার্ড ১৬২৩ এর কাছাকাছি সময় প্রথম একটি প্রকৌশলগত কাজ করেছিলেন), সংখ্যার পরিবর্তে ধারণার উপর অপারেশন পরিচালনার উদ্দেশ্যে। উনিশ শতক থেকে কৃত্রিম মানুষ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছিল, যেমন মেরি শ্যালীর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বা কারেল কেপেক এর আর.ইউ.আর. (রাসোসের ইউনিভার্সাল রোবটস) এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

যান্ত্রিক বা "আনুষ্ঠানিক" যুক্তি অধ্যয়ন প্রাচীনকালে দার্শনিক ও গণিতবিদদের সাথে শুরু হয়েছিল। গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান অধ্যয়ন অ্যালান টুরিং এর গণিতের তত্ত্বের সূত্রপাত করেছিল, যা একটি মেশিন, "0" এবং "১" প্রতীক চিহ্ন দ্বারা গাণিতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারে। এই অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে যে ডিজিটাল কম্পিউটার আনুষ্ঠানিক যুক্তির কোন প্রক্রিয়া অনুকরণ করতে পারে তা চার্চ-টুরিং থিসিস হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল। স্নায়ুবিদ্যা, তথ্য তত্ত্ব এবং সাইবারনেটিক্সের আবিষ্কার গবেষকদের মধ্যে বৈদ্যুতিক মস্তিষ্ক নির্মাণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল । প্রথম কাজ যা বর্তমানে এআই হিসাবে স্বীকৃত হয় যা ম্যাককুল্লাচ এবং পিটসের ১৯৪৩ টুরিংয়ের জন্য সম্পূর্ণ "কৃত্রিম নিউরন" ছিল প্রথাগত নকশা।

এআই গবেষণা ক্ষেত্র ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজের একটি কর্মশালায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অ্যালেন নিউয়েল (সিএমইউ), হারবার্ট সিমন (সিএমইউ), জন ম্যাকার্থি (এমআইটি), মার্ভিন মিনস্কি (এমআইটি) এবং আর্থার স্যামুয়েল (আইবিএম) এআই গবেষণার প্রতিষ্ঠাতা এবং নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তারা এবং তাদের ছাত্ররা যে প্রোগ্রাম তৈরি করেছিল সংবাদপত্র তাকে "বিস্ময়কর" হিসাবে বর্ণনা করেছিল: কম্পিউটার চেকারদের মধ্যে বিজয়ী হয়, বীজগণিতের মধ্যে শব্দের সমস্যার সমাধান করে, যুক্তিগত তত্ত্বগুলি প্রমাণ করে এবং ইংরেজি কথা বলতে সক্ষম হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা গবেষণার জন্য ব্যাপকভাবে তহবিল প্রদান এবং বিশ্বব্যাপী ল্যাবরেটরিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এআই এর প্রতিষ্ঠাতারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী: হারবার্ট সাইমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, "মেশিন বিশ বছরের মধ্যে একজন মানুষ যা করতে পারে তা করতে সক্ষম হবে ।" মার্ভিন মিন্স্কি একমত হয়েছিলেন, "একটি প্রজন্মের মধ্যে ... কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে"

তারা অবশিষ্ট কিছু কাজের অসুবিধা বোঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। অগ্রগতি ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে পড়েছিল এবং ১৯৭৪ সালে স্যার জেমস লাইটহিল এর সমালোচনার জবাবে ব্রিটিশ সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের কাছ থেকে চলমান চাপের কারণে এআইএর গবেষণামূলক গবেষণা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক বছর পরে একে "এআই শীতকালীন" বলা হবে যখন এআই প্রকল্পের অর্থায়ন কঠিন ছিল।

১৯৮০ এর দশকের শুরুতে এআই গবেষণা বিশেষজ্ঞ সিস্টেমের বাণিজ্যিক সাফল্য দ্বারা পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, এআই প্রোগ্রামের একটি ফর্ম যা মানব বিশেষজ্ঞের জ্ঞান এবং বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতাগুলিকে অনুকরণ করে। ১৯৮৫ সাল নাগাদ এআইয়ের বাজার এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পৌঁছেছিল। একই সময়ে, জাপানের পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার প্রকল্প ইউএস এবং ব্রিটিশ সরকারকে একাডেমিক গবেষণার জন্য অর্থায়নে ফিরিয়ে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। যাইহোক, ১৯৮৭ সালে লিস্প মেশিন বাজারের পতনের শুরুতে, এআই আবারও দুর্নীতিতে পড়ে এবং দ্বিতীয় দীর্ঘস্থায়ী মন্দা অবস্থায় পতিত হয়।

১৯৯০ এবং একবিংশ শতকের প্রথম দিকে সরবরাহ, ডেটা মাইনিং, চিকিৎসা নির্ণয়ের এবং অন্যান্য এলাকার জন্য এআই ব্যবহার করা শুরু করেছিল। সাফল্য ছিল গণনীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি(মুরের আইন দেখুন), নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান, এআই এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মধ্যে নতুন সম্পর্ক এবং গবেষকগণের গাণিতিক পদ্ধতি এবং বৈজ্ঞানিক মানকে একটি প্রতিশ্রুতির উপর অধিকতর গুরুত্বের কারণে। ডিপ ব্লু ১১ই জুন, ১৯৯৭ তারিখে একজন দাবা চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করার জন্য প্রথম কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত দাবা খেলোয়াড় হয়ে ওঠে।

উন্নত পরিসংখ্যান কৌশল (শিথিলভাবে গভীর শিক্ষার নামে পরিচিত), বড় পরিমাণে তথ্যের মধ্যে প্রবেশ এবং দ্রুত কম্পিউটারে মেশিন শিক্ষার এবং উপলব্ধির ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করে। ২০১০ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত, সারা পৃথিবীতে মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করা হতো। একটি বিপদ! আইবিএম এর প্রশ্নের উত্তর সিস্টেমের কুইজ শো প্রদর্শনী ম্যাচে ওয়াটসন একটি উল্লেখযোগ্য মার্জিন দ্বারা দুজন সর্বশ্রেষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন ব্র্যাড রাদার এবং কে জেনিংসকে পরাজিত করেছিল। কিনিট, যা Xbox 360 এবং Xbox One এর জন্য 3D শরীর-গতি ইন্টারফেস প্রদান করে যা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে যা দীর্ঘ এআই গবেষণা থেকে উদ্ভূত হয় যেমন স্মার্টফোনে বুদ্ধিমান ব্যক্তিগত সহায়ক হিসাবে কাজ করে। মার্চ ২০১৬ এ, আলফাগো গো চ্যাম্পিয়ন লি সেডোলের সাথে একটি ম্যাচে ৫টি গেমের মধ্যে ৪টিতেই জিতে নেয়, হ্যান্ডিক্যাপস ছাড়াই একজন পেশাদার গো খেলোয়াড়কে পরাজিত করার জন্য প্রথম কম্পিউটার গো-সিস্টেমিং পদ্ধতিতে পরিণত হয়। ভবিষ্যতের গো সম্মেলনের ২০১৭ আলফাগো কে জেইয়ের সাথে তিনটি খেলায় জিতেছে যিনি ক্রমাগতভাবে দুবছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর রেঙ্কিং অর্জন করেছিল।

ব্লুমবার্গের জ্যাক ক্লার্কের মতে ২০১৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য একটি মাইলফলক বছর ছিল, গুগলের মধ্যে এআই ব্যবহার করার জন্য সফটওয়্যার প্রকল্পগুলোর সংখ্যা ২০১২ সালে ২৭০০ এরও বেশি প্রকল্পে "স্পোরাইডিক ব্যবহার" বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্লার্ক তথ্যপ্রযুক্তি তথ্যও তুলে ধরেছেন যে চিত্র প্রক্রিয়াকরণ কর্মের ত্রুটির হার ২০১১ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। তিনি ক্লাউড কম্পিউটিং অবকাঠামোর উত্থানের ফলে এবং গবেষণা সরঞ্জাম ও ডাটাসেটগুলির বৃদ্ধির কারণে সাশ্রয়ী মূল্যের স্নায়ুবিক নেটওয়ার্কগুলির বৃদ্ধি নিয়ে এটিকে গুরুত্ব দেন। অন্যান্য উল্লিখিত উদাহরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মাইক্রোসফটের স্কাইপ সিস্টেমের ডেভেলপমেন্ট যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করতে পারে এবং ফেইসবুক সিস্টেম অন্ধ মানুষদের কাছে চিত্রের বর্ণনা করতে পারে।

 

লক্ষ্য

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামগ্রিক গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে প্রযুক্তি তৈরি করা যার মাধ্যমে কম্পিউটার এবং মেশিনগুলি বুদ্ধিমান পদ্ধতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে। বুদ্ধিমত্তার উৎপাদন (বা তৈরি) সাধারণ সমস্যাগুলোকে কয়েকটি উপ সমস্যায় বিভক্ত করা হয়েছে। যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি বা ক্ষমতাগুলি রয়েছে তা গবেষকরা একটি বুদ্ধিমান সিস্টেম প্রদর্শন করবে বলে আশা করেন। নিচের বর্ণনাগুলি সর্বাধিক মনোযোগ পেয়েছে।

এরিখ স্যাণ্ডওয়েল পরিকল্পনা ও শেখার উপর জোর দেন যেটি প্রদত্ত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক এবং প্রযোজ্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমানে শুধুমাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি অংশ নয় বরং এটি বিশাল একটি শাখা যেখানে আরও অনেক ফ্যাক্টর প্রয়োজন হয় এবং অবদান রাখে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করার জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে বুদ্ধি কিসের সমন্বয়ে  তৈরি। বুদ্ধি আমাদের মস্তিষ্কের একটি অপরিহার্য অংশ যা যুক্তি, শেখা, সমস্যা সমাধানের উপলব্ধি, ভাষা বোঝা ইত্যাদির সমন্বয়। 

 

কোনও মেশিন বা সফ্টওয়্যার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো অর্জনের জন্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রয়োজন:

  • গণিত
  • জীববিদ্যা
  • মনোবিজ্ঞান
  • সমাজবিজ্ঞান
  • কম্পিউটার বিজ্ঞান
  • নিউরন স্টাডি
  • পরিসংখ্যান

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে শেখা, যুক্তি এবং উপলব্ধি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদর্শ বৈশিষ্ট্য হলো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ সম্পাদন করা। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মেশিনগুলির উদাহরণের মধ্যে এমন কম্পিউটার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা দাবা এবং স্ব-ড্রাইভিং গাড়ি চালায়। দাবাতে, শেষ ফলাফলটি হলো খেলায় বিজয়। স্ব-ড্রাইভিং গাড়িগুলির জন্য, কম্পিউটার সিস্টেমটি অবশ্যই সমস্ত বাহ্যিক ডেটার হিসাব করে যাতে সংঘর্ষ এড়াতে পারে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence): কম্পিউটারের নিজস্ব কোনো বুদ্ধি নেই। এটি শুধু নিজের কাছে সংরক্ষিত তথ্য এবং প্রোগ্রামের আলোকে কাজ করতে পারে। কোন সমস্যার আলোকে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারে না।

কম্পিউটারও  যাতে কোন সমস্যা দেখা দিলে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার জন্য এর ভিতর অনেক সমস্যার ঢুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে। এটিকেই বলে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞানের ক্ষেত্রসমূহ (Domains of AI) : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারকে তিনটি প্রধান এলাকায় গ্রুপভুক্ত করা যায়। এগুলো হলো:


ক) বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞান (Cognitive science)
১. এক্সপার্ট সিস্টেম (Expert Systems)
২. লানিং সিস্টেম (Learning Systems)
৩. ফাজি লজিক (Fuzzy Logic)
৪. নিউরাল নেটওয়ার্ক (Neural Network)
৫. জেনেটিক অ্যালগোরিদম (Genetic Algorithm)
৬. ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট (Intelligent Agent)


খ) রোবোটিক্স (Robotics)
১. ভিজ্যুয়াল পারসেপশন (Visual Perception)
২. ট্যাকটিলিটি (Tactility)
৩. ডেক্সটারিট (Dexterity)
৪. লোকোমোশন (Locomotion)
৫. নেভিগেশন (Navigation)


গ) ন্যাচারাল ইন্টারফেস (Natural Interfaces)
১. ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ (Natural Languages)
২. স্পিচ রিকগনিশন (Speech Recognition)
৩. মাল্টিসেন্সরি ইন্টরফেস (Multisensory Interfaces)
৪. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality)

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এআই) সবচেয়ে খারাপ পরিণতি কি হতে পারে? অনেক সাই-ফাই চলচ্চিত্রে মানুষের সাথে রোবটের যুদ্ধ দেখানো হয়েছে। মানব সভ্যতার ধ্বংসের ইঙ্গিতও দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

কোনো সন্দেহ নেই, সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রভাবশালী। আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে এআইয়ের বিস্তার। হয়তো মানুষকে হটিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পৃথিবীর দখল নিতে পারে এমন কথা স্টিফেন হকিং, এলোন মাস্ক ও বিল গেটসরা বলেছেন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভয়ংকর দিক :

মানুষের আচরন বোঝা
কমবেশি সবাই আমরা ফেসবুক ব্যবহার করি। আপনি জানেন কি আপনার একাউন্টের নামে একটি কৃত্রিম প্রোফাইল ফেসবুকের ডাটাবেজে রয়েছে? ফেসবুকে প্রবেশ করলে আপনার প্রতিটি ক্লিকের সিদ্ধান্তগুলো দিয়ে আপনার ভার্চুয়াল রূপটিকে আরও উন্নত করা হয়। এক পর্যায়ে সে নিজেই আপনার হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে আপনার সৃজনশীলতা কমে ও সিদ্ধান্তহীনতা বাড়ে

মানুষের মতো চেহারা ও উপস্থিতি
জাপানের জনপ্রিয় রোবট বিশেষজ্ঞ হিরোশি ইশিগুরো এবং চায়নার রোবোটিক্সের প্রফেসর সং ইয়াং মিলে কিছুদিন আগে একটি রোবট উদ্ভাবন করেন। এটি দেখতে আলস্কার সাবেক গভর্নর সারাহ পলিনের মতো। একে পলিনের জমজ বোন বললেও ভুল হবেনা। এছাড়াও নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসিপশনে এক রোবট মানবী কাজ করেন। কাছে গিয়ে কথা না বললে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে এটি একটি রোবট। এছাড়াও রোবট সোফিয়ার কথা মনে পড়ে? সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলে সে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পেয়েছিল। এ ধরনের রোবটের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে হয়তো আসল মানুষ চিনতেই মুশকিল হয়ে যাবে

ভালোবাসার জায়গা দখল করছে রোবট
২০১৩ সালে জোয়াকুইন ফিনিক্স অভিনীত ‘হার’ চলচ্চিত্রে দেখা যায় নিঃসঙ্গ এক মানুষ নারীকন্ঠী এক প্রোগ্রামের প্রেমে পড়ে। এই আলোচিত বিষয়টি বাস্তবজীবনেও ঘটতে পারে। ইয়ান পিয়ারসন নামের এক বিশেষজ্ঞ ২০১৫ সালে জানিয়েছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে রোবটের সাথে সঙ্গম অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে

আবেগ ও অনুভুতি
আমরা এতোদিন জানতাম মানুষের সাথে রোবটের অন্যতম প্রধান পার্থক্য হলো রোবটের কোন আবেগ-অনুভুতি নেই। কিন্ত এখন রোবটও আবেগ অনুভুতি প্রকাশ করতে সক্ষম। সম্প্রতি এশিয়ায় মাইক্রোসফটের একটি দল এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গড়ে তুলেছে যা আবেগ অনুভুত করতে সক্ষম। শাওইয়েস নামের একটি প্রোগ্রাম এমনভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয় যেন একটি ১৭ বছরের মেয়ে কথা বলছে। মিথ্যা বলা থেকে শুরু করে এটি বিদ্রুপ, রাগ, সংকোচ প্রকাশ করতে পারে

ব্যাপক ধ্বংসের হাতিয়ার
টার্মিনেটরের কথা মনে আছে? এ চলচ্চিত্রে যন্ত্র ও রোবটকে কেন্দ্র করে চীন ও রাশিয়ার উপর কর্তৃত্ব করতে যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি ১৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বাজেট করে। ২০১৩ সালে বোস্টন অ্যাটলাস নামের এক চলচ্চিত্রে দেখানো হয় মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, এমন কাজ করানোর জন্যে কিছু রোবট বানানো হলেও শেষ পর্যন্ত তার খেসারত দিতে হয় নির্মাতাকে। অনেক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের মতে, ভবিষ্যতে এমন শক্তিশালী রোবট আসতে পারে যারা মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে ফেলতে পারে

নতুন সভ্যতার শুরু, নাকি মানব সভ্যতার শেষ?


বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত একটি বিষয় হোল- চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। সেটা যে কি জিনিস- তা ব্যাখ্যা করে বলতে গেলে আমাকে আরেকটা পোস্ট লিখতে হবে! সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যায় যে- রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি- আমাদের সামনে পরিবর্তিত এক পৃথিবীর সম্ভাবনা তৈরি করছে। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে হয়ে যাওয়া 'ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের' ২০১৬ সালের মিটিং এর অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিলো এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ভবিষ্যত পৃথিবীর ওপর তার সম্ভাব্য প্রভাব। বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী, রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবীদের মিলনস্থল সে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম থেকে বলা হয়েছে- দ্রুত অগ্রসরমান প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় খুব তাড়াতাড়ি দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

কেমন হবে সে পরিবর্তন? এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তাই রোবটিক্সের উদাহরণটাই দেয়া যেতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিল্পেই আসলে রোবট ব্যবহৃত হতে দেখা যায়, তবে সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লো-স্কিলড কাজগুলোতে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম থেকে বলা হয়েছে- তুলনামূলকভাবে উচ্চ দক্ষতার বিভিন্ন কাজেও (নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয়, শিক্ষা দান ইত্যাদি) ভবিষ্যতে রোবট ব্যবহার করা শুরু হবে। আরেকটু সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য উল্লেখ করা যায় যে- ধনী দেশগুলোয় আগামী পাচ বছরের মধ্যে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের কাজের ক্ষেত্র দখল করে নেবে যন্ত্র। অন্যদিকে প্রায় ২০ লাখ নতুন চাকরিও অবশ্য তৈরি হবে প্রযুক্তি, মিডিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সব মিলে সোজা বাংলায় বলা যায়- ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ, রোবটের কাছে তাদের চাকরি হারাবে! এই জটিল সম্ভাব্য সমস্যার সমাধান যদি এখনই কিছু চিন্তা না করা হয়, নেতৃস্থানীয় মানুষেরা নীতি প্রণয়নে যদি এর সাথে খাপ খাইয়ে নেবার পরিকল্পনা এখনই না করেন- তবে নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। চাকরি হারানোয় ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আরো বেড়ে যাবে অসাম্য, সমাজে তৈরি হবে অনাস্থা, অনিশ্চয়তা আর তীব্র অস্থিরতা।

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মূল ঝুকি কিন্তু এগুলো নয়, বরং আরো ভয়াবহ! মানবজাতির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে। বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করেছেন, বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর ব্যাখ্যা দিয়েই সে আলোচনা শুরু করি!

হকিং এর মতামতঃ
মানুষের বিবর্তন হয় খুব ধীরে। আমাদের পূর্বপুরুষ যারা বিভিন্ন গুহা-টুহায় বসবাস করতো, খাবার চাহিদা মেটাতো শিকার ধরে- সেই তাদের তুলনায় আমরা বুদ্ধিতে, জ্ঞানে, চিন্তায়, ভাবনায়- নিঃসন্দেহে অনেক উন্নত। কিন্তু সে পরিবর্তনটুকু হয়েছে এক বিশাল সময় ধরে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই একটা ক্ষেত্রে মানুষ থেকে অনেক এগিয়ে থাকবে তার গতি, স্মৃতি ইত্যাদি নানা কারণে (তুলনা হিসেবে বলা যায়- এখন যে মাইক্রোপ্রসেসর আমাদের কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়, তার প্রসেসিং স্পিড মানব-মস্তিষ্ক থেকে প্রায় এক কোটি গুণ বেশি!)। তাই যে মুহূর্তে এমন 'সবল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' তৈরি করা হয়ে যাবে- যে নাকি মানুষের সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে আশপাশ থেকে/ অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন জিনিস মানুষের মত করেই শিখে নিতে পারে (বইয়ের ভাষায় এটাকে 'আন-সুপারভাইজড লার্নিং' বলে)- ঠিক সে মুহূর্তটাই হবে ঝুকির শুরু! সে যত বেশি নিজেকে উন্নত করবে, তত আরো তাড়াতাড়ি- আরো বেশি মাত্রায় বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে থাকবে। এটা সহজে বোঝার জন্য এমন এক প্রাণীর কথা আমরা কল্পনা করতে পারি- যে কি না যত বেশি খাবে, তত আরো বেশি খাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। অর্থাৎ সে প্রথমে এক প্লেট ভাত খেলে, পরেরবার দুই প্লেট খেতে পারবে। ঐ দুই প্লেট খাওয়া শেষ করবার পর তার যোগ্যতা হয়ে যাবে চার প্লেট খাওয়ার, চার প্লেট খেয়ে শেষ করে হয়তো দেখা গেলো সে হাফ ডজন মুরগী একাই সাবাড় করে ফেললো.... ব্যাপারটা অনেকটা সে রকমই- শুধু ঐ প্রাণীর বদলে এখানে যন্ত্রের কথা চিন্তা করুন, আর খাবার হিসেবে চিন্তা করুন সেই যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা অর্জনের যোগ্যতা।

ক্রমাগত নিজের বুদ্ধিমত্তাকে এভাবে উন্নত করবার একটা পর্যায়ে এসে উন্নতির হার হঠাত এতোই বেড়ে যাবে যে- খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে যন্ত্র সুপার-ইন্টেলিজেন্স পর্যায়ে পৌছে যাবে। কারিগরী ভাষায় এ ঘটনাটাকে বলে- বুদ্ধিমত্তা-বিস্ফোরণ (Intelligence Explosion).

আর মানুষের থেকে অনেক, অ-নে-ক বেশি বুদ্ধিমান এক যন্ত্রসভ্যতা মানুষের সাথে কেমন আচরণ করবে- সেটা আমরা কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারি- নিম্নবুদ্ধির প্রাণিদের সাথে আমাদের নিজেদের আচরণ কেমন- সেটা দেখে! কয়েকটা উদাহরণ- পিপড়ার সাথে মানুষের আচরণ, মশার সাথে মানুষের আচরণ, তেলাপোকার সাথে মানুষের আচরণ ইত্যাদি ইত্যাদি...

পেরেক সমস্যাঃ
সব সময় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট যন্ত্রের উদ্দেশ্যটা খারাপ থাকবে- এমনও নয়। উদাহরণ হিসেবে পেরেক সমস্যার কথা বলা যায়। ধরা যাক- মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কোন এক যন্ত্রকে পেরেক বানানোর একটা এসাইনমেন্ট দিলো। কাজটা খুব সহজ- ঐ যন্ত্রকে নির্দেশ দেয়া হোল- তুমি যত বেশি পারো, পেরেক বানানো শুরু কর! মানুষের অনুমতি পাওয়া মাত্র যথারীতি সে যন্ত্র কাজে নেমে গেলো। এক্ষেত্রে প্রথমেই সে যেটা করতে পারে- সেটা হচ্ছে- এমন একটা ব্যবস্থা করা যেনো তার নিজের কাজ কখনো বন্ধ হয়ে না যায়। কারণ তার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে পেরেক উতপাদনও বন্ধ।

সুতরাং সর্বোচ্চ সংখ্যক পেরেক তৈরি করবার জন্য তার নিজের সচল থাকাটা সবার আগে জরুরি। সে লক্ষ্য অর্জন করবার জন্য যন্ত্রটা এমন ব্যবস্থা করবে- যেনো মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর তাকে আর কখনো নির্ভর করতে না হয়। সে নিজেই যেনো নিজেকে সব সময়, সব অবস্থায় সচল রাখতে পারে।
দ্বিতীয়ত যন্ত্র যেটা করবে- সেটা হচ্ছে পেরেকের জন্য কাচামাল সংগ্রহ। এক্ষেত্রে দেখা গেলো- প্রচলিত সব কাচামাল শেষ করবার পর সে আশেপাশের সব কিছুকেই 'প্রসেস' করে করে পেরেকের কাচামাল সংগ্রহ করে চলেছে! এভাবে আস্তে আস্তে একসময় পালা আসবে মানুষের। মানুষের শরীর আর তার অণু-পরমাণুগুলোকে প্রসেস করে পেরেকের জন্য কাচামাল সংগ্রহ করবে সে কর্মনিষ্ঠ যন্ত্র। ফলাফল- মানব সভ্যতামুক্ত পেরেকময় এক ভয়ংকর পৃথিবী।

ওপরের পেরেক সমস্যার অংশটুকু পড়ে আপনাদের হয়তো মনে সামান্য হলেও ধারণা জন্মাতে পারে যে- পোস্টদাতা কি আসলে আমাদের সাথে ফাজলামি করছে নাকি? সত্যি কথা বলতে আমার নিজের কাছেও পুরো ধারণাটা খুব হাস্যকর মনে হয়েছে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা কিন্তু এসব কিছুকেই খুব গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছেন, নিচ্ছেন। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনারা গুগলে Paperclip maximizer লিখে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন। আমি শুধু পেপারক্লিপ এর বদলে পেরেক দিয়ে জিনিসটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি- এই যা!

----------------------------------------------------------------------------------

(#) Z_¨m~Î : B›Uvi‡bU

- Rvwn` Avn‡g` I Zvi ¯§„wZ cwil`|

 

ইসলামিক /মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি

 ইসলাম‌িক  বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি  --------------------------------------------------------------- পা‌কিস্তান , সৌ‌দি আর‌ব ...